এম বেলাল হোসাইন: র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) এর যৌথ অভিযানে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের ২৯ সদস্যকে আটক করেছে। আটককৃত ২৯জনের মধ্যে ২১ জনকে ২ বছর করে সশ্রম কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলাম এ সাজা প্রদান করেন। বাকী ৮ জন অভিভাবক ওই ঘটনার দোষী না হওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সাজাপ্রাপ্তরা হলেন, কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার পরানখালী এলাকার মৃত. আহসান আলীর পুত্র আঃ হালিম, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার জাপাঘাট এলাকার আঃ আজিজ এর পুত্র ব্যাংক কর্মকর্তা আফতাবুজ্জামান, একই এলাকারা আব্দুল আলিমের পুত্র আমিরুল ইসলাম, আশাশুনি উপজেলার চেউটিয়া এলাকার আঃ ওহাব এর পুত্র কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ও দিদারুল ইসলাম, আশাশুনি কাকবাসিয়া এলাকার রইচউদ্দিনের পুত্র তরিকুল ইসলাম, কুন্দরীয়া এলাকার দুলাল ঘোষের পুত্র সুমেন্দ্র ঘোষ, শ্যামনগর উপজেলার গোবিন্দ গ্রামের আবুল কাশেমের পুত্র হাফিজুর রহমান, একই এলাকার নুরুজ্জামানের পুত্র আব্দুল হালিম, আব্দুল হালিমের স্ত্রী সানজিদা বকুল, আব্দুল জলিল গাজির পুত্র হুমায়ুন কবির, আশাশুনির লাউতারা এলাকার পরিমল কৃষ্ণসরকারের পুত্র সন্নাসী কুমার সরকার, কাকবাসুয়া এলাকার মফিজ উদ্দিনের পুত্র রিয়াছদ আলী, আশাশুনির প্রতাপনগর এলাকার মৃত ফজলুল হকের পুত্র সাইফুল্লাহ, সদরের হাছিমপুর এলাকার গোপাল চন্দ্র ঘোষের পুত্র বিশ^জিৎ ঘোষ, আশাশুনির মহিষকুড় এলাকার গোলাম রব্বানীর স্ত্রী নাজমুন নাহার, কল্যাণপুর এলাকার মিন্টু গাজীর স্ত্রী রাবেয়া, চেউটিয়া গ্রামের আইয়ুব হোসেনের স্ত্রী সেলিনা খাতুন, তুয়ারডাঙ্গা এলাকার আসলাম হোসেনের স্ত্রী তানিয়া সুলতানা, সদরের রসূলপুর এলাকার সাইফুল ইসলামের স্ত্রী মুস্তারিয়া ও আশাশুনি উপজেলার গোকুলনগর এলাকার সাইফুল ইসলামের স্ত্রী সুমাইয়া খাতুন। শুক্রবার (২৫ মে) সকালে কলারোয়া থানার পাশর্^বর্তী একটি ভবনে ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্রের উত্তর ঠিক করার কাজে নিয়োজিত অবস্থায় পরীক্ষার্থী ও প্রশ্ন ফাঁস চক্রের এসব সদস্যকে আটক করা হয়। শুক্রবার দুপুর ২টায় র্যাব-৬ এর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সিও লেঃ কর্ণেল নুর উস সালেহিন জানান, বৃহস্পতিবার রাতে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহনেচ্ছুরা জড়ো হয় কলারোয়া উপজেলা সদরের সোনালী সুপার মার্কেট ভবনের কীডস ক্লাব সেন্টারে। তারা সেখানে রাত্রিযাপন করে। তিনি আরও জানান, রাতভর এবং সকালে মোবাইল ফোনে তাদের কাছে আসা প্রশ্নপত্র ব্লাকবোর্ডে লিখে সাথে সাথে তার উত্তরও নির্দেশ করা হতে থাকে। অংশগ্রহনেচ্ছুরা তা শিখে নিতে থাকেন। এমন খবর পেয়ে র্যাব সদস্যরা ভবনটি ঘিরে ফেলে। সেখান থেকে প্রথমে ২২ জন পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আরও ৭ জনসহ ২৯ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে ওই চক্রের মূল হোতা জনতা ব্যাংক সেনেরগাতী, সাতক্ষীরার শাখার ম্যানেজার কলারোয়ার আবতাবুজ্জামানও রয়েছেন। আবতাবুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে এধরনের চক্রের সাথে জড়িত। অবৈধভাবে উপার্জন করা টাকা দিয়ে ঢাকায় ফ্লাট, কলারোয়ায় কোটি টাকার বাড়িসহ কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। জানা গেছে, তিনি বিশ^বিদ্যালয়ের পড়াকালিন সময়ে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের সাথে যুক্ত ছিলেন। ওই সময় থেকেই তিনি এধরনের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। র্যাব জানায়, তারা জানতে পেরেছেন যে ঢাকায় বসে একটি প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্র ১২ লাখ টাকার চুক্তিতে তাদের কাছে মোবাইল ফোনে প্রশ্ন ও তার উত্তর বলে দেবে। এসব প্রশ্ন ও উত্তর ব্লাকবোর্ডে লিখে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এজন্য সিন্ডিকেটের হাতে অগ্রিম পাঁচ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। বাকি টাকা পরীক্ষা শেষে দেওয়ার কথা রয়েছে। বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, কলারোয়া থেকে ফাঁসচক্রের হোতাসহ পরীক্ষার্থীদের আটক করার সময় ব্লাকবোর্ডে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করে দেওয়া হচ্ছিল। পরবর্তীতে পরীক্ষা শেষে মূল প্রশ্ন পত্রের সাথে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের মিল পাওয়া গেছে।