ডেস্ক রিপার্ট : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ৪৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম পিয়ন পদে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের দিনই গতকাল নিয়োগ চূড়ান্ত করে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে নিয়োগ তালিকা দেখে অনেকেরই চক্ষু চড়কগাছ! কেউ কেউ যেন টাকা দিয়ে বাঘের দুধ কিনে ফেলেছেন! উল্লেখ্য বহু প্রার্থী, প্রধান শিক্ষক এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল দৈনিক আজকের সাতক্ষীরায় সদর উপজেলার ৪৯টি প্রাথমকি বিদ্যালয়ের এই নিয়োগে প্রায় আড়াই কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের খবর প্রকাশ পাওয়ার পর তড়িঘড়ি করে নিয়োগ তালিকা টানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। এর আগে নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দরকষাকষিতে নিয়োগ তালিকা প্রকাশ উচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বিত করা হচ্ছিল বলেও অভিযোগ করেছেন অনেক প্রার্থী। নিয়োগ তালিকার ৩৭ নম্বরে থাকা শহরের বাটকেখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তার নাম মোঃ মমিনুর ইসলাম, পিতার নাম : মো: নুর ইসলাম, গ্রাম -বাগানবাড়ি, সাতক্ষীরা। নিয়োগ বোর্ডের সদস্য এবং ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো: শফিকুল ইসলাম দৈনিক আজকের সাতক্ষীরাকে নিশ্চিত করেছেন যে, মো: মমিনুর ইসলাম পরীক্ষাতেই অংশগ্রহণ করেননি। তিনি জানান, পরীক্ষায় বাটকেখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ জন নিয়োগপ্রার্থী উপস্থিত হয়েছিলেন। তারা হলেন শেখ আব্দুস সালাম, মোঃ হাসানুর রহমান এবং মোঃ রবিউল ইসলাম। এদের বাইরে কেউ পরীক্ষায় অংশ নেননি। অথচ নিয়োগ পেলেন মুমিনুরকে যাকে নিয়োগ বোর্ডে হাজির হতে হয়নি। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে মুমিনুরে পিতা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন। সাতক্ষীরা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আব্দুল হাকিম বলেন, “আমার এলাকা থেকে যারা নিয়োগ পেতে পরীক্ষা দিয়েছিলেন তাদের সকলকেই আমি চিনি। মুমিনুর এই পরীক্ষায় অংশই নেয়নি তাহলে তার খাতাপত্র কিভাবে তৈরি হলো আর সে কিভাবে নিয়োগ পেল। স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের বঞ্চিত করে স্বাধীনতাবিরোধীদের পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যারা এই নিয়োগ দিচ্ছেন তারা শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাস করেন না। তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করেন না।” বাটকেখালী স্কুলে নিয়োগ প্রার্থী শেখ আব্দুস সালাম, মোঃ হাসানুর রহমান এবং মোঃ রবিউল ইসলাম দৈনিক আজকের সাতক।ষীরাকে নিশ্চিত করেন যে, তারা তিনজন ছাড়া আর কেউই ওইদিন নিয়োগ বোর্ডের সম্মুখে উপস্থিত হননি। মমিনুর যদি হাজির হতেন তাহলে তারা অবশ্যই জানতেন। নিয়োগ বোর্ডে থাকা আরেক সদস্য ইনামুল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি মমিনুর নামে কেউ ওইদিন হাজির ছিলেন এমনটি নিশ্চিত করতে পারেননি। তিনি পেন্সিল দিয়ে নম্বর দিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে জানান ইউএনও সাহেব তাকে তেমনিটিই নির্দেশ দিয়েছিলেন। পেন্সিল দিয়ে নম্বরদিতে এবং কলম দিয়ে স্বাক্ষর দিতে তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এসকল তুঘলকি কা- কিভাবে ঘটল তা জানতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মোঃ নূর হোসেন সজল দৈনিক আজকের সাতক্ষীরাকে বলেন, এমনটিতো হওয়ার কথা নয়। তবে দাপ্তরিক বিষয় এবং আবেদনপত্র সংরক্ষণ সকল বিষয়ের দায়িত্ব উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সুতরাং বিষয়টি তিনিই বলতে পারবেন। অন্যদিকে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ বলেন, আমি কাগজপত্র না দেখে বিষয়টি বলতে পারছি না। পরে খোঁজখবর নিয়ে জানাতে পারব। তবে পরীক্ষা না দিয়ে নিয়োগ পাওয়ার এ অভিযোগ সত্য হলে বলতে হবে টাকা দিয়ে সত্যিই বাঘের দুধ কিনতে পেরেছেন মমিনুর।