নিজস্ব প্রতিনিধি : নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের থানাঘাটায় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে উঠেছে কয়েকটি পোল্ট্রি মুরগির খামার। আবাসিক এলাকায় গড়ে তোলা এসব খামারের মুরগির বিষ্ঠা ও মরা মুরগির পচা দুর্গন্ধে ওই এলাকায় বসবাস করা দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। এনিয়ে খামার মালিকদের কয়েক দফায় অভিযোগ করা হলেও তারা এলাকাবাসীর সে অভিযোগ কর্ণপাত করেননি। এলাকাবাসীর অভিযোগ ও সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে থানাঘাটা শেখপাড়া এলকার শেখ ইব্রাহিমের জমি ইজারা নিয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিশালাকার খামার গড়ে তুলেছেন তারই জামাতা ইব্রাহিম হোসেন (জামাই শ^শুর দুজনের নাম একই) ও মথুরাপুর মোড়ের আফতাবুর রহমান (আফতু)। তাদের খামারের একপ্রান্তে ছোট একটি জলাধার আছে যেখানে খামারের বর্জ্য ফেলানো হয়। মুরগির বিষ্ঠা ও জলাধারে ফেলানো বর্জ্য পচে এলাকায় বিকট দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে। সে দুর্গন্ধ এতটাই প্রকট যে ওই এলাকা এখন রিতিমতো বসবাস করার অনুপোযোগী হয়ে উঠেছে। এলাকার কেউ তাদের ঘরের দরজা জানালা ঠিকঠাক খোলা রাখতে পারেন না। পারেন না খাওয়া-দাওয়া করতে। ‘জাতীয় পোল্ট্রি উন্নয়ন নীতিমালা-২০০৮’-এ বাণিজ্যিক পোল্ট্রি খামার ঘনবসতি এলাকা ও শহরের বাইরে স্থাপন, একটি বাণিজ্যিক খামার থেকে আরেকটি খামারের দূরত্ব কমপক্ষে ২শ মিটার হওয়া, খামার স্থাপনের পূর্বে পশুসম্পদ অধিদপ্তরের অনুমতি নেওয়া, সাস্থ্যসম্মত উপায়ে বর্জ্য অপসারণসহ বেশ কিছু নিয়মের কথা বলা হলেও এগুলোর বেশিরভাগই অনুসরণ করা হয়নি এ খামারগুলোতে। মুরগির খামার থেকে মাত্র পাঁচ মিটারেরও কম দূরত্বে বসবাস ইমদাদুল ইসলামের। তিনি বলেন, ঘরের জানালা খুলিনা দীর্ঘদিন। তারপরও দুর্গন্ধে বসবাস করতে পারছিনা। প্রায়শই বমি হয়। বাড়ির নারী ও শিশুরা বেশি কষ্ট পায়। খামার মালিকদের বারবার বলেছি কিন্তু তারা আমাদের কথায় কর্ণপাত করেনা। তাদের একটায় কথা খামারের পাশে থাকলে একটু আধটু গন্ধ সহ্য করতে হবে। একই এলাকার শেখ আবুল কাশেম, শমসের আলী, রবিউল ইসলাম, আনোয়ারা বেগম, রুখসানা বেগমসহ আরো অনেকে বলেন, দুর্গন্ধের কারণে মাঝে-মাঝে মনে হয় বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু যাবো কোথায়? দুর্গন্ধ সহ্য করতে করতে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছি। এসব বিষয়ে খামার মালিকদের বললে তারা বলেন, আমাদের ইজারা নেওয়া জায়গায় আমরা ব্যবসা করছি। আপনাদের সমস্যা কোথায়! এ বিষয়ে খামার মালিক ইব্রাহিম ও আফতাবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, আগে খামারেরর পাশে গর্তে বর্জ্য ফেলতাম সে কারণে দুর্গন্ধ ছড়াতো। এখন মুরগির বিষ্ঠা ও বর্জ্য ওখানে ফেলায় না। দুর্গন্ধ দূর করার জন্য মেডিসিন ব্যবহার করবো। জাতীয় পোল্ট্রি উন্নয়ন নীতিমালা অনুসরণ না করে খামার করার ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা বলেন, নীতিমালা সম্পর্কে কিছু জানিনা। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা লাইফ স্টক অফিসার ডা. প্রদীপ কুমার মজুমদার বলেন, আমরা পোল্ট্রি খামারগুলো সরেজমিনে দেখে তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার সহকারী পরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, জনবসতিপূর্ণ এলকায় পোল্ট্রি খামারের বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। কেউ অভিযোগ করেনি। শীঘ্রই ওই পোল্ট্রি খামারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।