খেলার খবর: প্রায় অসম্ভব সব রেকর্ড গড়ে এবার বিশ্বকাপ মাতিয়েছেন বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসান। অনেকেই বলছেন, সাকিবকেই ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট পুরস্কার দেওয়া হোক। বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশ বিদায় নিলেও, এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ম্যান অফ দা টুর্নামেন্ট কে হতে যাচ্ছেন- এমন প্রশ্ন এখন থেকেই আলোচিত হচ্ছে ক্রিকেট অঙ্গনে। উঠে আসছে নানা ক্রিকেটারের নাম। এক্ষেত্রে সাকিবের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার এবং ভারতের রোহিত শর্মা।
এছাড়া সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর তালিকায় অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক, বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমান, ভারতের জসপ্রিত বুমরাহ ও নিউজিল্যান্ডের লকি ফার্গুসন এই দৌঁড়ে টিকে আছেন। ব্যাটিং এভারেজে এক নম্বরে আছেন নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন, যিনি একাই দলকে অনেকটা টেনে তুলেছেন ফাইনালে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সম্ভাব্য টুর্নামেন্ট সেরাদের সম্পর্কে।
সাকিব আল হাসান, অল-রাউন্ডার, বাংলাদেশ:
বিশ্বকাপের শুরু থেকে একেবারে যেদিন বাংলাদেশ টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে যায় । সেদিন পর্যন্ত সাকিব আল হাসানের দিকে তাকিয়ে আশাবাদী ছিলেন বাংলাদেশের ভক্তরা। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সেরা চারে তো উঠতে পারেইনি, আট নম্বরে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করেছে দলটি। বিশ্বকাপের মতো আসরে সাকিব আল হাসানের মতো অলরাউন্ড পারফরম্যান্স আর কারো নেই
সাকিব আল হাসানের পরিসংখ্যান ও পারফরম্যান্স এই একটি জায়গাতেই ম্লান হয়ে যায়, কারণ বাদবাকি যারা সব তালিকার ওপরের দিকে আছেন তারা সবাই অন্তত সেমিফাইনাল খেলছে, কয়েকজন ফাইনালেও জায়গা করে নিয়েছেন। কিন্তু তাদের চেয়ে সাকিব একটা জায়গাতে এগিয়ে থাকবে, সেটা হলো ব্যাটে বলে এমন পারফরম্যান্স আর কেউই দেখাতে পারেনি। সাকিব মোট আটটি ম্যাচে ব্যাট হাতে মাঠে নামেন, ৬০৬ রান তুলেছেন, ৮৬.৫৭ গড়ে। সাকিবের গড় টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বল হাতে সাকিব ৮ ম্যাচে নিয়েছেন ১১টি উইকেট।
অর্থ্যাৎ বল ও ব্যাট উভয় মাধ্যমেই সাকিব দলের তিনটি জয়ে ভূমিকা রেখেছেন। প্রথম দুটি জয়ের একটিতে সেঞ্চুরি করেছেন, একটিতে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও সেঞ্চুরি করেছেন। মোট আট ম্যাচ খেলা সাকিব ৭টি ইনিংসেই ন্যুনতম ৫০ রান অতিক্রম করেছেন। বিশ্বকাপে তার সর্বনিম্ন সংগ্রহ ৪১ রান। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ৬০০ এর ওপর রান ও ১০টিরও বেশি উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান।
ডেভিড ওয়ার্নার, ওপেনার, অস্ট্রেলিয়া:
বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া মানেই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের দাপট। যদিও গতকাল ইংল্যান্ডের কাছে হেরে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে অ্যারন ফিঞ্চদের। ২০১১ বিশ্বকাপ ছাড়া ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত এই একই দৃশ্য দেখা গেছে। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ম্যাথু হেইডেনের পর এবারের বিশ্বকাপে সেরাটা নিজের দেখালেন আরেক অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার।
এই বিশ্বকাপে তিনি ৩টি সেঞ্চুরি ও ৩টি হাফসেঞ্চুরি করেছেন। শুরুটা ধীরগতির হলেও শেষদিকে রানের গতি বাড়িয়ে দেন ওয়ার্নার। পাকিস্তানের সাথে ১০৭, বাংলাদেশের সাথে ১৬৬ ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ১২২। আফগানিস্তানের সাথেও ৮৯ রানে অপরাজিত ছিলেন এই হার্ডহিটার।
কেন উইলিয়ামসন, অধিনায়ক, নিউজিল্যান্ড:
এই মুহূর্তে তাকে সবচেয়ে বুদ্ধিমান অধিনায়ক বলা হচ্ছে। টুর্নামেন্টের সেরা রান সংগ্রাহকদের তালিকার দিকে তাকালে উইলিয়ামসনের রান খুব বেশি মনে নাও হতে পারে, তবে তিনি যে রান করেছেন তাতে নিউজিল্যান্ড দল বিপদ থেকে মুক্তি পেয়েছে বেশ কয়েকবার। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০ উইকেটে জয় ছাড়া নিউজিল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি তেমন উল্লেখ করার মতো রান করতে পারেনি।
এরপরই হাল ধরেন উইলিয়ামসন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭৯, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০৬ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৪৮ রান তোলেন নিউজিল্যান্ডের এই অধিনায়ক। মূলত প্রথম পাঁচ ম্যাচের জয়ই নিউজিল্যান্ডকে সেমিফাইনালে উঠতে সাহায্য করে।
মিচেল স্টার্ক, পেস বোলার, অস্ট্রেলিয়া:
মিচেল স্টার্ক ২০১৫ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার নায়ক, সেবার তিনি নিয়েছিলেন ২২ উইকেট। ২০১৫ বিশ্বকাপেও ম্যান অফ দা টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন মিচেল স্টার্ক। এবার সেমিফাইনাল খেলার আগেই তার নামের পাশে ২৬টি উইকেট রয়েছে। বিশ্বকাপের মতো আসরে মোট ৩বার পাঁচ উইকেট নেয়ার রেকর্ডও এখন তার। মিচেল স্টার্ক চলতি বিশ্বকাপেই ২বার চারটি করে ও ২বার পাচঁটি করে উইকেট নিয়েছেন। তার গড় মাত্র ১৬.৬১, ইকোনমি রেট ৫.১৮। মিচেল স্টার্কের বিশ্বকাপে উইকেট সংখ্যা ১৭ ম্যাচে ৪৮টি।
জো রুট, ব্যাটসম্যান, ইংল্যান্ড:
ইংলিশ টেস্ট অধিনায়ক জো রুট এই বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। ৯ ম্যাচে ৫০০ রান তুলেছেন তিনি। দলের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হাল ধরেছেন এই ক্রিকেটার। ৯১.৭৪ স্ট্রাইক রেটে খেলেছেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি, আফগানিস্তানের সাথে ৮৮ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। এছাড়া বিশ্বকাপের শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫১ রানের একটি ইনিংস খেলেন রুট। একটা জায়গায় জো রুট সবার চেয়ে এগিয়ে, ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচে ১১টি ক্যাচ ধরেছেন তিনি।
রোহিত শর্মা, ওপেনার, ভারত:
বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে পাচঁ পাচঁটি সেঞ্চুরি করা রোহিত শর্মাই এই বিশ্বকাপে ভারতের পোস্টার বয়। ভারতের ব্যাটিংয়ের টোন সেট করার দায়িত্বটা তারই, তবে শুরু থেকে তার ওপর চাপ ছিল পাহাড় সমান। বিশেষত শেখর ধাওয়ান ছিটকে যাওয়ার পর ভারতের টপ অর্ডারের দায়িত্ব কাঁধে নেন তিনি।
৮৭ গড়ে ৭০৩ রান তুলেছেন রোহিত, তবে জীবনও পেয়েছেন বেশ কয়েকটি, যেসব ম্যাচে রোহিত শর্মার ক্যাচ মিস করেছে প্রতিপক্ষ, অন্তত ফিফটি ও ৩টি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি, অর্থাৎ সুযোগের সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছেন রোহিত। তবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি ১ রান করে আউট হয়ে যাওয়ার পর ভারত সেই ম্যাচেই হেরে যায়, এতে করে বোঝা যায় রোহিত শর্মার ব্যাটের ওপর ভারতের নির্ভরশীলতা।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন অবলম্বনে।