জাতীয়

সাহসের উৎস বেগম রোকেয়া থেকে শেখ হাসিনা

By Daily Satkhira

March 08, 2017

সাহসে ভর করে নিজের এবং চারপাশে পরিবর্তন আনা দেশের সফল নারীরা বলেছেন, বাংলাদেশের নারীদের সাহস আর পরিবর্তনে সবসময়ই প্রেরণার উৎস ছিলেন বেগম রোকেয়া। এখনো তিনি নারীর প্রেরণার উৎস। সেই প্রেরণার উৎসের আরেক নাম শেখ হাসিনা।

তাদের মতে, বেগম রোকেয়া নারীদের স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন, শেকল ভাঙার গান হয়েছেন। বেগম রোকেয়ার লেখনী থেকে জীবনী– সবই তখন থেকে এখন নারীর জন্য অনুপ্রেরণা। তার পর নানা ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা অনেক নারীর জীবন সাধারণ নারীদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় প্রেরণার আরেক উৎস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যার জন্য বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে, পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় বিশ্ববাসীর কাছে নতুন পরিচিত পাচ্ছে বাংলাদেশ।

এভাবেই কিছু নারী হয়ে উঠেছেন অন্য নারীদের সাহসের উৎস।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং দেশের প্রথম নারী উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম  বলেন, বেগম রোকেয়া যখন তার কাজ শুরু করলেন তখন সেটা ছিলো বিশাল সাহসের কাজ। তিনি পরিবারের পুরুষদের সহযোগিতা পেলেন। এরপর আমরা গুরুত্বপূর্ণ আরো নারীকে পেলাম– যেমন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার বা ইলা মিত্র। সুফিয়া কামাল, বেগম ফজিলাতুন্নেছা বা বর্তমানেও কাজ করে চলেছেন সুলতানা কামাল।

‘সমাজ উন্নয়ন, রাষ্ট্র পরিচালনা ও বিভিন্ন পেশায় নারীরা এগিয়ে এসেছেন। তারা সবাই বর্তমান নারীদের জন্য সাহসের উৎস।’

তিনি বলেন: ওই সময়ে নারীরা নানান প্রতিকূলতা পেরিয়ে এসেছেন। আর তারা এগিয়ে এসেছিলেন বলেই আমরা কাজগুলো করছি। বর্তমান যুগের নারীদের জীবনে এখন নানান মাত্রার পরিবর্তন এসেছে। পথপ্রদর্শক সেই সব নারীদের আলোই ছড়িয়ে পড়েছে অনেক দূর।

‘আর সে কারণেই এতদিন যেসব জায়গায় কেবল পুরুষরা রাজত্ব করতো সেসব জায়গায় বেড়েছে নারীর পদচারণা।’

ফারজানা ইসলাম মনে করেন, একেক জায়গায় নারীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের ধরণটা একেক রকম। এদেশে এখনো পুরষদের দ্বারা নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এসিড মেরে নারীদের আক্রান্ত করা হচ্ছে। সেসব পেরিয়ে এগোনোই নারী উন্নয়নের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সেজন্য আইনী ব্যবস্থা ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সহযোগিতাও দরকার আছে। শুধু পরিবারেই নয় রাস্তাঘাটেও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সেসব ক্ষেত্রে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো খুব জরুরি। পরিবারে শুধু নারীদেরই নয়, পুরুষদেরও এমন করে গড়ে তুলতে হবে যেন সে নারীদের তার উর্ধতন কর্মকর্তার পদেও মেনে নিতে পারে।

‘এসব পরিস্থিতিতে সবার আগে দরকার মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন। জ্ঞানের আলো আরো বেশি ছড়িয়ে দিতে হবে। আইনের শাসন ও শিক্ষার সুযোগ কাজে লাগালেই কেবল এসব পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব। মেয়েকে বদলাতে হবে, পরিবারে পরিবর্তন আনতে হবে। তাহলে একসময় না একসময় পুরুষের মধ্যেও পরিবর্তন আসবে।’

মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম বলেন, বেগম রোকেয়া থেকে শেখ হাসিনা– এই লম্বা সময়ে বেশ কিছু নারী বাংলার নারীদেরকে উজ্জীবিত করেছেন। সেখানে যেমন ভারোত্তলনকারী মাবিয়া সীমান্ত রয়েছেন, রয়েছেন সেই ঘোড়ায় চড়া কিশোরী তাসমিমাও। বাংলার ঘরে ঘরে থাকা নারী কৃষকদের অবদানও কি খুব কম? নয় তো। তারাও তো এদেশের নারীদের এগিয়ে নিয়েছেন অনেকখানি। বা ঢাকার বিভিন্ন গার্মেন্টসে যেসব নারীরা কাজ করছে তারাও তো নারীর সাহসের উৎস। এখন তো হাজার হাজার নারী বিভিন্ন পেশায় আসছেন। জাতীয় সংসদ থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে আসছেন।

অগ্রপথিক নারীদের কথা টেনে তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া অথবা ইলা মিত্র, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার সেই সময়গুলোতে বেরিয়ে এসেছেন যখন কিনা তাদের নানান প্রতিকূলতার মধ্যে থাকতে হতো। কিন্তু এখনতো সেই সব জায়গাতে অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে। সাধারণ নারীরাই কিন্তু তখন বের হয়ে এসে এসব নারী আন্দোলন করেছে এবং সেটাই চলছে অনেক বছরের ইতিহাসে।

‘তবে এত বছরে নারীদের সাহসের ইতিহাসে এখনও সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নারীর অধিকার, নিরাপত্তা। নারী যেমন একদিকে রাষ্ট্রের নাগরিক তেমন সে মা। সে যেমন রাষ্ট্রের জন্য কিছু করতে চাইছে তেমনই তাকে মায়ের দায়িত্বও পালন করতে হচ্ছে। এই জায়গাটাতে আরো বেশি কাজ করা দরকার,’ বলে মনে করেন তিনি।

তবে, তিনি বলেন: সেটা করতে গিয়ে নারীদের যেমন সামনে এগিয়ে আসতে হবে তেমনই পুরুষের মধ্যেও সহযোগিতার মানসিকতা থাকতে হবে। এর আগে যেসব নারী বের হয়ে এসেছেন তারাও কিন্তু পুরুষের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন। নারীদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করতে হলে পরিবারের ও রাষ্ট্রের সহযোগিতা দরকার হবে।