খোলা মত

তাবিজ ফ্রি কিন্তু অষ্ট ধাতুর মাদুলি চাই!

By Daily Satkhira

March 07, 2017

মো: আমিনুর রহমান : লেখার শুরুতে পাঠকদের বুঝার সুবিধার জন্য একটি বাস্তব উপমা ব্যবহার করেছি। “তাবিজ ফ্রি কিন্তু অষ্ট ধাতুর মাদুলি চাই।” আমরা অনেকেই এই অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত। বেদে বা ফুটপথে যারা ঝাড়-ফুক করে বেড়ায় তারা তাদের ব্যবসা চালু রাখার জন্য বিভিন্ন ফন্দি ফিকিরের আশ্রয় নেয়। যেমন মানুষের সাধারণত যে সমস্ত সমস্যা প্রতিনিয়ত হয়ে থাকে তেমন কিছু রোগের কথা বলে প্রথমে ফ্রিতে কিছু তাবিজ-কবজ দিয়ে থাকে। তাবিজ-কবজ দেওয়ার পর নিয়মের দোহাই দিয়ে উপস্থিত ব্যক্তিদের আটকিয়ে রাখে। এক পর্যায়ে এমন কঠিন নিয়মের কথা বলে যা পালন করতে অনেক ঝামেলা ও অর্থ খরচের ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। কিন্তু তার থেকে সহজ উপায়ে কবিরাজের নিকট থেকে অষ্ট ধাতুর মাদুলি পাওয়া যাবে বলে প্রচার দেয়। বাধ্য হয়ে যারা ফ্রিতে তাবীজ নিয়েছে তাদের সেই অষ্ট ধাতুর মাদুলি চড়া দামে কিনতে হয়। আবার মাদুলি তৈরি করতে ও কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে যেটা কবিরাজ মহাশয়েরা আগে থেকেই জানেন অর্থাৎ কোন মতেই যেন মাদুলি তৈরি করতে না পারে। তারপর কবিরাজ লোহার একটি ২ টাকার মাদুলি ১০০ টাকা বা তার উর্দ্ধে বিক্রি করে থাকে। কবিরাজ বলে দশ গ্রামের দশ জনের ছাড়া আমার এই মাদুলি দেওয়া যাবে না। তখন মাদুলি কেনার জন্য লাইন পড়ে যায়। আমি কথাগুলো এই জন্য বললাম যে, বর্তমানে শিক্ষা বান্ধব সরকার ও তার মন্ত্রী পরিষদের ঘোষণা অনুযায়ী উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত মেয়েদের লেখাপড়া অবৈতনিক করেছে। তাছাড়া লেখাপড়ার উপকরণ কেনার জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থাও করেছেন। প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়ের পাঠ্য বইগুলো বছরের শুরুতে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। শিক্ষামন্ত্রীর বারবার ঘোষণা শোনা যায় টিভি, প্রিন্ট মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যে প্রাইভেট পড়ানো যাবে না, গাইড বই বিক্রি করা যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু কোন কিছুই কি বন্ধ করতে পেরেছে ? বরং যতবারই ঘোষণা  শোনা যায় ততবারই অভিভাবকদের বেশি সমস্যায় পড়তে দেখা যায়। আগে গ্রাম এলাকায় ব্যাচে প্রাইভেট পড়াতে ২০০ টাকা করে দিতে হতো । কিন্তু প্রাইভেট বন্ধ ঘোষণার পর থেকে ৫০-৭০ জনের ব্যাচে পড়েও ৫০০ টাকা করে দিতে হয়। তাছাড়া গাইড বই বন্ধ ঘোষনার পরে প্রকাশনী গুলো সরকার মহলের কিছু প্রভাবশালীদের ছত্র ছায়ায় চড়াও হয়ে উঠেছে। যে বই পূর্বে ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হতো সে বই বর্তমানে ৬০০-৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তারপর ও প্রতি ক্লাসের গাইড বইগুলো বাধ্যতামূলক বিক্রির জন্য শিক্ষক সমিতি ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে মোটা অংকের টাকায় চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে। তাদের চুক্তির টাকার চাপ পড়ছে সাধারণ অভিভাবকদের উপর। বর্তমানে বাজারে গাইড বই ক্লাস অনুযায়ী বান্ডেল তৈরি করেছে। যাতে প্রত্যেকের বাধ্যতামূলক সব বই কিনতে হয়। শিক্ষক সমিতি ও প্রকাশনী মালিকদের কু-ষড়যন্ত্রের প্রশংসা না করে পারা যায় না। কারণ সমিতির মাধ্যমে উপজেলা ভিত্তিক পাঠ্যক্রমের জন্য সিলেবাস তৈরি হয়। আর সেই সিলেবাসগুলো এমন কায়দায় করা হয় যেন অন্য কোন বই কিনলে নির্ধারিত টপিক্স না পাওয়া যায়। গাইড বইয়ের পৃষ্ঠা নং উল্লেখ করে টপিক্সের নাম না দিয়ে সিরিয়াল নং দিয়ে সিলেবাসগুলো তৈরি করা হয়। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকাশনীর সাথে কথা বললে তিনি জানান উচ্চ মহল থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে হয় । আর সেই টাকা উঠাতে যেয়ে বইগুলোর মূল্য আকাশ ছোঁয়া হয়ে যায়। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে দেশে শতকরা ৯০ ভাগ জনগণ কৃষক সে দেশের বেশির ভাগ মানুষ দিন আনে দিন খায়। নিত্য দিনের সংসার খরচ চালায়ে, পরিবারের জন্য চিকিৎসা খরচ করে ছেলে মেয়েদের স্কুলে পড়াতে হিমসিম খাচ্ছে। সংসার খরচ চালায়ে তাদের একটি টাকাও ডানে থাকে না যে তাই দিয়ে বাচ্চাদের গাইড বই কিনে দেবে। মালার ভারে বৈরাগী কোথে। বিনামূল্যে বই পেয়েও পড়াশোনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমার ক্ষুদ্র লেখনীর মাধ্যমে সরকার বাহাদুর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যাতে কবিরাজের মত ফ্রিতে তাবীজ পেয়ে তা ব্যবহারের জন্য অসহনীয় মূল্যে অষ্ট ধাতুর মাদুলি কেনার মত বিনামূল্যে বই পেয়ে তা পড়ার জন্য বাজারের গাইড বই কিনতে হিমসিম খেতে না হয়। প্রত্যেক শ্রেণিতে এমন বই নির্ধারণ করুন এবং এমন প্রশ্ন কাঠামো তৈরির সিদ্ধান্ত করে দেন যাতে কোন বড় প্রশ্ন না থাকে এবং বইয়ের মধ্যেই প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তর থাকে। তাহলে  আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয় শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে, প্রকাশনী চক্রের ব্যবসা বন্ধ হবে।