স্বাস্থ্য ও জীবন: মিষ্টি কুমড়া বাংলাদেশের অন্যতম সবজি। তবে এর বীজেও রয়েছে অনেক উপকারিতা। মিষ্টি কুমড়ার বীজ শুধু পুষ্টি মানে সমৃদ্ধ নয়, এর রয়েছে প্রচুর ওষুধি গুণাবলী। নিচে ওষুধি গুণাবলী নিয়ে আলোচনা করা হলো-
বাতের ব্যথা: বাতের ব্যথা চিকিৎসায় মিষ্টি কুমড়ার বীজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মিষ্টি কুমড়ার বীজ হাড়ের সন্ধিস্থলে ভেঙে যাওয়া চর্বিসমূহের পরিমাণ বাড়তে দেয় না। ভেঙে যাওয়া চর্বিসমূহ হাড়ের সন্ধিস্থলে জমা হয়ে ব্যথার সৃষ্টি হয়। এভাবে চর্বি জমতে বাধাদানের মাধ্যমে মিষ্টি কুমড়ার বীজ বাতের ব্যথা কমিয়ে থাকে। অপরদিকে প্রাকৃতিক বস্তু হওয়ায় এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। হাড়ক্ষয় রোধ: ৫০ বছরের বেশি বয়স্ক মানুষের শতকরা ৩০ ভাগ মানুষের কোমরের হাড়ের স্নুক্ষ ফাটল ও ৮ শতাংশ মানুষের হাড়ক্ষয় রোগ রয়েছে। হাড়ক্ষয় রোগের প্রধান কারণ হলো শরীরে জিংকের অভাব। আর এই জিংকসমৃদ্ধ প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎস হলো মিষ্টি কুমড়ার বীজ। সুতরাং খুব সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাদ্যতালিকায় রেখে সহজেই কোমর, মেরুদণ্ডের হাড়সহ দেহের অন্যান্য হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে সক্ষম হবো।
কোলেস্টেরল কমায়: ফাইটোস্টেরল এক বিশেষ রাসায়নিক উপাদান যা উদ্ভিদে পাওয়া যায়। আমরা যদি দৈনিক খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ফাইটোস্টেরল গ্রহণ করি। তাহলে আমাদের দেহের রক্তের কোলেস্টেরল কমায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এ ফাইটোস্টেরলের এক বিশেষ উৎস হলো মিষ্টি কুমড়ার বীজ। মিষ্টি কুমড়ার বীজে ফাইটোস্টেলের পরিমাণ বাদামে উপস্থিত ফাইটোস্টেলের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। যার পরিমাণ ২৬৫ মিলিগ্রাম বা ১০০ গ্রাম।
প্রজনন ক্ষমতা বাড়ায়: জিংক আমাদের দেহের কোষ আবরণীর গঠন ও কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে। জিংকের অভাবে প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, রোগা ও দুর্বল শিশুর জন্ম দেয়। এছাড়া আমাদের প্রায় ২০০টি এনজাইমের কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে জিংক। মিষ্টি কুমড়ার বীজে রয়েছে প্রচুর জিংক। প্রতিদিন অল্প মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়ার মাধ্যমে প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি, সবল শিশু জন্মসহ বিভিন্ন রোগ নিবারণ করতে পারি।
লৌহঘটিত রোগ প্রতিরোধ: আয়রন বা লৌহ আমাদের দেহের লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি ও মাংসপেশী গঠনে ভূমিকা রাখে। আয়রন আমাদের দেহে অক্সিজেন সরবরাহ করে শরীরকে সতেজ ও প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে থাকে। আয়রনের অভাবে রক্তশূন্যতা বা এনিমিয়া রোগ হয়। একজন পুরুষের চেয়ে নারীর দেহে আয়রনের চাহিদা বেশি। মিষ্টি কুমড়ার বীজে প্রচুর আয়রন আছে। প্রতিদিন ৩৫ গ্রাম মিষ্টি কুমড়ার বীজ খেলে দৈনিক চাহিদার প্রায় ৩০% পূরণ হবে। শিশুর বৃদ্ধি, দুগ্ধদানকারী মা, খেলোয়াড়দের প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় মিষ্টি কুমড়ার বীজ রাখা উচিত।
ম্যাঙ্গানিজের অভাব: ম্যাঙ্গানিজ শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি রাসায়নিক উপাদান। ম্যাঙ্গানিজের অভারে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুকোষ স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায়। ফলে সৃষ্টি হয় আলজেইমার্স, সিজোফ্রেনিয়া ও মৃগীরোগ। এছাড়াও ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও বাতের ব্যথা সৃষ্টি হয়। যেহেতু মিষ্টি কুমড়ার বীজে প্রচুর ম্যাঙ্গানিজ থাকে; সেহেতু প্রতিদিন কিছু কুমড়ার বীজ খাওয়ার মাধ্যমে এসব রোগ থেকে উপশম পাওয়া যাবে।
ম্যাগনেসিয়ামের অভাব: ম্যাগনেসিয়াম একটি খনিজ পদার্থ। যা শরীরের বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ, প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিড উৎপাদনে অপরিহার্য। এছাড়া শরীরের হরমোনসমূহের কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ, হৃৎপিণ্ড সচল, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, দৈহিক বৃদ্ধি, হাড় মজবুত, স্নায়ুতন্ত্রের খবরাখবর আদান-প্রদানসহ অসংখ্য জৈবিক কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে। তাই ম্যাগনেসিয়ামের খুব সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য উপাদান হলো মিষ্টি কুমড়ার বীজ। প্রতিদিন ৩৫ গ্রাম বীজ দেহের চাহিদার অর্ধেক পূরণ করতে পারে।
প্রোস্ট্রেট গ্রন্থির টিউমার: বিনাইন প্রোস্টেটিক হাইপা ট্রোফি বা বিপিএইচ, যা সহজ বাংলায় প্রোস্ট্রেট গ্রন্থির টিউমার নামে পরিচিত। এ রোগের ফলে প্রোস্ট্রেট গ্রন্থি বড় হয়ে যায়। টেস্টোস্টেরন হরমোন ও এর থেকে ডাইহাইড্রো টেস্টোস্টেরন হরমোন প্রোস্ট্রেট গ্রন্থির কোষসমূহকে অতি উদ্দীপিত করে। ফলে দ্রুত নতুন নতুন কোষ সৃষ্টির মাধ্যমে প্রোস্ট্রেট গ্রন্থি বৃদ্ধি পেয়ে প্রোস্ট্রেট গ্রন্থির টিউমার সৃষ্টি হয়। মিষ্টি কুমড়ার বীজ থেকে উৎপন্ন তেল প্রোস্ট্রেট গ্রন্থির টিউমার নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। কারণ মিষ্টি কুমড়ার বীজে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, জিংক ও ক্যারোটিনয়েড রয়েছে। যা প্রোস্ট্রেট গ্রন্থির টিউমার নিয়ন্ত্রণ করে।