দেশের খবর: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের সঙ্গে ঘুষ লেনদেনে জড়ানোর অভিযোগ করে আলোচনায় এসেছেন পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমান। প্রায় আড়াই বছর ধরে পুলিশ বিভাগ ও দুদকে তার নানা কর্মকাণ্ডের তদন্ত ও অনুসন্ধান হয়েছে। এসব তদন্ত-অনুসন্ধানে দেশ-বিদেশে মিজানের বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হয়েও তিনি নারীর প্রতি সহিংস আচরণ করেছেন–এমন অভিযোগেরও প্রমাণ মিলেছে। তবে পুলিশে এরকম মিজান শুধু একজনই নন। নানা অপরাধ করে সমালোচিত হয়েছেন এসপি সুভাষ চন্দ্র সাহা, এসপি মিজানুর রহমান, পুলিশ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম,পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শেখ হিমায়েত হোসেন মিয়া প্রমুখ।খোঁজ নিলে মিলবে এমন আরও অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সন্ধান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ জমা দেওয়া, মাদক ব্যবসা, জেল-মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, জমি দখলে ভূমিকা রাখা, চাঁদাবাজি, নকল পণ্যের ব্যবসা ও কারখানা পরিচালনা, পরিবারের সদস্যদের নামে ব্যবসা পরিচালনাসহ নানা অভিযোগ আছে এরা-সহ পুলিশের অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
আবার, দুর্নীতি দমন যার কাজ সেই সংস্থা ‘দুদক’-এর বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগের তদন্তে নেমে দায়সারা প্রতিবেদন জমা দিয়ে তাদের বাঁচানোর অভিযোগও রয়েছে। এমন একটি ঘটনায় দুদক থেকে অভিযোগ অনুসন্ধানের পর দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়মুক্তিও দেওয়া হয়। পরে অন্য ঘটনায় আবারও গণমাধ্যমে আলোচিত হলে দুই কর্মকর্তার একজনের সম্পদের অনুসন্ধান নতুন করে করেছে দুদক। তাতে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় মামলাও হয়েছে ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে।
পুলিশের দুর্নীতি, অপরাধে জড়িয়ে পড়ার কিছু খণ্ডচিত্র:
এসপি সুভাষ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ: ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর ফরিদপুরের সাবেক এসপি সুভাষ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী রিনা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও তিনি। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে আয় করা সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যাংকে জমা রাখার অভিযোগ করা হয়। দুদকের তথ্য বলছে, ওয়ান ব্যাংকের তিনটি শাখায় ১৯টি এফডিআরে দুর্নীতির টাকা জমা রেখেছেন সুভাষ ও তার স্ত্রী। কিন্তু তাদের আয়কর বিবরণীতে এই তথ্য গোপন রেখেছিলেন। ২০১৩ সালের ২৬ মে থেকে ২০১৭ সালের ২২ মে পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, পুলিশ বিভাগে চাকরির সূত্রে দুর্নীতি করে আয় করা টাকা স্ত্রীর সঙ্গে যৌথভাবে ওয়ান ব্যাংকে ১৯টি এফডিআরে জমা রেখেছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। ওয়ান ব্যাংকের ঢাকার বংশাল শাখায় ৬টি, এলিফ্যান্ট রোড শাখায় ১টি ও যশোর শাখায় ১২টি এফডিআরে ৮ কোটি ৩৬ লাখ ১৩ হাজার ৩৬৭ টাকা জমা রাখা হয়। বর্তমানে সুদে-আসলে তা আরও বেড়েছে।
মাগুড়া জেলার শ্রীপুরের রাধানগর গ্রামের মৃত সূর্য কান্তের ছেলে সুভাষ। গ্রামের স্কুল থেকে ১৯৮৮ সালে এসএসসি এবং ১৯৯০ সালে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। ১৯৯৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স (সম্মান) ও ১৯৯৪ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ২১তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে ২০০৩ সালের ১০ মে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে মৌলভীবাজারে যোগ দেন। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর এসপি সুভাষকে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে।
সুভাষ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার অভিযোগপত্র খুব শিগগিরই দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
এসপি মিজান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ:
গত বছরের ৫ জুন সাড়ে তিন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রিজার্ভ ফোর্সের (আরআরএফ) কমান্ড্যান্ট (পুলিশ সুপার পদমর্যাদার) মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী সালমা আক্তার নীপার বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি মামলা করে দুদক। রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলা দু’টি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, এসপি মিজান ও তার স্ত্রীর নামে ৩ কোটি ৫০ লাখ ২০ হাজার ৯৯৮ টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে। এরমধ্যে মিজানের নামে ১ কোটি ১৭ লাখ ৬১ হাজার ১৮২ টাকার ও তার স্ত্রীর নামে ২ কোটি ৩২ লাখ ৫৯ হাজার ৮১৬ টাকার অবৈধ সম্পদ আছে। এজাহারের তথ্য অনুযায়ী নীপার অবৈধ সম্পদের পরিমাণ স্বামীর অবৈধ সম্পদের দ্বিগুণ। এসপি মিজানের বিরুদ্ধে অবৈধ আয়ের টাকায় সাভারের হেমায়েতপুরে ৮৪ শতাংশ জমিতে ও রাজধানীর মিরপুরের মাজার রোডে বাড়ি নির্মাণ এবং নির্মাণকাজে এসআইসহ বিভিন্ন পদের ৬০ জন পুলিশ সদস্যকে শ্রমিক হিসেবে কাজ করানোর অভিযোগ ওঠে ২০১৬ সালে। ওই বছরের ২৫ আগস্ট এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়। নকল সারের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকারও অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের সূত্র ধরেই গত বছর অনুসন্ধান চালায় দুদক। অনুসন্ধান শেষে মামলার সুপারিশ করে দুদক। মামলা হয় মিজান ও তার স্ত্রীর নামে।
উপ-পরিদর্শক হিসেবে ১৯৮৯ সালে পুলিশে যোগ দেন মিজান। পরে ১৭তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৯৮ সালে সহকারী পুলিশ সুপার ও পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে এসপি হন তিনি। জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগে ২০১০ সালে বাগেরহাটের এসপির পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছিল তাকে।
দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরও রিজার্ভ ফোর্সের (আরআরএফ ) কমান্ড্যান্ট (পুলিশ সুপার পদমর্যাদার) হিসেবেই কর্মরত আছেন মিজান।
মিজান-নীপার যত সম্পদ:
১. গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বাড়িসহ ১৩.০৮ একর জমি
২. রাজধানীর তেজকুনিপাড়ায় ১,৮০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট
৩. তেজকুনিপাড়ায় ১,৭১৮ বর্গফুটের আরও একটি ফ্ল্যাট
৪. জুরাইন এলাকায় একটি দোকানঘর
৫. মিরপুরের বিভিন্ন মৌজায় ১৫ শতাংশ জমি
৬. উত্তরায় ৩ কাঠার প্লট
৭. মিরপুরের মাজার রোডে তিনতলা ভবনসহ ৫ কাঠা জমি
৮. মিরপুরে ২ কাঠা জমিতে দোকানঘর
৯. গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় ৫.৩৮ একর জমি
১০. এক ব্যাংকে ৯১ লাখ ১২ হাজার টাকা
১১. আরেক ব্যাংকে ৭৫ লাখ টাকার এফডিআর
১২. মোল্লা এনপিকেএন লিমিটেড সার কারখানার নামে ২ লাখ টাকার শেয়ার
১৩. একটি মাইক্রোবাস
এর বাইরে মেঘনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড, মেসার্স খোয়াজ ফার্টিলাইজার ও ফার্ম নেস্ট অ্যান্ড মিল প্রোডাক্টস লিমিটেড নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও মিজান ও নীপা সম্পৃক্ত আছে বলে দুদকের কাছে তথ্য আছে।
এই মিজানকে দায়মুক্তি দিয়েছিল দুদক:
২০১৫ সালের ১৫ জুন দুদকের তৎকালীন সচিব মাকসুদুল হাসান খান মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে জানান, সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে এসপি মিজানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মিজানের বিরুদ্ধে দুদক প্রধান কার্যালয় অনুসন্ধান শুরু করে ২০১২ সালে। অনুসন্ধান চলাকালে চার দফায় অনুসন্ধান কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়। শুরুতে অনুসন্ধান করেন উপ-পরিচালক গোলাম মোরশেদ। এরপর দায়িত্ব পান যথাক্রমে উপ-পরিচালক ফজলুল হক, হামিদুল হাসান ও আব্দুস সোবহান।
২০১১ সালে মিজানের বিরুদ্ধে মিজানের বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ অনুসন্ধান করেন দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম।
দুদক প্রধান কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১২ সালে অভিযোগ আসে ১৯৯৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মিজান দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকশ’ বিঘা স্থাবর সম্পত্তি কিনেছেন। স্ত্রী নীপার নাম দিয়ে ব্যবসা করেছেন, মালিক হয়েছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের।
২০১৫ সালের ২২ জুন মিজানের দায়মুক্তির বিষয়ে দুদকের তৎকালীন কমিশনার (তদন্ত) সাহাবুদ্দিন চুপ্পু গণমাধ্যমকে বলেন, অনুসন্ধানের পরও মিজানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করার মতো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ দাখিল করে সুবিধা নেন সিআইডি’র সাবেক প্রধান শেখ হিমায়েত:
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করে দাখিল করা সাময়িক সনদ ভুয়া প্রমাণ হওয়ায় গত ৮ মে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শেখ হিমায়েত হোসেন মিয়াকে অবসরে পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তদন্তে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণ হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মিথ্যা তথ্য দিয়ে সম্মানী ভাতা নেওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল শেখ হিমায়েতকে সিআইডি থেকে পুলিশ অধিদফতরে বদলি করা হয়। ২০০৯ সালের ১০ জুন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সাময়িক সনদ পান তিনি। সনদে তার ঠিকানা ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার কাশিয়ানি গ্রাম।
শেখ হিমায়েত বিসিএস ক্যাডারে ১৯৮৪ সালের ১ জুলাইয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পুলিশে যোগ দেন। জন্ম তারিখ অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর তার বয়স ছিল ১১ বছর ৬ মাস ২৬ দিন। শিক্ষা সনদ, পূরণ করা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা অংশ নেওয়ার আবেদনপত্র, সরকারি কর্ম কমিশনের গেজেটে তার নাম শেখ হিমায়েত হোসেন মিয়া। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার সাময়িক সনদে নামের শেষে মিয়া উল্লেখ নেই।
পুলিশ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামকে দায়মুক্তি দেয় দুদক:
এসপি মিজানের মতো ২০১৫ সালে আরেক পুলিশ কর্মকর্তাও দুদক থেকে দায়মুক্তি পেয়েছিলেন। ওই বছরের ১৫ জুন দায়মুক্তির বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দিয়ে জানায় দুদক।
তবে দায়মুক্তির এক বছরের মধ্যেই দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত হয়েছিলেন মিজান। আর তিন বছরের মধ্যেই মিজান ও তার স্ত্রী দুদকের মামলায় আসামিও হন। তবে দায়মুক্তি পাওয়া পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ডিআইজি (প্রোটেকশন) রফিকুল ইসলাম আর নতুন করে আলোচনায় আসেননি। রফিকুলের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে ২০১৪ সালে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। সে সময় দুদকের কাছে তথ্য ছিল চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া বাজারে সরকারি খাস জমিতে টিনশেড বাড়ি আর কিছুই ছিল রফিকুলের। ১৯৮৬ সালে পুলিশে যোগ দেন তিনি। শুধু রফিকুল নয়, তার স্ত্রী শিরীন আক্তারও বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে দুদকের অভিযোগ থেকে জানা যায় সে সময়।
রফিকুল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ঢাকা ও ময়মনসিংহে যত সম্পদ থাকার অভিযোগ ওঠে :
১. রফিকুলের নামে ময়মনসিংহের নাবিবহর মৌজায় ৮০/৮৭৭. ৮৭৮, ৮৭৯, ৮৮১ ও ৮৮৩ নম্বর দাগে ৭৪ শতাংশ জমি, যার আনুমানিক মূল্য ৩২ লাখ টাকা।
২. মুথাজুড়ি মৌজার ছলংগায় ১২ বিঘা জমি। আনুমানিক মূল্য দেড় কোটি টাকা।
৩. একই মৌজায় আরও ২৪ শতাংশ জমি। আনুমানিক মূল্য ৩৬ লাখ টাকা।
৪. কড়ইচালায় ২০ বিঘা জমি। আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
৫. ফুলবাড়িয়া উত্তরপাড়ায় ২৪ শতাংশ জমি। আনুমানিক মূল্য ৩৬ লাখ টাকা।
৬. মুথাজুড়ি বাজার সংলগ্ন ২১২১ নম্বর দাগে ১০০ শতাংশ জমি। আনুমানিক মূল্য ৮০ লাখ টাকা।
৭. একই মৌজার ২৪৭৩ নম্বর দাগে ১৭৫ শতাংশ জমি। আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৭৫ হাজার টাকা।
৮. ২২৪২ নম্বর দাগে ১৪২ শতাংশ জমি। আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
৯. রফিকুলের স্ত্রী শিরীন আক্তারের নামে মুথাজুড়ি মৌজার ৩০০৩, ৩০০৪, ৩০১১ ও ২০১২ নম্বর দাগে (ফুলবাড়িয়া দক্ষিণপাড়া কসাইর চালা) ৮ বিঘা জমি। আনুমানিক মূল্য ৬ কোটি টাকা।
১০. রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে তিনটি ফ্ল্যাট।
১১. উত্তরায় আরও একটি ফ্ল্যাট।
২০১৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর রফিকুলকে দুদকে তলব করা হয়। আর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ২১ ডিসেম্বর। জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদক উপ-পরিচালক মো. হামিদুল হাসান। অনুসন্ধান শেষে তাকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করেন তিনি।
রফিকুল ইসলাম এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা, যার বিরুদ্ধে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ওঠার পরও প্রমাণ করা যায়নি।
বারবার গণমাধ্যমে আলোচিত হওয়ার কারণেই কি দায়মুক্তি দিয়েও এসপি মিজানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে দুদককে? এসব প্রশ্নের উত্তর নেই। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে আগ্রহ দেখাননি কোনও দুদক কর্মকর্তা।
পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ খোদ সংসদ সদস্যের:
চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়ার পর সুনামগঞ্জের নৌপথগুলো থেকে নৌ-পুলিশ প্রত্যাহারের দাবি জানান স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানান তিনি।
মাদক ব্যবসায় পুলিশ:
মাদক ব্যবসা এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসূত্রের অভিযোগে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপ-পরিদর্শক কৃপা সিন্ধুকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি।
বগুড়ায় ব্যবসায়ীকে মারধর করে টাকা আদায়ের অভিযোগ:
ব্যবসায়ী সোহান বাবু আদরের কাছে ১১ লাখ টাকা দাবি করে আলোচিত হয়েছেন বগুড়া সদর থানা চার পুলিশ সদস্য। ব্যবসায়ী বাবু দাবি করা টাকা না দেওয়ায় নির্যাতনের শিকার হন। পরে ২০ হাজার টাকা এবং সাদা কাগজে সই রেখে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে। এর সঙ্গে জড়িত চার পুলিশ সদস্য হলেন এসআই আব্দুল জোব্বার, এএসআই মো. এরশাদ, এএসআই নিয়ামত উল্লাহ ও কনস্টেবল এনামুল হক। গত ১৬ জুন সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তাদের।
বাগেরহাটে এসআই স্বপনের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ:
বাগেরহাটে পুলিশের এসআই নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় অ্যাডমিট কার্ড বিতরণে প্রার্থীদের কাছ থেকে ৫শ’ টাকা করে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে চিতলমারী থানার এসআই স্বপন সরকারকে বাগেরহাট পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয় গত ১৬ জুন। পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় তাকে ক্লোজ করার এ নির্দেশ দেন।
এ রকম হাজার হাজার অভিযোগ আছে পুলিশের বিরুদ্ধে। বিভাগীয় শাস্তি (লঘুদণ্ড ও গুরুদণ্ড) হলেও খুব একটা চাকরি যায় না তাদের।
পুলিশ সদস্যদের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, যারা এ ধরনের দায়িত্বে থাকেন এবং সেই দায়িত্বের তদারকিতে যারা থাকেন তাদের কাজ হলো কে কীভাবে দায়িত্ব পালন করছেন সেটা খতিয়ে দেখা, নজরদারি রাখা। যদি কোনও অভিযোগ আসে দ্রুততম সময়ে সেই অভিযোগের সুরাহা করাও জরুরি। এই কাজগুলো যথাযথভাবে করা হয়নি বলেই আজকে মিজানদের মতো দুর্নীতিবাজ ও অপরাধপ্রবণ মানুষ পুলিশ বাহিনীতে ঢুকে গেছে, জায়গা করে নিচ্ছে। প্রশ্রয় আছে বলেই মিজানদের দুর্নীতি লাগামহীন হয়েছে।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়লে দুর্নীতির প্রবণতা কমবে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, ‘পুলিশের কেউ কেউ দুর্নীতিবাজ, অপরাধপ্রবণ। সব পুলিশ দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ঢালাওভাবে বলা যাবে না। এখন গণমাধ্যম শক্তিশালী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নানা বিষয় উঠে আসে। ফলে সব ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতির তথ্যও প্রকাশ ও প্রচার হয়।
তিনি বলেন, ডিআইজি মিজানদের মতো যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে অন্যরা ভয় পাবে। দুর্নীতি, অপরাধের প্রবণতা কমবে।সূত্র:বাংট্রিবিউন।