খেলার খবর: বিশ্বকাপে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে রোমাঞ্চকর কিছু মিললো না শেষ পর্যন্ত। একপেশে লড়াইয়ে বরং ভারত ক্যারিবীয়দের ১২৫ রানে হারিয়ে এক পা দিয়ে রাখলো সেমিফাইনালে।
৬ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে ভারত। আর একটি পয়েন্ট পেলেই সেমি নিশ্চিত তাদের। অস্ট্রেলিয়া ৭ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে, তারা আগেই নিশ্চিত করেছে সেমিফাইনাল। সমান ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে তিনে নিউজিল্যান্ড। সমান ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইংল্যান্ড।
ম্যানচেস্টারে ২৬৯ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোরের তাড়ায় শুরু থেকে সুস্থির দেখা যায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। বরং গতি দিয়ে ক্রিস গেইল আর সুনীল আম্ব্রিসকে বিব্রত করার চেষ্টা করেছেন ভারতীয় পেসাররা। তাতে পঞ্চম ওভারেই মেলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য।
ব্যাটিং দানব গেইলকে ৬ রানে বিদায় দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে একভাবে চেপে ধরা শুরু মোহাম্মদ সামির। পরে শাই হোপকে বোল্ড করে নিজের আধিপত্যটা জানান দেন আরও। সুনীল আম্ব্রিস কিছুক্ষণ রুখে খেলার চেষ্টা করলেও ৩১ রানের বেশি করতে পারেননি। তাকে বিদায় দিয়ে ক্যারিবীয়দের দুর্দশা বাড়িয়ে দেন পান্ডিয়া।
এরপর শুধু আসা-যাওয়ার মিছিল ছিল ক্যারিবীয় শিবিরে। ভারতীয় বোলিংয়ে থিতু হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়নি তাদের মাঝে। নিকোলাস পুরানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯ রান ছাড়া পরের ব্যাটসম্যানরা ছিলেন শুধু আসা-যাওয়ার মাঝে।
হার্ড হিটার ব্র্যাথওয়েটও ছিলেন আজ বাক্সবন্দী। বুমরাহর বলে ধোনিকে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে ক্যারিবীয়দের ইনিংসের সমাপ্তিটা দ্রুততর হয়ে যায় আরও। শেষ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩৪.২ ওভারে গুটিয়ে যায় ১৪৩ রানে। হয়তো আরও আগেই গুটিয়ে যেতো তারা। শেষ দিকে ভারতের ফিল্ডিং মিসের মহড়ায় স্কোর বোর্ড বাড়িয়ে নেন কেমার রোচ (১৪) ও ওশানে থমাস (৬)। থমাসকে ফিরিয়েই ক্যারিবীয়দের গুটিয়ে দেন সামি।
৬.২ ওভারে ১৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সেরা ছিলেন সামি। দুটি করে নেন বুমরাহ ও চাহাল। একটি করে নেন পান্ডিয়া ও যাদব।
শুরুতে টস জিতে ভারতের ব্যাটিংয়ে নামার সময় রান উৎসবের প্রত্যাশা করেছিলেন অনেকে। কিন্তু ক্যারিবিয়ানদের চমৎকার বোলিংয়ে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি ভারত। অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও মহেন্দ্র সিং ধোনির হাফসেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে তারা করে ২৬৮ রান।
এমন রান সংগ্রহে অবশ্য শুরু থেকেই ক্যারিবীয়দের বোলিংয়ে চাপে পড়ে যায় ভারত। ২৯ রানে তারা হারায় প্রথম উইকেট। রোহিত শর্মাকে ১৮ রানে ফিরিয়ে ক্যারিবিয়ানদের প্রথম সাফল্য এনে দেন কেমার রোচ। অবশ্য রোহিতের এই আউট নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বল প্যাড নাকি ব্যাটে লেগেছে এমন একটা সন্দেহজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। রিভিউতে অবশ্য আম্পায়ার বলেছেন ব্যাটে লেগে গেছে বল! ওই ধাক্কার পর মন্থর ব্যাটিংয়ে রান চাকা শ্লথ হয়ে পড়ে ভারতের। তবে শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সাবধানী ব্যাটিং করেন লোকেশ রাহুল ও অধিনায়ক কোহলি।
তাদের ব্যাটে কিছুক্ষণ প্রতিরোধ গড়লেও জেসন হোল্ডারের বলে লোকেশ রাহুল ফিরে গেলে ভারত হারায় দ্বিতীয় উইকেট।
৪৮ রান করা লোকেশ বোল্ড হলে কোহলির সঙ্গে তার গড়া ৬৯ রানের জুটি ভাঙে। চার নম্বরে নামা বিজয় শঙ্কর তার কার্যকারিতার প্রমাণ দিতে ব্যর্থ। রোচের শিকার হয়ে ফেরেন ১৪ রানে।
এই রোচের বলেই কেদার যাদব (৭) প্যাভিলিয়নে ফিরলে কঠিন চাপে পড়ে যায় ভারত। যদিও কোহলি-ধোনির প্রতিরোধে সেটা কাটিয়ে উঠে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫৩তম হাফসেঞ্চুরি পূরণ করে দলের সঙ্গে ব্যক্তিগত রানও বাড়িয়ে নেন কোহলি। কিন্তু হোল্ডারের বলে পুল করতে গিয়ে বাজেভাবে আউট হয়ে ফেরেন ভারতীয় অধিনায়ক। ৮২ বলে ৮ বাউন্ডারিতে খেলে যান ৭২ রানের ইনিংস।
কোহলির আউটের পর ভারতের বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। ধোনির সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ৭০ রানের জুটি গড়েন তিনি। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে হাফসেঞ্চুরির পথেও হাঁটছিলেন এক সময়। কিন্তু শেলডন কট্রেলের বলে ৩৮ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৪৬ রানে থামতে হয় তাকে।
তবে একপ্রান্ত আগলে ছিলেন ধোনি। ক্যারিবিয়ান উইকেটরক্ষক শাই হোপের ‘সৌজন্যে’ বেঁচে যাওয়া সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক ৭২তম ওয়ানডে হাফসেঞ্চুরি করে অপরাজিত থাকেন ৫৬ রানে। ৬১ বলের ইনিংসটি ধোনি সাজান ৩ চারের সঙ্গে ২ ছক্কায়। তার ব্যাটে ভর করেই শেষ পর্যন্ত ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ২৬৮ রান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে সফল বোলার কেমার রোচ। এই পেসার ৩৬ রান খরচায় পেয়েছেন ৩ উইকেট। ২টি করে উইকেট পেয়েছেন কট্রেল ও হোল্ডার।ম্যাচসেরা বিরাট কোহলি।