আন্তর্জাতিক

শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত নিহত ১২ বাংলাদেশিকে সম্মান জানাল জাতিসংঘ

By Daily Satkhira

May 25, 2019

দেশের খবর: শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্তব্যরত অবস্থায় ২০১৮ সালে বাংলাদেশের ১২ জনসহ বিশ্বের ২৭টি দেশের ১১৯ জন আত্মোৎসর্গকারী শান্তিরক্ষীকে সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ প্রদান করেছে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘ সদর দফতরে ‘আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ বাংলাদেশসহ ২৭টি দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিদের হাতে এই মেডেল তুলে দেন।

শনিবার সংস্থার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। খবর বাসসের

‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ প্রদান অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ বলেন, ‘আমরা ১১৯ জন অসম-সাহসী পুরুষ ও নারীকে সম্মান জানাচ্ছি যারা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে নিরাপদ রাখার যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে জাতিসংঘ কাজ করে যাচ্ছে তা উজ্জ্বীবিত রাখার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এসকল বীর শান্তিরক্ষীগণ অমলিন স্বাক্ষর রেখে গেছেন। মহাসচিব দ্যাগ হ্যামারশোল্ড এর সাথে আত্মদানকারী এ সকল শান্তিরক্ষীগণের নামাঙ্কিত মরণোত্তর এই পদক প্রদানের মাধ্যমে আমরা তাদেরকে সারা জীবনের জন্য আমাদের হৃদয়ে ও স্মৃতিতে গভীর মমতায় প্রোথিত করে রাখলাম।

তিনি বিশ্ব শান্তির জন্য জীবনদানকারী এ সকল শান্তিরক্ষী কর্মীদের সর্বোচ্চ অবদান গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং তাদের পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের স্থায়ী প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কূটনৈতিক, সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তা এবং জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন।

মরণোত্তর ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ প্রাপ্ত বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা হলেন- সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক-এ কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক আরজান হাওলাদার ও সৈনিক মো. রিপুল মিয়া, মালি মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত সৈনিক মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, ওয়ারেন্ট অফিসার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, সৈনিক মোহাম্মদ রায়হান আলী, ল্যান্স কর্পোরাল মোহাম্মাদ আক্তার হোসেন ও সৈনিক মোহাম্মদ রাসেদুজ্জামান, কঙ্গো মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত সৈনিক মো. জানে আলম এবং সাউথ সুদান মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত সৈনিক মো. মতিয়ার রহমান, সৈনিক মো. মঞ্জুর আলী, ল্যান্স কর্পোরাল মো. মিজানুর রহমান ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. আশরাফ সিদ্দিকী।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই মেডেল গ্রহণ করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের ডিফেন্স অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খান ফিরোজ আহমেদ। বাংলাদেশ মিশনের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তাসহ জাতিসংঘ সদরদফতরে কর্মরত বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তাগণও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এসকল মেডেল নিহত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের শুরুতেই মহাসচির গুতেরেজ কর্তব্যরত অবস্থায় জীবনদানকারী সামরিক ও বেসামরিক শান্তিরক্ষী কর্মীর বিদেহী আত্মার স্মরণে জাতিসংঘ সদর দফতরের উত্তর লনে অবস্থিত ‘পিসকিপার্স মেমোরিয়াল সাইটে’ পুস্পস্তবক অর্পন করেন। এর আগে আত্মদানকারী শান্তিরক্ষীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

এ বছর আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা, শান্তি রক্ষা’।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ বর্তমানে দ্বিতীয় বৃহত্তম শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। জাতিসংঘের বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ৬ হাজার ৬০০ শত শান্তিরক্ষী কাজ করছেন। এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় বাংলাদেশের ১৪৬ জন শান্তিরক্ষী মৃত্যুবরণ করেছেন।