বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের নৈঋত কোণে অবস্থিত সাতক্ষীরা। সাতক্ষীরা একটি সমৃদ্ধ জনপদ। এখানে আছে চিংড়ী চাষ, আছে সুন্দরবন এবং ফসলী মাঠ। জাতীয় আয়ের একটি অংশ এখান থেকে আসে। শত শত বছর থেকে সাতক্ষীরার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন এবং রাজনৈতিক অঙ্গন সমৃদ্ধশালী। যাতায়াত এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রেও সাতক্ষীরা কম উন্নত নয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সরকারের আমলে সাতক্ষীরায় যথেষ্ট কাজ হয়েছে। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন থেকে ২০০১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এবং ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সাতক্ষীরার অলি, গলি, রাস্তাঘাট অনেক উন্নত হয়েছে। হয়েছে ব্রিজ, কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কোনো কোনো রাস্তায় পিচ হয়েছে। আবার কোনো কোনো রাস্তায় ইট বসানো হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলায় মোট ৭৮টি ইউনিয়ন আছে। এই ৭৮টি ইউনিয়নের মধ্যে যে গ্রামগুলো আছে সেই গ্রামের অনেক রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় গ্রামীণ জনপদের যে রাস্তাগুলো পিচ করা হয় সেই রাস্তাগুলোতে মালবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে অতিদ্রুত ধ্বসে পড়ে এবং নষ্ট হয়ে যায়। রাস্তাগুলোর যে ধারণ ক্ষমতা তার চেয়ে অধিক ওজনের মালবাহী যানবাহন চলাচল করায় রাস্তাগুলোর বেহাল দশা হয়েছে এবং চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে যে রাস্তাগুলোর বেহাল দশা পাওয়া গেছে সেগুলো সংস্কারের নিমিত্তে তুলে ধরা হবে। সাতক্ষীরার সদর উপজেলার নারকেল তলা থেকে আখড়াখোলা বাজার পর্যন্ত ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তাটি ক্ষত বিক্ষত হয়েছে। যা অতিদ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। আখড়াখোলা বাজার থেকে আমতলা পর্যন্ত রাস্তাটি সংস্কার করা প্রয়োজন। আগরদাড়ী বাজার থেকে পরানদহা হয়ে আলীপুর চারাবটতলা পর্যন্ত রাস্তা মাঝে মাঝে ভালো থাকলেও মাঝে মাঝে খুবই খারাপ। এই পুরো রাস্তাটিই সংস্কার করা প্রয়োজন। সাতক্ষীরা সদরের বাঙালের মোড় থেকে মন্টু মিয়ার বাগানবাড়ী হয়ে খানপুর পর্যন্ত রাস্তাটি সংস্কার করা প্রয়োজন। কলারোয়া উপজেলার একড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কয়লা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তাটি সংস্কার করা প্রয়োজন। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ছয়ঘোরিয়া থেকে ছাতিয়ানতলার দেবনগর পর্যন্ত রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। বুইতা থেকে বাটরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তাটি সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। কলারোয়া পাবলিক ইনস্টিটিউট থেকে শাকদহা বাজার পর্যন্ত রাস্তা পীচ করা প্রয়োজন। আশার আলো কুশোডাঙ্গার মধ্যে কিছুটা কাজ হচ্ছে। সাতক্ষীরা সদরের আখড়াখোলা বাজার থেকে তুজুলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তার কাজ হচ্ছে। ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ছয়ঘোরিয়া থেকে বলাডাঙ্গা হয়ে আখড়াখোলা বাজার পর্যন্ত রাস্তাটি সংস্কার হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলার আরো অনেক জায়গায় রাস্তার কাজ চলছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ এবং এল জিইডি যে রাস্তাগুলো সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেয় তার দৈর্ঘ্য খুব কম থাকে। কোন কোন রাস্তা সংস্কার ২ থেকে ৩ কিলোমিটার না হয়ে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত করলে জনগণের সুবিধা হয়। রাস্তা মানবজীবনে শান্তির বারতা বয়ে আনে। মাতৃভূমি যেমন স্বর্গস্বরূপ তদ্রুপ চলার পথ প্রশান্তিময় হলে মানুষের জীবনও প্রশান্তিময় হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্য বলা যায় খুলনা বিভাগের মধ্যে মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কথা। যশোর থেকে শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়কটি সংস্কার করা আশু প্রয়োজন। রাস্তার যে প্রশস্ততা আছে তা আরো ৪ গজ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। রাস্তার মাঝখান দিয়ে সাদা চুন টেনে দিলে যানবাহন চালানো সুবিধা হয়। এতে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসে। যাহোক, গ্রামীণ জনপদের কথাই বলছিলাম। তাই আবারো বলতে চাই, সাতক্ষীরা সদরের পোড়ার বাজার থেকে নগরঘাটা হয়ে রাজনগর দিয়ে বিনেরপোতা পর্যন্ত রাস্তাটি ভেঙে পড়েছে। যা এক্ষুণি সংস্কার করা প্রয়োজন। সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া উপজেলাসহ সাতক্ষীরার প্রত্যেকটি উপজেলা এবং থানার গ্রামীণ জনপদগুলো অতিদ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পদ্মাসেতু নির্মাণ, রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় তৈরিসহ অনেকগুরুত্বপূর্ণ কাজ বর্তমান সরকার করছেন। বর্তমান সরকারের কর্মী ব্যবস্থাপনাও যথেষ্ট ভালো। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাছে আমার আকুল আবেদন ও কিছু প্রাণের দাবি তা হলো- ১. বাংলাদেশ তথা বাঙালি জাতির দেয়ালে, অফিসিয়াল পদ-পদবীতে এবং পাঠ্যবইতে নমনীয় শব্দ ব্যবহার করলে ভালো হয়। ২. শিক্ষাকে অবশ্যই ধর্মনিরপেক্ষতার আলোকে সাজাতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে স্বাধীনতা বিরোধীদের ছাটাই করে মহান ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতিসত্তায় বিশ্বাসী, সৎ, দেশপ্রেমিক, ন্যায়বিচারক, কর্তব্যনিষ্ঠ সন্তানদের শিক্ষক হিশেবে নিয়োগ দিতে হবে। অর্থাৎ সংবিধানের মূলনীতির আলোকে শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষাঙ্গনগুলো সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক আঙ্গিকে ঢেলে সাজাতে হবে। ৩. বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর মধ্যে প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে লুকিয়ে থাকা দলীয় বিশ্বাসঘাতকদের দল থেকে ছাটাই করে যোগ্য, মেধাবী, সংগঠক, সৎ, নিষ্ঠাবান, সুশিক্ষিত, ন্যায়বিচারক ও দেশপ্রেমিকদের দলে স্থান দিতে হবে ও উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত করতে হবে। দলের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমান্ড ভঙ্গকারীদের শাস্তির বিধান কার্যকর করলে দল ও দেশ নান্দনিক হয়ে গড়ে উঠবে। ৪. মুদ্রাপাচার, মেধাপাচার, শিশুপাচার তথা সম্পদপাচার রোধ করে জাতিকে অর্থনৈতিকভাবে আরো শক্তিশালী করতে হবে। ৫. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। আঞ্চলিক পর্যায়েও লুকিয়ে থাকা অসংখ্য মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি করতে হবে। ৬. রামপাল পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দ্রুত স্থাপন করতে হবে। পরিশেষে বলা যায় সাতক্ষীরার সকল গ্রামীণ জনপদগুলো জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতের ছোঁয়ায় আরো সুন্দর হবে। লেখক : সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, কবিতা পরিষদ, সাতক্ষীরা।