নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় টেন্ডার ছাড়াই দেড় কোটি টাকার কাজ বন্টনের অভিযোগ এনে প্রধান প্রকৌশলী এলজিইডি, চেয়ারম্যান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেছে সংক্ষুব্ধ ঠিকাদার।এলজিইডি সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রকৌশলী শফিউল আলমের বিরুদ্ধে নিয়ম বর্হিভূতভাবে পিপিআর ও টেন্ডার ছাড়াই মোটা অংকের দফারফা করে প্রায় দেড় কোটি টাকার কার্যাদেশ প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। মাত্র ৪জন ব্যক্তির ১০টি প্রতিষ্ঠানের নামে ৩০টি কার্যাদেশ দিয়ে অন্তত ২০ লাখ টাকার সুবিধা নেওয়ায় শহরব্যাপি তোলপাড় শুরু হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী বলছেন, পিপিআর ও টেন্ডার ছাড়াও উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে কার্যাদেশ প্রদানের সুযোগ রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য ৩ থেকে ৫ লাখ টাকার মধ্যে বরাদ্দ আসে। যা প্রায় দেড় কোটি টাকার কাছাকাছি। এসব বরাদ্দ অনুযায়ী পিপিআর আরএফটি অনুযায়ী একক ১০ লক্ষ টাকা এবং এর উর্দ্ধে শর্ত মোতাবেক বার্ষিক ৬০ লাখ টাকার বেশি হলে টেন্ডারে আসার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ পিপিআর শর্তের বাইরে যাওয়ায় টেন্ডারে না এসে ঘরে বসেই টেন্ডারের কাগজপত্র সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে।
কোটেশন ওপেনিং শিট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ৩০ এপ্রিল নোটিশ নাম্বার-০১/২০১৮-১৯ প্যাকেজ নাম্বার ১৭৬৭ থেকে ৩০টি দরপত্র পূরণ করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। প্রতিটি টেন্ডার ওপেনিং শিটে এই ৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঘুরে ফিরে ২০০/৪০০/৬০০ টাকা কম বেশি দেখিয়ে দর দাখিল করেছেন। অথচ এই টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিটি কোন পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছে তা কর্তৃপক্ষ বলতে পারছেন না।জানা গেছে, টেন্ডারে অংশ গ্রহণকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, শহরের কাটিয়া এলাকার জারা এন্টারপ্রাইজ-৪টি কার্যাদেশ, কালিগঞ্জের কাকা এন্টারপ্রাইজ-৪টি কার্যাদেশ, কালিগঞ্জের আখিরুল এন্টারপ্রাইজ-৫টি কার্যাদেশ, কাটিয়ার খন্দকার এন্টারপ্রাইজ-২টি কার্যাদেশ, কালিগঞ্জের শাহেদ এন্টারপ্রাইজ-১টি কার্যাদেশ, মিল বাজারের মোল্যা এন্টারপ্রাইজ-৩টি কার্যাদেশ, বলাডাঙ্গার সিরাজুল ইসলামের ৩টি কার্যাদেশ, কাটিয়ার মুক্তি এন্টারপ্রাইজের ১টি কার্যাদেশ, বলাডাঙ্গার রোকন এন্টারপ্রাইজের ৪টি কার্যাদেশ ও একই এলাকার নেহা এন্টারপ্রাইজের ৩টি কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে সিরাজুল ইসলাম, রোকন ও নেহা একই ব্যক্তির ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, জারা ও মোল্যা এন্টারপ্রাইজ একই ব্যক্তির ২টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, কাকা ও আখিরুল একই ব্যক্তির ২টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং খন্দকার, শাহেদ ও মুক্তি একই ব্যক্তির ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়।
এদিকে শহরের কাছারীপাড়ার মেসার্স অরিণ এন্টারপ্রাজের স্বত্তাধিকারি এম এম মজনু জানান, এই টেন্ডারটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দরপত্র বিক্রির সুযোগ হলে সরকার কয়েক লাখ টাকার রাজস্ব পেতো। একই সাথে সেই সুযোগ সরকারকে না দিয়ে সমদরে ইচ্ছে মাফিক চুক্তিভিত্তিক অন্তত ২০ লাখ টাকা নিয়ে উপরোক্ত ৪জন ঠিকাদারের ১০টি প্রতিষ্ঠানের নামে ৩০টি কার্যাদেশ দিয়ে সদর উপজেলা প্রকৌশলী নিজেই এসব টাকা পকেটস্থ করেছেন। সরকারের একজন কর্মকর্তা সরকার নির্দেশিত বিধি বিধান লঙ্ঘন করে সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করার বিষয়টি তদন্তের দাবি জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হলে কারা এরসাথে জড়িত তা অবশ্যই চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। এম এম মজনু আরও বলেন, এ ঘটনায়জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জন্য ইতোমধ্যে প্রধান প্রকৌশলী এলজিইডি, চেয়ারম্যান দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেছেন।
তবে ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে জেলায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতাকে ম্যানেজ করার নামে সেখানেও কয়েক লাখ টাকা বিনিময় করার বিষয়টি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে সার্বিক বিষয়ে ধামাচাপা দিতে কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কাছে ধর্ণা দিয়ে চলেছেন উপজেলা প্রকৌশলী নিজেই।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু টেলিফোনে জানান, “এ বিষয়টা আমি শুনেছি, টেন্ডারটা কয় তারিখে হয়েছে তাও আমি জানিনা। আমি শুনেছি কিছু ঠিকাদার অফিসে এসে ঝগড়াঝাটি করে ইঞ্জিনিয়ারের সাথে। তখন এমপি সাহেবকে ফোন দেয়। এমপি সাহেব ফোনে ওদের বকাঝকা করে। তোমাদের এত মাতব্বারি কেন, কাজ তো আমি দিয়েছি। দুদিন পর আমার কানে আসে, আমি ইঞ্জিনিয়ারকে ডেকে শুনি। ইঞ্জিনিয়ার সাহেব এইরকম একটা ঘটনা শুনলাম! আমি বুঝতে পারছি না যে, আমি জানবো না? টেন্ডার হবে না, এটা কেমন হল? তখন ইঞ্জিনিয়ার বললো, স্যার এমপি সাহেব তালিকাটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো এটার কাজ শেষ করো।তা আপনি আমাকে বলতে পারতেন না? এমপি স্যার নিয়ে আসছে। এই সামান্য কাজ কি এমপি সাহেব নিয়ে আসে? এসব কাজ অটোমেটিক আসে। ৩ থেকে ৫ লক্ষ টাকার ছোট কাজ। এমপিরা নিয়ে আসে বড় বড় বরাদ্দ। এমপি সাহেব বলছে, তা আপনি আমাকে একবার বলবেন না! তখন ইঞ্জিনিয়ার বলে, স্যার আমার ভুল হয়ে গেছে। এমপি সাহেব বললো তুমি কারুর জানাইয়ো না। গোপনে করে ফেল।” তবে এ ব্যাপারে এমপির সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে দুপুরে কথা হলে সদর উপজেলা প্রকৌশলী শফিউল আলম আরও জানান, পিপিআর ও টেন্ডার কোনটির দরকার হয়নি। কারণ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ আমাকে উক্ত কার্যাদেশ প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেছেন।সূত্র: পত্রদূত অনলাইন।