দেশের খবর: বগুড়ায় নিজের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনাকে পরিকল্পিত বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেছেন, ছাত্রলীগের সঙ্গে একমত হতে না পারায় ছাত্রলীগ পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার ও আমার সঙ্গীদের ওপর হামলা করেছে।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে নুর নিজেই এ অভিযোগ করেন। বগুড়ায় তার ওপর হামলার প্রতিক্রিয়া জানাতে নুর সংবাদ সম্মেলন ডাকেন।
নুর বলেন, ‘যেদিন ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়েছি, সেদিনও ছাত্রলীগ টিএসসিতে আমার ওপর হামলা করেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার সময় আমি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম, তারা বলেছিলেন- ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু দুঃখজনক ঘটনা, পরের দিন বগুড়ায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। আমাকে হত্যা করার জন্য ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দ্বারা এ ধরনের হামলা করানো হচ্ছে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাকে পদ নিতে বলা হয়েছিল উল্লেখ করে ডাকসু ভিপি বলেন, কমিটির পক্ষ থেকে এক নম্বর সহসভাপতি, এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ নিতে অফার করা হয়েছিল। ছাত্রলীগের সেক্রেটারি গোলাম রাব্বানী আমাকে এ প্রস্তাব করেছিলেন। তারা আমাকে সবসময় বলেছেন- ছাত্রলীগের রাজনীতি করলে তারা সব সুযোগ-সুবিধা দেখবে। আমি যেন অন্য কোনো রাজনীতি না করি বা অন্যদিকে না যাই।
ছাত্রলীগের সঙ্গে একমত হতে না পারায় এ হামলা অভিযোগ করে ডাকসু ভিপি বলেন, তাদের সঙ্গে আমি যাইনি। তাদের সঙ্গে একমত হতে পারিনি, বিধায় তারা পরিকল্পিতভাবে আমার ওপর হামলা চালাচ্ছেন। আমি আমার জীবন ও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।
হামলাকারীদের বিচার দাবি করে ভিপি নুর বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করতে চাই, ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ঐতিহ্যবাহী একটি সংগঠন। যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করছে তাদের যেন তিনি বিচারের আওতায় নিয়ে আসেন।
বগুড়ায় হামলার বর্ণনা দিয়ে নুরুল হক নুর বলেন, সেদিন আমাদের সঙ্গে যারা ছিল তাদের ওপর জঙ্গি হামলার মতো হামলা করা হয়েছে। হামলার একপর্যায়ে আমি পড়ে গেলে আমার সঙ্গী রাতুল ও সোহেলকে রড দিয়ে তারা পেটায় এবং আমার বাম পায়ে ইট দিয়ে আঘাত করে। পবিত্র রমজান মাসে তারা এ ধরনের হামলা করে প্রমাণ করেছে, তারা একটি সাম্প্রদায়িক শক্তিতে পরিণত হচ্ছে।
পূর্বাপর হামলার সঙ্গে সাম্প্রতিক হামলার যোগসূত্র টেনে নুর বলেন, তাদের সাম্প্রতিককালের কর্মকাণ্ড জঙ্গিদের মতো মনে হচ্ছে। পহেলা বৈশাখে তারা বাঙালির একটি উৎসবে অগ্নিসংযোগ করেছিল। ছাত্রলীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন এ ধরনের কাজ করে আমার কাছে মনে হয় তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে সরে গিয়ে সন্ত্রাসী এবং জঙ্গি কার্যক্রমের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
নুর আরও বলেন, ঘটনাগুলো আমার কাছে একই সূত্রে গাঁথা বলে মনে হচ্ছে। ছাত্রলীগ কিছুদিন আগে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে বলেছে- হালকা ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। তাদের একজন কর্মীর মাথা-নাক ফাটিয়ে দিয়ে বলেছে- কিচ্ছু হয়নি। ঠিক আমাদের ওপর এ রকম ধারাবাহিকভাবে হামলা করেও দায়সারা বক্তব্য দিচ্ছে।
ছাত্রলীগের এমন কার্যক্রম জনগণ প্রতিহত করবে জানিয়ে ডাকসুর ভিপি বলেন, ছাত্রলীগ ধারাবাহিক সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতে থাকলে একসময় জনগণ তা প্রতিহত করবে।
প্রসঙ্গত রোববার বগুড়ায় ইফতার ও দোয়া মাহফিলে যোগ দিয়ে হামলার শিকার হন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর ও তার সঙ্গীরা। ওই দিন বিকালে শহরের পৌর পার্কের উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তন চত্বরে হামলায় নুরসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। পরে পুলিশ নুরকে উদ্ধার করে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইফতার পার্টিতে যেতে নুরকে বাধা দেয়ার একদিন পরই এ ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ বগুড়া জেলা আহ্বায়ক রাকিবুল হাসান রাকিব জানান, শহরে পৌর পার্কে উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে ইফতারে ভিপি নুরকে প্রধান অতিথি করা হয়। খবর পেয়ে ছাত্রলীগের সরকারি আজিজুল হক কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফের নেতৃত্বে ৩০-৪০ নেতাকর্মী সেখানে অবস্থান নেন। এর আগে পুলিশ দিয়ে অনুষ্ঠান না করতে হুমকি এবং ব্যানার সরিয়ে ফেলতে বলা হয়। বিকাল ৫টার দিকে মাইক্রোবাসে ১৩ সঙ্গী নিয়ে নুর অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে তার ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। কিলঘুষি, লাথি ও ইটপাটকেলের আঘাতে নুরসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। স্টেডিয়ামে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোস্তাফিজ হাসান রক্তাক্ত নুরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।
এদিকে নুরসহ তার সমর্থকদের ওপর বগুড়ায় হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’। সেই সঙ্গে হামলাকারীদের নাম প্রকাশ করেছেন তারা। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
বিক্ষোভকারীরা ডাকসু ভিপির ওপর হামলাকারীদের তালিকা প্রকাশ করেন। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হয় বলে তারা জানান। এতে যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন- বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক তিতাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাকভির ইসলাম খান, প্রচার সম্পাদক মো. মুকুল ইসলাম, সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ।
জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, ডাকসুর সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক আখতার হোসেন, পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান, মশিউর রহমান প্রমুখ। ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর এ সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক।