জাতীয়

তুরিন আফরোজের বাধায় বাসায় ঢুকতে পারছেন না মা ও ভাই

By Daily Satkhira

June 15, 2019

দেশের খবর: নিজেদের দাবি করা বাড়িতে ঢুকতে পারছেন না ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের মা ও ভাই। থানা পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে তা পাননি বলে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় তাদের দিন কাটছে। এমনটাই জানিয়েছেন তুরিন আফরোজের ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশির।

শিশির বলেন, আমি মাকে নিয়ে আমার নিজ ফ্লাটে উঠতে গেলেও আমার বোন তুরিন আফরোজের বাধায় উঠতে পারিনি। আমি পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে থানায় জিডি করেছি। পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও পাইনি। পুলিশ বলছে, আদালত থেকে আদেশ নিয়ে এলে তারা ব্যবস্থা নেবে। এখন আমাদের দিন উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় কাটছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, আমার বাবা উত্তরার এ জায়গাটি ১৯৯৪ সালে আমার নামে হেবা করে দেন। ২০০০ সালে এখানে আমার বাবা বাড়ি করেন। হাতিরপুলের জায়গাটি আমার ভাইয়ের নামে দেওয়া হয়। আমার ভাই শিশির এখন জায়গাটি দাবি করে জোরপূর্বক দখল করতে চায়। আমি আদালতে মামলা করেছি। আদালত জায়গাটি দখল, বিক্রি, হেবার ওপর অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। চূড়ান্ত রায় হওয়ার আগ পর্যন্ত এ বাড়ি নিয়ে কিছু করা যাবে না।

মা ও ভাইকে বাসায় প্রবেশ করতে না দেওয়া প্রসঙ্গে তুরিন আফরোজ বলেন, আমার ভাই বাসার নিচে এসে বাসার সিকিউরিটি এবং আমার জন্য নিযুক্ত নিরাপত্তাকর্মীদের সাথে হৈ চৈ, গালিগালাজ ও খারাপ ব্যবহার করে। আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত এসব নিয়ে কথা বলা ঠিক না।

অভিযোগ করে তুরিন আফরোজ বলেন, আমার মাকে তো ফেলে দিতে পারি না। ছয়তলা বাড়ির মধ্যে উনি যেকোনো একটি ফ্ল্যাটে থাকতে চাইলে আমি নিষেধ করব কেন? উনি তো আমার ভাইকে নিয়ে বাড়ি দখল করতে চান। এটা হলো মূল সমস্যা। আমার মা আমার ভাইকে নিয়ে কানাডায় জীবনযাপন করেছেন। বাবাকে কোনো যত্ন করেননি। আমি বাবার যত্ন করেছি। বাবার মৃত্যুর সময় মা এসে তিন মাস থেকে গেছেন। এ ছাড়া মাঝে মধ্যে বেড়াতে আসতেন। বাবা আমাকে বাড়িটি দিয়ে গেছেন। তাহলে এখন আমার ভাই যদি দাবি করে তাহলে এটা মামলায় রায়ের অপেক্ষায় থাকতে হবে।

অপরদিকে তুরিন আফরোজের এ বক্তব্যের জবাবে শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশির বলেন, ‘তুরিন আপা মিথ্যা কথা বলছেন। আমার বাবার হাতিরপুলে একটি ফ্ল্যাট ছিল। সেটি তাঁকে (তুরিন আফরোজ) দেওয়া হয়েছে। সেসব নথি আমার কাছে রয়েছে। অথচ তুরিন আপা জোরপূর্বক আমার মায়ের নামে থাকা বাড়িটি দখল করে মাকে বেরে করে দেন।’

শিশির বলেন, গতকাল শুক্রবার উত্তরা পশ্চিম থানায় জিডি করি। জিডি নম্বর ৭৩৮। জিডিতে বোন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ফ্লাট দখলে রাখা ও তাদের ওই ফ্লাটে উঠতে না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

বাসায় ঢুকতে বাধা:

শিশির বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার কানাডা থেকে দেশে ফিরে আমরা উত্তরার বাসায় যাই। কিন্তু বোনের (তুরিন আফরোজ) নির্দেশে বাসার দারোয়ান ও আনসার সদস্যরা আমাদেরকে প্রবেশ করতে দেননি। তখন আমি তাদের বলি, আমাকে তো ঢুকতে দিলেন না, আপনারা থাকেন আপনাদের ম্যাডামকে নিয়ে। এ বাসায় তো সিসি ক্যামেরা আছে, আমি যে এসেছিলাম মাকে নিয়ে তার রেকর্ড তো থাকল।’

তিনি বলেন, ‘বাড়িটি আমার মায়ের নামে। মা আমাকে বাড়িটি লিখে দিয়েছেন। আমিই বাড়ির ঋণ পরিশোধ করেছি। আমার বাবা দুই বছর আগে মারা যান। বাবা মারা যাওয়ার আগে বাবা-মা নিজেদের খরচের জন্য বাড়ির ভাড়া তুলতেন। বাবা মারা যাওয়ার পর আমার বোন তুরিন আফরোজ বাড়ির ভাড়াটিয়াদের বলেন, ‘‘এ বাড়ির মালিক এখন থেকে আমি। মাকে আমি দেখব।’’ বাড়ি নিজের দখলে নিয়ে মাকে বের করে দেন। পরে আমি আম্মাকে আমার কাছে নিয়ে যাই।’

শিশির আরো বলেন, আমার আসার সংবাদ পেয়ে কাজের মেয়ে নিচে নেমে আসে। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করি, তুরিন আপু বাসায় আছে কি না। তিনি আমাকে বাসায় আছে বলে জানান। পরবর্তীতে বাসায় ঢুকতে না পেরে বাধ্য হয়ে ফিরে আসি। এরপর উত্তরা পশ্চিম থানায় জিডি করেছি। জিডি নম্বর ৭৩৮, ১৪ জুন।

জিডি করার বিষয়টি নিশ্চিত করে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা বলেন, ‘কানাডা প্রবাসী শাহনেওয়াজ শিশির বাসায় ঢুকতে চাইলে তাঁর বোন তুরিন আফরোজ তাঁকে ঢুকতে দেননি বলে জিডিতে উল্লেখ করেছেন।’

এর আগেও ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে থানায় জিডি (জিডি নম্বর- ১১৮৮) করেছিলেন তাঁর মা। এ ছাড়া গত ১ জানুয়ারি ঢাকার প্রথম যুগ্ম জজ আদালতে বাড়ি দখলের অভিযোগে তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তাঁর ছোট ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশির।

মামলায় শিশির উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালের ২ মার্চ পুলিশ দিয়ে ভয় দেখিয়ে মা শামসুন নাহার ও অন্য ভাড়াটিয়াদের বাড়ি থেকে বের করে দেন তুরিন আফরোজ। নিজেকে বাড়ির মালিক দাবি করে তুরিন বাড়ি ও জমির দলিলপত্রও দখলে নিয়ে নেন।

অভিযোগের বিষয়ে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, আমার বিরুদ্ধে জিডি করেছে, তা আমি শুনেছি। তবে আমিও তাদের (মা ও ভাই) বিরুদ্ধে পাল্টা জিডি করেছি।