সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা শহরজুড়ে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটসহ অসংখ্য বাড়িতে চুরির হিড়িক

By daily satkhira

June 09, 2019

নিজস্ব প্রতিনিধি : শহরের পলাশপোল সরদারপাড়া এলাকায় দিন-দুপুরে চুরির ঘটনায় অস্থির হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। প্রায় এক মাসের ব্যবধানে অন্তত ৭ বাড়িতে চোরেরা ঘরের হ্যাজবোল্ড ভেঙে নগদ টাকা, ল্যাপটপ ও স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে নিয়ে গেছে। এসব চুরির হাত থেকে পুলিশের সার্জেন্ট ও চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারির কেউই রেহাই পায়নি। তবে ভুক্তভুগিরা মাত্র একটি ঘটনায় মামলা করার উদ্যোগ নিলেও অন্যরা এড়িয়ে গেছেন নানা কারণে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত ১৮ মে শনিবার সন্ধ্যায় মাগুরা কামারপাড়া এলাকার অনীল কুমার সাহার পুত্র অজয় কুমার সাহা পরিবার নিয়ে পাশে কীর্ত্তণ শুনতে যান। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাড়ি ফিরে দেখেন তার জানাল গ্রিল কাটা। তারা বাড়ি না থাকার সুযোগে সংঘবদ্ধ চোরেরা তার ঘরের আলমারি ভেঙে ১৪ ভরি সোনা, নগদ ৪০ হাজার টাকা ও ২৫ টি শাড়ী চুরি করে নিয়ে যায়। এবিষয়ে তিনি সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন জানান। গত ২০ মে সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা টিভি হাসপাতালে কর্মরত মধ্যকাটিয়া এলাকার শংকর শেখর তার পরিবার নিয়ে বাজারে আসেন। বাড়ি ফিরে দেখেন তার জালানার গ্রিল কেটে ৩ ভরি ওজনের সোনার চেইন, দুটি সোনার আংটিসহ বিভিন্ন মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। এছাড়া ২১ মে রাতে শহরের নারকেলতলাস্থ রূপালী ট্রেডার্সের সার্টার কেটে ১৩ পিচ টায়ার, ৫ বালতি মবিল ৫০ পিচ টিউব ও ১০০ পিচ রিং টেপ অজ্ঞাত চোরের চুরি করে নিয়ে যায়। যার আনুমানিক মূল্য ৭লক্ষ টাকা। পলাশপোল সরদারপাড়ার বাসিন্দা রকিব মোল্যা নিজ বাড়িতেই বসবাস করেন। মাস খানেক আগে বাড়িতে না থাকার সুযোগে বাড়ির দুই তলার দরজার হ্যাজবোল্ড ভেঙে ঘরের মধ্যে ঢুকে ৫০ হাজার টাকা চুরি হয়। একই দিন পাশের বাড়ির মাসুদের বাড়ির ভাড়াটিয়া চায়ের দোকানীর ঘরের দরজার হ্যাজবোল্ড ভেঙে ৪৫ হাজার টাকা চুরি হয়। প্রায় একই সময়ে মাসুদের বাড়ির আরেক ভাড়াটিয়ার ঘরে দিন দুপুরে ঢুকে একটি ল্যাপটপ ও ৩০ হাজার টাকা চুরি হয়। সেখানেও ঘরের হ্যাজবোল্ড ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটে। এদিকে শহরতলীর মিলগেট এলাকার ঈদের পরের দিন দুপুরে হাফিজুর রহমান নামক এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে ৩৭ ভরি সোনার গহনা চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি থানায় অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে। এদিকে সদ্য বিদায়ী ২২ রমজানে একই এলাকার সদরুল আলমের মেয়ের বাড়ির ভাড়াটিয়া ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মোশাররফ হোসেনের ঘরের দরজার হ্যাজবোল্ড ভেঙে ১৮ হাজার টাকা চুরি হয়। চুরির সময় সার্জেন্ট মোশাররফ ও তার পরিবার কেউ বাড়িতে ছিলেন না। সর্বশেষ চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে যে কোন সময় শহরের পলাশপোল সরদার পাড়ার লিপি ম্যানশন এর এড. রেশমা পারভীনের বাড়ির ভাড়া বাসিন্দা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বেঞ্চ সহকারি আশরাফুল আলমের বাসার হ্যাজবোল্ড ভেঙে নগদ ১৮ হাজার টাকাসহ এক লাখ এক হাজার টাকার বেশি স্বর্ণের গহনা ও অন্যান্য জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যায়। ঘটনার সময় ঈদের ছুটিতে থাকায় চোরেরা বুঝে শুনে সময় নিয়ে চুরি করেছে বলে আশরাফুল আলমের অভিযোগ। তিনি বলেন, এই এলাকায় একইভাবে অনেকগুলো চুরি হয়েছে। চোরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এধরণের চুরি শহরবাসিকে রীতিমত ভাবিয়ে তুলেছে। তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি এজাহার জমা দিয়েছি। তবে ঘটনার পরপরই সদর থানার ওসিকে জানানোর পর এসআই কিশোর ঘটনাস্থলে এসে দেখে যান এবং চুরির বিষয়টি তিনি প্রত্যক্ষ করেন। আশরাফুল আলম আরও বলেন, এক মাসের কিছু বেশি সময় হবে শহরের এসপি বাংলোর পেছনে সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী আবু মুসার বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ভাড়া থাকেন চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তফা পাভেল রায়হান। তিনি সকালে বাসা থেকে অফিসে আসেন এবং বিকালে বাসায় গিয়ে দেখেন, চোরেরা তার বাসার হ্যাজবোল্ড ভেঙে চুরির চেষ্টা করেছে। তবে কিছুই নিতে পারেনি। হয়তো বা কেউ এসে যাওয়ার কারণে চোরেরা দ্রুত পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারেও সেখানে ঘটনার পরপরই পুলিশ গেলেও কোন প্রতিকার হয়নি। এসব ব্যাপারে কথা হয় পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট মোশাররফ হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, এমনিতেই পুলিশে চাকরি করি। তারপর আমার বাসা থেকে চুরি হয়েছে। এব্যাপারে বাড়ি ওয়ালাকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম বা পুলিশকে অবহিত করতে বলেছিলাম তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সার্বিক বিষয়ে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোস্তাফিজুর রহমান দুপুরে জানান, বেঞ্চ সহকারি আশরাফুল আলমের বাসায় চুরির ঘটনায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। এছাড়াও ওই এলাকায় অন্যান্য চুরির বিষয়ে তার কাছে কোন খবর নেই। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট মোশাররফের বাড়িতে চুরি হয়েছে, আমি জানিনা বা আমাকে জানায়নি। তবে এসব এলাকায় অভিযান চলবে বলে জানান তিনি। এঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি এড. ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, সম্প্রতি শহরে এধরনের চুরি সংঘটিত হওয়ায় শহরবাসীর মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। এখনই প্রশাসন যদি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করেন তাহলে শহরে আতংক আরো বেড়ে যাবে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। অবিলম্বে চোরদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।