স্বাস্থ্য

ঈদের আনন্দ ও খাওয়া-দাওয়া

By Daily Satkhira

June 05, 2019

স্বাস্থ্য ও জীবন: এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতর সমাগত, উদযাপিত হবে দেশের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ। খাওয়া-দাওয়া, নতুন জামা কাপড় আর ঘোরাঘুরি, ছোট বাচ্চা থেকে বয়স্করা সবাই ঈদের আনন্দকে বরণ করে নেওয়ার জন্য উদগ্রীব। রোজার এক মাসে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনে যে পরিবর্তন আসে তাতেই অনেকে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। মাসখানেক সিয়াম সাধনার পর ঈদের দিন সকাল থেকেই ইচ্ছামতো খাওয়া-দাওয়ার ধুম পড়ে যায়। আর ঈদের দিনে আনন্দের অন্যতম আয়োজনটাই হলো নানারকমের খাবারদাবার। চিরাচরিত প্রথা এ রকমই। সকালবেলা উৎসবের শুরুটাই হয় মিষ্টি, সেমাই, পোলাও, কোর্মাসহ হরেকরকমের খাবার দিয়ে। অনেকে এ সুযোগে একটু বেশিই ভূরিভোজ করে ফেলেন। আসলে কিন্তু ঈদের দিন এভাবে লাগামছাড়া খাওয়া-দাওয়া করা স্বাস্থ্যের জন্য হতে পারে ভীষণ ক্ষতিকর। হঠাৎ এরকম অতিভোজনের ফলে পাকস্থলি তথা পেটের ওপর চাপটা পড়ে বেশি। নিজের ঘরে হরেক রকমের খাবারের সঙ্গে বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজনের বাসায় বেড়াতে গেলেই ইচ্ছা-অনিচ্ছায় আরও বেশি খেতে হয়। ফলে অধিক চাপে অনেক সময় পাকস্থলির এনজাইম ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। এ কারণে পেট ব্যথা, গ্যাস্ট্রাইটিস, ডাইরিয়া, বমি, পেটফাঁপা বা বদহজম ইত্যাদি হরহামেশাই দেখা যায়। সাধারণত ঈদের দিন প্রচুর তৈলাক্ত খাবার যেমন পোলাও, বিরিয়ানি, মুরগি, খাসি বা গরুর গোসত, কাবাব, রেজালা আর এর সঙ্গে মিষ্টি জাতীয় খাবার আমরা সবাই খাই। এসব খাবার পরিপূর্ণভাবে হজম করতে অন্তত ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগে। একসঙ্গে বেশি খাওয়ার ফলে পেটে অস্বস্তিকর অনুভূতি, ভরা ভরা ভাব, বারবার ঢেঁকুর ওঠা এমনকি বুকে ব্যথা পর্যন্ত হতে পারে। যাদের পেপটিক আলসার আছে তাদের রোজা রাখার ফলে দীর্ঘক্ষণ পেট খালি থাকার জন্য নিঃসরিত হাইড্রোক্লোরিক এসিড পাকস্থলি ও ডিওডেনামে ক্ষত করতে পারে। ঈদের দিন তৈলাক্ত ও ঝাল মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ায় পাকস্থলি ও ডিওডেনামের ক্ষতে পুনরায় প্রদাহের সৃষ্টি হয়। ফলে বুক জ্বালা, পেট জ্বালা ইত্যাদি অনেক বেড়ে যায়। আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম রোগে যারা ভোগেন তাদের সমস্যাটা আরও বেশি দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে দুগ্ধজাত খাবারগুলো যেমন পায়েস, সেমাই, হালুয়া ইত্যাদি খাওয়ার পর অস্বস্তি, ঘন ঘন মলত্যাগ ও অসম্পূর্ণ মলত্যাগের অনুভূতি হয়। আবার বিভিন্ন খাবার অন্ত্র থেকে অতিরিক্ত পানি শোষণ করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও বেড়ে যেতে পারে। যাদের অ্যানাল ফিশার ও পায়ুপথে জ্বালাপোড়া, ব্যথা ইত্যাদি আগে থেকেই আছে তাদের এ সমস্যা আরও বেশি প্রকট হয়। যাদের হিমোরয়েড বা পাইলসের সমস্যা আছে, তাদের পায়ুপথে রক্তক্ষরণ হতে পারে, বিশেষ করে কোষ্ঠকাঠিন্য বেশি হলে।

আসলে ছোট বাচ্চাদের ঈদ আনন্দটা সবচেয়ে বেশি। তারা শখ করে দু-একটা রোজা রাখে, রোজা শেষে ঈদের দিন মজার মজার খাবার খেতে বেশি পছন্দ। তবে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে অতিভোজনে বয়স্কদের মতো ছোটদেরও সমস্যা হতে পারে। যে কোনো কিছু খেলেই সবসময় শরীরে সমস্যা হবে এমন কথা নেই, শুধু পরিমাণটা ঠিক রাখলেই হলো। কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকলে হজমে সহায়ক সব ধরনের এনজাইম সঠিকভাবেই কাজ করে। এমনকি গুরুপাক, তৈলাক্ত বা চর্বিযুক্ত খাবারদ্যগুলো সহজে হজম হয়ে যায়। তবে অবশ্যই অতিভোজন না করাই ভালো। ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে অল্প করে সেমাই বা পায়েস খাওয়া ভালো। এগুলোর সঙ্গে কিশমিশ, বাদাম, ফলের জুস, যেমন পেঁপে, আম ইত্যাদি খেতে পারেন। খাবার আধাঘণ্টা পর দেড় থেকে দুই গ্লাস পানি খেয়ে ঈদের নামাজ পড়তে যাবেন। দিনে বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল খাবার খাওয়া ভালো। একবারে বেশি করে না খেয়ে অল্প অল্প করে বার বার খেতে পারেন। যারা ঈদের দিন চটপটি জাতীয় খাবার পছন্দ করেন তারা তেঁতুলের টক মিশিয়ে খেতে পারেন। পোলাও বা বিরিয়ানির সঙ্গে অবশ্যই সালাদ জাতীয় খাবার এবং দই খেতে পারেন। মধ্যবয়সী এবং বয়স্ক মানুষের খাবার সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন। এমনকি হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, হাইপারকো-লেস্টেরমিয়া ইত্যাদি না থাকা সত্ত্বেও এ বয়সের মানুষের ঈদের খাবারের ব্যাপারে বাড়তি সতর্ক থাকা দরকার। যারা স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, গেটেবাত রোগে ভোগেন, তারা খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক

হবেন, ডাক্তারের বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ মতো ও পরিমিত পরিমাণে খাবার খাবেন।

এছাড়া কারও কিডনির সমস্যা

থাকলে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য যেমন মাছ, মাংস, ডিম, ডাল ইত্যাদি কম খেতে হবে।

কিছু টিপস : ঈদের দিনে মাত্রাজ্ঞান রেখে নিজ নিজ স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে খাবার গ্রহণ করতে হবে। খাবারের পরিমাণের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা সবার জন্যই জরুরি। পেটপুরে খাওয়া মানসিক তৃপ্তি দিতে পারে বটে কিন্তু শরীরের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর। একবারে বেশি না খেয়ে বার বার কম পরিমাণে খাওয়া ভালো। সকালের নাশতা একটু বেশি হলেও দুপুরের খাবার হবে হালকা। রাতের খাবার মসলাদার না হওয়াই ভালো। গুরুপাক জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। যদি একান্তই খেতে হয় তবে পরিমাণে কম খেতে হবে। এছাড়া

যে খাবারে সমস্যা বেশি হয় তা পরিহার করা উচিত। অতিরিক্ত পোলাও, বিরিয়ানি বা চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করবেন।

লেখক : সাবেক ডিন, মেডিসিন অনুষদ,

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।