নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরা পৌরসভার সচিব সাইফুল ইসলামসহ তিন জনের বিরুদ্ধে জমি জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে। পাঁচজন কাউন্সিলর ও কয়েকজন পৌরসভার কর্মীকে নিয়ে এ জবরদখল করা হয়। জবরদখলে বাধা দেওয়ায় ফকরুল ইসলাম সাগর নামের এক জমির মালিককে মারপিট করা হয়েছে। পলাশপোলের ফকরুল ইসলাম সাগর জানান, ১৯২৬ সালের ২৯ অক্টোবর জাবদান বিবির কাছ থেকে ৩৯৫১ নং দলিল মুলে ৬২০৮ দাগে ৩ দশমিক ৬৪ একর ও ৬২০৯ দাগে দশমিক ৩৪ একর পুকুর কেনেন তার দাদা আক্কাজ আহম্মেদ খান ও তার ভাই আলী আহম্মদ খান। জালিয়াতির মাধ্যমে এসএ রেকর্ডে নিজেকে জমির মালিক ও একক ওয়ারেশ দেখিয়ে দু’ দাগের ৩.৯৮ একরের মধ্যে ৩ দশমিক ৮০ একর জমি বিক্রি করেন আলী আহম্মদ খান। আমির আলী ৬২০৯ দাগের ৩৪ শতক পুকুরসহ মোট ৬৫ শতক জমি কেনেন আলী আহম্মদের কাছ থেকে। জমির রেকর্ড অনুযায়ি ১৭ শতক পুকুরের অংশের মালিক হন আলী আহম্মদ। যদিও আমির আলীর কেনা সমগ্র পুকুর থেকে আট শতক স্টেডিয়াম তৈরির জন্য অধিগ্রহণ করা হয়। আট শতক অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপুরন বাবদ সরকারি টাকা নেন আমির আলী। তা হলে আলী আহম্মেদের কাছ থেকে পুকুরের অংশ কেনার পর আমির আলীর ভাগে থাকে সাড়ে আট শতক। অথচ ২০১১ সালে আমির আলীর কাছ থেকে পুকুরের অংশ সাড়ে আটক শতকের স্থলে সাতক্ষীরা পৌরসভার সচীব সাইফুল ইসলামের স্ত্রী সোনিয়া খাতুন, হিসাব রক্ষব জোহর আলীর স্ত্রী আম্বিয়া খাতুনের নামে ও অবসরপ্রাপ্ত সহকারি প্রকৌশলী এমএম নূর মোহাম্মদ সাড়ে ১৬ শতক পুকুরের অংশ কিনে কখনোই দখলে যাননি। ফকরুল ইসলাম সাগরের অভিযোগ, পৌরসভার সচীব সাইফুল ইসলাম, জোহর আলী ও নুর মোহাম্মদ কিছু দিন আগে দলিল মূলে জমি দখলে যেতে চাইলে তারা সাড়ে আট শতকের বেশি জমি পাবেন না বলে তাদেরকে অবহিত করেন। একপর্যায়ে তিনি বাদি হয়ে সাতক্ষীরা সদর সহকারি জজ আদালতে বাটোয়ারা মামলা করেন। জমি জবরদখলের চেষ্টা করায় সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারার মামলা করলে সদর সহকারি ভূমি কমিশনার বিরোধপূর্ণ জমি উভয়পক্ষের দখলে বলে উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। বিবাদী পক্ষ সাইফুল ইসলামের স্ত্রীসহ তিনজন জবাব দাখিলের জন্য আবেদন করলে পরবর্তী ১৭ সেপ্টম্বর দিন ধার্য করা হয়। তিনি আরো জানান, সোনিয়া, আম্বিয়া ও নূর মোহাম্মদের নামে দলিল অনুযায়ি জমি নামপত্তন হওয়ায় তিনি সদর সহকারি ভূমি কমিশনার অফিসে নামপত্তন বাতিলের জন্য ১৫০ ধারায় আবেদন করেন। তামাদির কারণে আবেদন খারিজ হলে তিনি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর আদালতে আপিল (১২৩/১৮)করেন। আদালতে মামলা চলমান থাকায় দেওয়ানী মামলার কার্যক্রম নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ১২৩/১৮ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন। মামলা থাকার পরও পৌরসভার কাউন্সিলর সৈয়দ মাহমুদ পাপা, সাইফুল ইসলামসহ কয়েকজন মিলে এড. কুদরত ই মজিদের মাধ্যমে তারা জমির অংশ নিয়ে বসাবসি করেন। কুদরত ই মজিদ অংশ অনুযায়ি সাইফুল ইসলামসহ তিন জন আমির আলীর কাছ থেকে যে পরিমান জমি কিনেছেন তা যথাযথ হয়নি বলে জানিয়ে দেন। এরপরও সাতক্ষীরা পৌরসভায় একটানা ১৮ বছরের রাম রাজত্ব করা সচীব সাইফুল ইসলাম প্রশাসনে প্রভাব খাটিয়ে পৌরসভার কাউন্সিলরদের নিয়ে জমি জবরদখলের উদ্যোগ নেন। শুক্রবার সকালে ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ মাহমদু পাপা, ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফিরোজ আহম্মেদ, ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সেলিম হোসেন, ৯ নং ওয়ার্ড শফিক উদ দৌলা সাগর, ফারহা দিবা খান সার্থীসহ পৌরসভার কয়েকজন মাষ্টার রোলে কর্মরত কর্মীদের উপস্থিতিতে জমি দখলের জন্য শ্রমিক দিয়ে সিমেন্টের পিলার বসিয়ে পরে কাটা তারের বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু করেন সাইফুল ইসলাম। বাধা দেওয়ায় তাকে মারপিট করা হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা করান। এ সময় সদর থানার পুলিশকে জবরদখলকারিদের সঙ্গে একান্তে কথা বলতে দেখা যায়। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জমি দখল করার একপর্যায়ে উপরোক্ত পাঁচজন কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে পৌরসভার সচিব সাইফুল ইসলাম ও কাউন্সিলরদের কাছে এ প্রতিবেদক ও স্বদেশ এর নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত জানতে চাইলে তারা জানান, পুকুর ভরাট করা জমি তাই বেশ কিছু দিন পর ঘেরা দেওয়া হচ্ছে। তবে শুক্রবার রাত ৭টা ৫২ মিনিটে সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কয়েক বার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা চেষ্টা করা হলে তিনি তা রিসিভ করেননি। রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে জহুর আলীর ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। তবে রাত ৮টায় পৌর কাউন্সিলর শফিক উদ দৌলা বলেন, ফকরুল ইসলাম সাগরকে মারপিটের ঘটনা ঠিক নয়। যদিও পরে তিনি বলেন তার বিষয়টি জানা নেই। তাছাড়া কাগজপত্র অনুযায়ি সাইফুল ইসলামগণ জমি পাবেন তাই ঘেরা দেওয়ার সময় দেখতে এসেছেন। মামলা আছে এরপরও কেন জমি ঘিরতে হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শনিবার থানায় বসাবাসি আছে। সেখানেই উভয়পক্ষের কাগজপত্র দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক হাজ্জাজ মাহমুদের কাছে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।