নিজস্ব প্রতিবেদক: ইন্টারনেটে আপত্তিকর ভিডিও পোস্ট করায় ক্ষোভে অপমানে নিজেকে ওড়নায় ঝুলিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী শিখা রানী বিশ^াস। আহত অবস্থায় তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ তার কলেজ বান্ধবী রিনিকে গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার দুপুরে তার বাড়ি সদর উপজেলার আগরদাঁড়ি ইউনিয়নের রামেরডাঙ্গা গ্রামে নিজ বাড়িতে শিখা রানী বিশ^াস(১৭) আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন ডাক্তার। শিখা রামেরডাঙ্গা গ্রামের স্বপন বিশ^াসের মেয়ে। তার পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে কয়েকদিন আগে শিখা রাণীর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে একদল নতুন কুটুম্ব। তারা মেয়েটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেখেন। এর আগে তাকে একটি কক্ষে নিয়ে সাজগোজ করে দেন শিখার বান্ধবী ঝাউডাঙ্গা কলেজের সম্মান বিভাগের ছাত্রী সুরাইয়া সুলতানা রিনি। রিনি এ সময় তার সম্মতি নিয়েই বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে তার শারীরিক ভিডিও ছবি মোবাইল ফোনে ধারন করে। এর মধ্যে তার ভেজা বিবস্ত্র ছবিও ছিল। কয়েকদিন পর এই ছবিই শিখার নিজের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। রিনির মা থাকেন মুম্বইয়ে। তার বাবার নাম আবদুর রকিব। জানা গেছে রিনি তার বান্ধবীর এই ছবিকে পুঁজি করে শিখার কাছে টাকা চায়। না হলে সেসব ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। শিখা নিরুপায় হয়ে তাকে ১৭০০ টাকাও দেয়। তারপরও সে তার কথা না রেখে শিখার ছবি ডাউনলোড করে জনৈক নুর ইসলামের কাছে দেয়। নুর ইসলাম সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়। তবে নুর ইসলামের দাবি সে মোবাইল ফোনের এসব ডিভাইসের ব্যবহার জানেনা। এ ধরনের স্মার্ট ফোনও সে ব্যবহার করে না। এদিকে শিখার এসব আপত্তিকর ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। দুই তিনদিন ধরে এ অবস্থা চলাকালে বিষয়টি জানাজানি হয়। এতে শিখা ক্ষোভে ও অপমানে ফেটে পড়ে। সে শুক্রবার দুপুরে বাড়ির সবার অগোচরে নিজ ঘরের আড়ায় ওড়নায় ঝুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাকে দ্রুত নামিয়ে এনে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কর্তব্যরত ডাক্তার বলেছেন তার অবস্থা সংকটাপন্ন। স্থানীয় আগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুল গফুর জানান বাবা স্বপন মেয়ে শিখার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন ‘তোর মুখ যেনো বাড়ি এসে আর না দেখি’। এর পরই সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তবে আটক রিনির দাবি তার বান্ধবী শিখা রানী এর আগে আরও কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। ভাইরাল হওয়া ছবি শিখা নিজেই তার রিয়া দাস নামের ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করে। এর সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। রিনি আরও জানান শিখা নানাজনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে তাদেরকে নানাভাবে দোষারোপ ও ব্লাকমেইল করে থাকে। এই সুযোগে অনেকের কাছ থেকে টাকাও আদায় করে। রিনি জানান শিখা রানী তার বাড়ি থেকে ৭০০ টাকা চুরিও করেছিল। পরে সে তা স্বীকার করে। এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিখা বিশ^াস জানিয়েছেন তাকে মোবাইলে ফোন করে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। রিনির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর থানার (সাব ইন্সপেক্টর) এসআই কিশোর কুমার জানান শিখার বাবা স্বপন বিশ^াস রিনি ও নুর ইসলামের নাম উল্লেখ করে এবং সেই সাথে অজ্ঞাত আরও তিনচারজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। রিনিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি জানান শিখার আপত্তিকর ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ায় অপমানিত হয়ে সে ঘরের আড়ায় গলায় ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।