রাজনীতির খবর: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নিয়ে তার সাবেক স্ত্রী বিদিশা ফেসবুকে ‘আমাদের অসমাপ্ত প্রেম’ শিরোনামে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। বিদিশা তার নিজ ফেসবুক আইডির টাইমলাইনে এই স্ট্যাটাস দেন। এতে লন্ডনে এরশাদের সাথে বিয়েতে আবদ্ধ হওয়া এবং পরবর্তীতে এরশাদের সাথে রোমান্টিক সময় কাটানোর কিছু মুহূর্তের বর্ণনা দেন তিনি।
এতে উঠে আসে, ৪০ বছরের বড় এই রাজনীতিবিদকে বিয়ের করে জীবনে কোন মুহূর্তের জন্য নিজেকে একা মনে করেননি বিদিশা। যদিও দীর্ঘ আলোচনা সাপেক্ষে তাদের বিয়ে হয় লন্ডনে। বিয়ের পর অল্প দিনের সংসার জীবনে স্বামী এরশাদের সাথে সময়টা বড্ড ভালো কেটেছে বিদিশার, এমনটাই ফেসবুকে লিখেছেন তিনি।
এরশাদে প্রশংসা করেই ক্ষান্ত হননি বিদিশা, তিনি লিখেছেন, অকল্পনীয় রোমান্টিক এই মানুষকে আমার অসাধারণ লাগে, এবং প্রাণোচ্ছ্বল এরশাদের মুখে বয়সের ছাপ, রোগাক্লান্ত, হাসপাতালে আইসিউতে মৃত্যুশয্যায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন, বিশ্বাস করুন সবাই তা মেনে নিচ্ছে। কিন্ত আমি তো তা মেনে নিতে পারবো না। এরশাদ তোমায় ফিরে আসতে হবে আমাদের মাঝে। আমরা তোমাকেই চাই।
বিদিশার এই দীর্ঘ ফেসবুক স্ট্যাটাসটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো:
‘আমাদের অসমাপ্ত প্রেম’
৪০ বছরের বেশি ব্যবধান আমাদের দু’জনের বয়সের। কিন্তু একদিন ও উনি আমাকে তা বুঝতে দেননি সেই পার্থক্যটা। আমাদের বিয়ে আগে আমরা engaged হই London এ। উনি নিজেই একটা হীরের আংটি কিনে আনেন london এর এক দোকানে গিয়ে।
সেই দিন উনি আমার কাছে থেকে কথা নেন মৃত্যু ছাড়া যেন আমরা আলাদা না হই। আজও আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমার নিজের ফ্লাটে তখন আমরা বেশ কিছু দিন লন্ডন ছিলাম। বিএনপি ক্ষমতায় তখন আমরা দেশ ছাড়া। উনি খুশী হননি এত ছোট হীরের আংটি কিনে। আর আমি তো উনার ব্যবহার দেখে খুশী তে আত্মহারা। ঠিক পরের বছরই উনি বিয়ের দিন নিজের হাতের ২ ক্যারেটের আংটি খুলে আমাকে পড়িয়ে দিয়ে বললেন, আমার বন্ধু সৌদি বাদশার দেওয়া এই আংটি আজ আমি আমার রাণীকে দিলাম। খুব অল্প কয়টা বছর আমাদের প্রেম, সংসার হয়েছিল । এত ভালো বাসতে পারে কেউ? বিএনপি ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলাম আমরা।
কোনো দোকানে আমি shampoo bottle খুলে গন্ধ বা সাবান ঘ্রাণ নিলে উনি পরের দিন কিনে নিয়ে আসতেন ওগুলো। আমি বিস্মিত হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে থাকলে বলতেন তোমার চুলে আমি গন্ধটা পেতে চাই। এমন কত যে অসংখ্য memories আছে আমাদের লিখে শেষ করা যাবে না তা।
গত কাল থেকে উনার বেশ জ্বর। হসপিটালের আইসিইউতে শুয়ে আছেন। রুগ্ন, ক্লান্ত শরীর। বয়সের ভারে tired। আর চলতে চায় না জীবন। অন্য সবাই মেনে নিয়েছে বয়সের কাছে হার মানা এরশাদকে। ফিসফিস করে সবাই কবরের কথা ও বলছে কানে আসছে আমার। কিন্তু আমি ও এরিক তো হার মানতে দিবো না তোমায়। আমরা তো রাজনীতি প্যাচ বুঝি না। এরিক জায়নামাজে পড়ে আছে কয়টা দিন। তুমি ছাড়া ও একা ভাত খেতে চায় না। শুধু তুমি ভালো ভাবে ফিরে এসো। আমরা তোমাকে এই চাই। তুমি যে অবস্থায় আছো তেমনি চাই।
আমরা ৩ জন শুধু। তুমি, আমি ও আমাদের এরিক। আর কেউ না। হসপিটাল থেকে ফিরে এসে বাড়িতে তুমি রেস্ট নিবে। এরিক গান শোনাবে তোমাকে, আমি piano বাজাবো বা তোমার প্রিয় ফিশফ্রাই রান্না করবো। সন্ধ্যায় আড্ডা দিবো। মা, বাবা ও ছেলে লুডু খেলবো। বা আমি নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে বাপ-ছেলেকে কাবাব খাওয়াতে নিয়ে যাবো খেলার বাজীতে হেরে গেলে। আজও কিন্তু আমি অপেক্ষায় থাকলাম নীল শাড়িটির ভাজ খুলবো এই আশায়।
বিদিশা
প্রসঙ্গত, এরশাদ এখন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন আছেন।