স্বাস্থ্য ও জীবন: শুরু হয়েছে বর্ষা ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়তে শুরু করেছে। ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত একটি ভাইরাস রোগ। গৃহপালিত এ মশা ঘরে, চৌকির নিচে, পর্দার ভাঁজে, বেসিনের নিচে লুকিয়ে থাকে। ছোট পাত্রে ৫ দিনের কম জমে থাকা পানিতে এ মশা বংশ বিস্তার করে।
এডিস ইজিপ্টি মশা জঙ্গলে থাকে না। রাতে কামড়ায় না। গায়ে দাগকাটা মশাগুলো একবারে অনেককে কামড়াতে পারে। ম্যালেরিয়া মশার মতো একজনের রক্ত খেয়েই পরে থাকে না।
এছাড়া নর্দমায় নয়, ডোবায় দিনের পর দিন জমে থাকা ময়লা পানিতে নয়, নদী, সাগর, বিলের পরিষ্কার বহমান পানিতে নয়; এই মশা বংশবিস্তার করে ফুলের টবের নিচের জলকান্দার পানিতে, বৃষ্টির দিনে রাস্তার ধারে জমা পানি, নির্মাণসামগ্রীতে থাকা পানি, পেপসির ক্যান, নারিকেলের খোলায় জমা পানিতে।
ডেঙ্গুজ্বর:
অন্য ভাইরাস জ্বরের মতো ডেঙ্গুজ্বর সাত দিনের বেশি থাকে না। একটানা উচ্চ তাপমাত্রা থেকে ছয় দিনের দিন জ্বর চলে যেতে পারে। দু’দিন পর একদিন জ্বর না থেকে আবার দু’দিনের জ্বর (স্যাডল ব্যাক ফিভার) থাকলে তারপর জ্বর চলে গেল তাও হতে পারে। অন্য ইনফেকশন না হলে, এক্সটেন্ডেড না হলে ডেঙ্গুজ্বর ছয় দিনের বেশি থাকে না।
ব্যথা:
সব জ্বরে বিশেষ করে ভাইরাস জ্বরে গা ম্যাজম্যাজ করে, ব্যথা করে। ডেঙ্গুতে ব্যথা বেশি হয়। অনেকের এত বেশি হয় যে এটাকে হাড় ভাঙার ব্যথার (ব্রেকিং বোন ডিজিস) সঙ্গে তুলনা করে। ডেঙ্গুতে চোখের পেছনে (রেট্রাঅরবিটাল পেইন) হয়।
রক্তক্ষরণ:
চামড়ায়, মুখে, খাদ্যনালিতে, চোখে হতে পারে। তবে বেশি যেটা হয় সেটা হল মেয়েদের। মাসিক একবার হয়ে গেলেও একই মাসে আবার মাসিক হয়।
দানা (র্যাশ):
ডেঙ্গুর টিপিক্যাল র্যাশ বেরোয় জ্বরের ষষ্ঠ দিনে। তখন জ্বর থাকে না। এজন্য এটাকে কনভালেসেন্ট কনফ্লুয়েন্ট পেটিকিয়াল র্যাশ বলে। পায়ে বা হাত থেকে শুরু হয়- দেখলেই চেনা যায়, খুঁজতে হয় না। ডেঙ্গুতে অন্য র্যাশ হতে পারে সেগুলো টিপিক্যাল নয়। আরেকটা জিনিস হয় জ্বরের প্রথমদিকে- গায়ে চাপ দিলে আঙুলে ছাপ পড়ে অর্থাৎ ফ্লাশিং হয়।
চিকিৎসা:
অন্য জ্বরের মতো প্যারাসিটামল দিয়ে জ্বর নামিয়ে রাখতে হবে। জ্বর নামিয়ে ১০০ রাখলেই চলবে। ৯৭ করার দরকার নেই। প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য ওষুধ ব্যবহার করা উচিত না। এনএসআইডি-(ডাইক্লোফেনাক, ইন্ডোমেথাসিন) দ্রুত জ্বর নামিয়ে, ঘাম ঝরিয়ে শকে নিতে পারে, কিডনির ক্ষতি করতে পারে। খাদ্যনালিতে রক্তক্ষরণ ত্বরান্বিত করে জীবনের ঝুঁকি ডেকে আনতে পারে। সাপোজিটরি নিলে শুধু প্যারাসিটামল, অন্য কিছু নয়। চার ডোজে ভাগ করে প্রতিবারে পাঁচশ’ মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল খাওয়া উচিত তার পরেও ১০২-এর বেশি থাকলে একবারে তৎক্ষণাৎ এক হাজার মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে।
পানি:
কয়েকদিন তিন লিটার পানি পান করতে হবে। এটা খুবই দরকার। প্রয়োজনে স্যালাইন নিতে পারলে ভালো। আসলে প্যারাসিটামল ও পানিই ডেঙ্গুর আসল চিকিৎসা।
নিউট্রিশন:
জ্বরের সময় ক্ষুধামন্দা হয়, বমি লাগে। ফলের রস উপকারী পানি এবং অল্পতে বেশি ক্যালরি পাওয়া সম্ভব। স্বাভাবিক খাবার খেতে হবে।