জাতীয়

নানাভাবে ক্যাম্প ছেড়ে পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা

By Daily Satkhira

June 12, 2019

দেশের খবর: রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাদের গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ এবং নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা বিভিন্ন উপায়ে ক্যাম্প ছেড়ে পালাচ্ছে। তাদের কেউ সাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছে। আবার কেউ বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে বাংলাদেশিদের সঙ্গে মিশে গিয়ে কৌশলে পাসপোর্ট তৈরি করে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছে এমন কয়েকটি এনজিও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা মানবিক সহায়তা পেলেও অনেকে মনে করছেন সহসা তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন হবে না। তাই ক্যাম্পে বসবাসের একঘেয়েমি জীবন থেকে বের হয়ে তারা স্বাধীনভাবে চলতে চায়। এমন চিন্তায় অনেকে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।

আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ইন্টার সেক্টর কমিউনিকেশনের (আইএসসিজি) মুখপাত্র সৈকত বিশ্বাস জানান, রোহিঙ্গাদের অনেকে উন্নত জীবনের জন্য দেশের বাইরে যেতে চায়। আবার অনেকের আত্মীয়-স্বজন বিদেশ থাকার কারণে এসব রোহিঙ্গারা সেসব দেশে গিয়ে তাদের সঙ্গে মিলন ঘটানোর জন্য বিদেশ পাড়ি দিতে তৎপর।

এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে আরেক ধরনের নতুন সংকট সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করছেন এই কর্মকর্তা।

এনজিও সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিন ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গারা পালাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট সীমানায় ঘের দিয়ে রাখতে না পারায় তারা বনজঙ্গলসহ বিভিন্ন চোরাপথ দিয়ে সহজে বের হয়ে যাচ্ছে। সাগর পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিছু রোহিঙ্গা পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করলেও অধিকাংশ রোহিঙ্গা এখন কৌশল পাল্টিয়েছে। তারা বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে ঢুকে পড়ছে। এরপর বাংলাদেশিদের সঙ্গে মিশে গিয়ে তাদের সঙ্গে বসবাস করছে। পরে তৈরি করছে পাসপোর্ট। আর উড়াল দিচ্ছে বিদেশে। এ সুযোগে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে বের করে বিদেশে পাচার করতে গড়ে উঠেছে ক্যাম্পভিত্তিক দালাল চক্রও।

সূত্র জানায়, সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টাকালে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশের পৃথক ২১টি অভিযানে গত দেড় মাসে প্রায় ছয়শত রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ৬ জুন কক্সবাজার শহরের লিংকরোড থেকে ১৮ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ। এর আগে, গত ৩০ মে সেন্টমার্টিনের দক্ষিণে গভীর সমুদ্রে মালয়েশিয়া পাড়ি দেওয়ার সময় কোস্টগার্ড দুই দালালসহ ৫৮ জনকে আটক করে। এর মধ্যে ২০ জন পুরুষ, ২৬ জন নারী ও ১০ শিশু রয়েছে। তারও আগে ২০টি অভিযানে ৫১৭ রোহিঙ্গাকে আটক করে ক্যাম্পে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে ৩২ দালালকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

শুধু সাগর পথে রোহিঙ্গারা পালানোর চেষ্টা করছে না, তারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বৈধভাবে বিদেশ পাড়ি দেওয়ারও চেষ্টা করছে। গত ১০ মে রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে পালানোর সময় ২৩ জন রোহিঙ্গা ধরা পড়ে। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাসপোর্ট করতে গিয়ে আরও অর্ধশত রোহিঙ্গা ধরা পড়েছে।

কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আবু নাঈম নাসিম জানান, পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের করা ৩০০ আবেদন জব্দ করা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন জানান, রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় পাচার হচ্ছে। যারা স্বেচ্ছায় পালিয়ে যেতে চায় তাদের ধরা কঠিন। আর এর মধ্যে মানবপাচারকারীরা সহযোগিতা করলে আরও কঠিন হয়ে পড়ে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চুক্তি সই করে। কিন্তু, বাস্তবে দেখা যায় নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকারের অভাবে এখন পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমারে নিজেদের বাসস্থানে ফিরে যাননি।মিয়ানমারের সীমানার অদূরে বাংলাদেশের কক্সবাজারের পাহাড়গুলোতে গাদাগাদি করে বাস করে ৯১৯,০০০ রোহিঙ্গা। পাহাড়ি বনভূমি উন্মুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই আশ্রয় শিবির। পার্শ্ববর্তী টেকনাফ ও উখিয়াতেও গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ক্যাম্প।এসব শরণার্থীদের সঙ্গে রয়েছেন ১৯৮২ সাল থেকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া আরো প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা।মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বিদ্রোহ নির্মূল করার জন্যে ২০১৭ সালে দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালায়। নিজেদের বাসভূমি রাখাইন রাজ্য তথা মিয়ানমার ছাড়তে বাধ্য হন তারা ।