জাতীয়

ডিআইজি মিজান গ্রেফতার, তবে হাইকোর্টের নির্দেশে

By Daily Satkhira

July 01, 2019

দেশের খবর: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় সাময়িক বরখাস্ত পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. মিজানুর রহমানের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে তাকে পুলিশ হেফাজতে দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে সংশ্নিষ্ট বিচারিক আদালতে হাজির করতেও ঢাকার রমনা জোনের পুলিশের সংশ্নিষ্ট এডিসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সোমবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে এই আদেশ দেন। ওই সময় ডিআইজি মিজান আদালতে হাজির ছিলেন।

তার জামিন নাকচ করে হাইকোর্ট বলেন, ডিআইজি মিজানুর রহমানের কার্যক্রম ও বক্তব্য পুলিশের সুনাম ও ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। আদালত বলেন, ‘আমরা টিভিতে দেখেছি, (দুদকের একজন পরিচালককে) ঘুষ দেওয়ার ব্যাপারে সে ডেসপারেট বক্তব্য দিয়েছে। আমরা তাকে পুলিশের হাতে দিয়ে দিচ্ছি।’ পরে হাইকোর্টের লিখিত আদেশের কপি পাওয়ার পর সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে পুলিশের রমনা বিভাগের উপ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ডিআইজি মিজানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।

জানতে চাইলে পুলিশের উপ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, আদালতের নির্দেশে সাময়িক বরখাস্ত ডিআইজি মিজানুর রহমানকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাকে শাহবাগ থানায় রাখা হয়েছে। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, হাইকোর্ট নিম্ম আদালতে হাজির করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী মঙ্গলবার মিজানুর রহমানকে নিম্ম আদালতে হাজির করা হবে।

পুলিশ সূত্র জানায়, আদালতের নির্দেশের পর প্রায় এক ঘন্টা ধরে ডিআইজি মিজান আদালত কক্ষে অবস্থান করেন। ওই সময়ে পুলিশ তাকে ঘিরে রাখে। পরে আইনজীবীরা চলে গেলে পুলিশের পাহারার মধ্যে তাকে একটি গাড়িতে তোলা হয়। গাড়িটি সোজা শাহাবাগ থানায় চলে আসে। ডিআইজি মিজানকে ওই থানার একজন কর্মকর্তার কক্ষে সোফায় বসিয়ে রাখা হয়। আসামি হিসেবে তাকে থানায় নেওয়ার পর তিনি পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণই করছেন।

পুলিশের রমনা জোনের একজন কর্মকর্তা বলেন, মিজানুর রহমান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হলেও তিনি আসামি হিসেবে থানায় রয়েছেন। আসামির বাইরে তার অন্য কোনো সুবিধা নেওয়ার সুযোগ থানাতে নেই।

এদিকে একই মামলার আরেক আসামি ডিআইজি মিজানের ভাগ্নে পুলিশের এসআই মাহমুদুল হাসানের আগাম জামিনের আবেদনও খারিজ করেছেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। তাকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালতে ডিআইজি মিজানের জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী এবং এসআই মাহমুদুল হাসানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আমিনুল ইসলাম। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাফি আহমেদ।

দুদকের করা মামলায় আগাম জামিন চেয়ে গত ৩০ জুন হাইকোর্টের সংশ্নিষ্ট শাখায় আবেদন করেন ডিআইজি মিজানুর রহমান। সোমবার ওই আবেদনের শুনানি গ্রহন করা হয়। বেলা সোয়া তিনটার দিকে হাইকোর্টে হাজির হন ডিআইজি মিজান। আবেদনটি শুনানির জন্য উঠলে তার আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন মেহদী বলেন, আমাদের সিনিয়র আইনজীবী এম আমিন উদ্দিন ডিআইজি মিজানের পক্ষে শুনানি করবেন তাই সময় চাচ্ছি। পরে বিকেল পৌনে চারটার দিকে মমতাজ উদ্দিন মেহদী নিজেই শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি দাবি করেন, মিজান খুবই সৎ একজন পুলিশ অফিসার এবং তিনি সুনামের সঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমন করেছেন। পুলিশ বাহিনীতে গৌরবজ্জল ভূমিকা রয়েছে। তিনি শান্তিরক্ষা মিশনেও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে হাইকোর্ট কিছু মন্তব্য করে মিজানের জামিন নাকচ করে আদেশ দেন। ওই সময় উপস্থিত আইনজীবীরা ‘ইয়েস’ ‘ইয়েস’ বলে আদালতের আদেশের প্রতি সমর্থন জানান। বিকেলে আদালতের কার্যক্রম শেষ হলে ডিআইজি মিজানের পাশে পুলিশের একজন কনস্টেবল এসে বসেন। ওই সময় বিপুল সংখ্যক গণমাধ্যমকর্মী ও উৎসুক মানুষ আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করেন। এরপর বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে একটি জিপ গাড়ি (ঢাকা মেট্টো-ঘ ১১১৭২২) করে পুলিশের একটি টিম ডিআইজি মিজানকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়।

আদেশের পর খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ডিআইজি মিজানকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা মেট্টোপলিটন-৩ এর স্পেশাল কোর্টে হাজির করা হবে। তিনি আরও বলেন, এটি একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। এতবড় বড় অফিসারকে গ্রেফতারের ঘটনা সচারচর ঘটেনা। এখন আইননুযায়ী যা হবার তাই হবে।

এক নারীকে জোর করে বিয়ের পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠায় গত বছরের জানুয়ারিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে প্রত্যাহার করা হয় ডিআইজি মিজানকে। পরে তাকে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। তার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে থাকা দুদকের একজন কর্মকর্তাকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার কথা নিজেই ফাঁস করে সম্প্রতি নতুন করে ফের আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর মিজান, তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না, ভাগ্নে মাহমুদুল হাসান এবং ছোট ভাই মাহবুবুর রহমানকে আসামি করে গত ২৪ জুন দুদক পরিচালক মনজুর মোরশেদ মামলা করেন। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ দায়ের করা ওই মামলায় তিন কোটি সাত লাখ ৫ হাজার ২১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং তিন কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে। দুদকের পরিচালক মনজুর মোরশেদের আবেদনে ইতোমধ্যে ডিআইজি মিজানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি এবং ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ দিয়েছে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত।

এদিকে মামলা হওয়ার পর ডিআইজি মিজানকে পুলিশ বাহিনী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ডিআইজি মিজানুরের বিরুদ্ধে বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রীকে গ্রেফতার করানোর অভিযোগও রয়েছে।