দেশের খবর: সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার রোধে ছয় মাসের মধ্যে নীতিমালা তৈরি করতে নির্দেশনা দিয়েছে হাই কোর্ট।
জনস্বার্থে করা একটি রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার রুলসহ এ আদেশ দেয়।
সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে প্রসবে সিজারিয়ান সেকশন (সি-সেকশন) রোধে কার্যকর তদারকি করতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে এই রুলে।
চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া নীতিামালা তৈরিতে বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের নিয়ে এক মাসের মধ্যে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে এ নির্দেশ দিয়ে আগামী ৫ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রাশনা ইমাম। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আয়েশা আক্তার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পূরবী রানী সাহা ও পূরবী রানী শর্মা।
প্রসবে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রতিবেদন উদ্বৃত করে বিভিন্ন সময় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের পক্ষে আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রোববারই রিট আবেদনটি করেন।
গত ২১ জুন প্রকাশিত সেভ দ্য চিলড্রেনের একটি প্রতিবেদন থেকে উদ্বৃত করে আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে গত দুই বছরে শিশু জন্মের ক্ষেত্রে প্রসবকালীন অস্ত্রোপচারের হার বেড়েছে ৫১ শতাংশ। এতে বাবা-মায়েদের সন্তান জন্মদানে ব্যাপক পরিমাণে ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। এ ধরনের অস্ত্রোপচারে সন্তান জন্মদানে নানা ঝুঁকিও রয়েছে।
অপ্রয়োজনীয় প্রসবকালীন অস্ত্রোপচার ঠেকাতে সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রতিবেদনে চিকিৎসকদের উপর নজরদারির যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, রিট আবেদনে সে বিষয়েও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
হাই কোর্টের আদেশের পর রাশনা ইমাম বলেন, “আদালত সংশ্লিষ্ট অংশীজন (স্টেকহোল্ডার) নির্দিষ্ট করে দেননি। কিন্তু সেভ দ্য চিলড্রেন, আইসিডিডিআর,বি থাকবে হয়ত। কারণ এরাই সি-সেকশন নিয়ে ক্যাম্পেইনটা করছে।
“স্টপ আননেসেসারি সি-সেকশন বলে যে একটি ক্যাম্পেইন চালু করা হয়েছে সেটা আইসিডিডিআর,বি আর সেভ দ্য চিলড্রেনের যৌথ একটা উদ্যোগ। আমার ধারণা, এরা থাকবেই।”
সন্তান প্রসবে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার রোধে চীন ও ব্রাজিলের উদাহরণ তুলে ধরে রাশনা ইমাম বলেন, “চীনে সি-সেকশনের হার বিশ্বের মধ্যে খুবই খারাপ অবস্থায় ছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে নতুন রুলস রেগুলেশন প্রণয়ন করার কারণে এটা কমছে। ব্রাজিলেও কমে এসেছে।”
দেশে ‘কোনো মনিটরিং ছাড়াই’ সিজারিয়ান করার কারণে প্রসূতির ‘অমানবিক মৃত্যু’ ঘটছে বলে দাবি করেন এই আইনজীবী।
তিনি বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী শতকরা ১০-১৫ ভাগের বেশি সি-সেকশন কোনো দেশেরই প্রয়োজন হতে পারে না। বাংলাদেশে সে হার ৩১ শতাংশ।
“বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ৮৩ শতাংশ এবং সরকারি হাসপাতালে এটার হার ৩৫ শতাংশ। এনজিও হাসপাতালগুলোতে ৩৯ শতাংশ। এই ক্রমবৃদ্ধিটা উদ্বেগজনক।” বাংলাদেশের সর্বশেষ জনমিতি ও স্বাস্থ্য সমীক্ষা অনুযায়ী, সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ১৯৬ জনের মৃত্যু হয়।