দেশের খবর: সপ্তাহজুড়ে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে দেশের প্রধান নদ-নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা, ধরলা, যমুনা ও ব্র্রহ্মপুত্র নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে কয়েক লাখ মানুষ অমানবিক জীবনযাপন করছেন। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট বন্যার্তদের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, শেরপুর, বগুড়া, সুনামগঞ্জে ও নেত্রকোনা অঞ্চলে আরও নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও খুবই অপ্রতুল বলে দাবি করছেন বন্যাদুর্গতরা। অনেক এলাকায় এখনও ত্রাণ পৌঁছেনি। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি ও ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। আমনের বীজতলা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানির প্রবল চাপে তিস্তা ব্যারাজের বাইপাস ফ্ল্যাট-গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।
টানা বর্ষণে রোববার কপবাজারের চকরিয়ায় পাহাড় ধসে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। পার্বত্য বান্দরবানের লামায় পাহাড় ধসের ঘটনায় নুরহাজান বেগম নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় যুগেন্দ্র চাকমা নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। রোববার পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়নি বান্দরবানের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ।
রোববার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, তিস্তা-যমুনা-বহ্মপুত্র ও সুরমার পানি ২৫টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাউবোর ৯৩টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে ৭৩টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। আর ১৮টি পয়েন্টে পানি হ্রাস পাচ্ছে। ১০ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। বাঁধ ভেঙে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম ও মেঘালয় প্রদেশে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সংলগ্ন বিহার ও নেপালে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করবে। এতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে সিলেট ও রংপুর, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে। তবে চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত স্টেশনগুলো হচ্ছে- যমুনা নদীর পানি ফুলছড়ি, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি ও কাজীপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি ডালিয়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে, ঘাগট নদীর পানি গাইবান্ধা, ব্রহ্মপুত্র, নুনখাওয়া ও চিলমারীতে, সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট, সিলেট ও সুনামগঞ্জে; কুশিয়ারার পানি আমলশদি, শেওলা ও শেরপুর সিলেটে; মনু নদীর পানি মৌলভীবাজারে, ধলাই নদীর পানি কমলগঞ্জে, খোয়াই নদীর পানি বাল্লায়, সোমেশ্বরী নদীর পানি কলমাকান্দা, কংশ নদীর পানি জারিয়া জাঞ্জাইলে; ধরলার পানি কুড়িগ্রামে, সাঙ্গু নদীর পানি দোহাজারী ও বান্দরবানে, মাতামুহুরীর পানি লামা ও চিরিঙ্গা পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।
তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় ভারী যান চলাচল বন্ধ :দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসন ও ব্যারাজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার গতকাল এ নির্দেশনা জারি করেন।
মিডিয়া সেল চালু : বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক তথ্য জানতে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা এবং তথ্য অধিদপ্তর মিডিয়া সেল চালু করেছে। নৌ মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল রুম :বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং তথ্য সংগ্রহ ও মনিটরিং করার জন্য গতকাল কন্ট্রোল রুম খুলেছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। সচিবালয়ে ৬ নম্বর ভবনের নবম তলায় ৮০৩ নম্বর কক্ষটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ফোন নম্বর-৯৫১৫৫৫১।
পাউবোর সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল :বন্যা মোকাবেলায় পাউবোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সংস্থাটির মহাপরিচালক মাহফুজুর রহমান নির্দেশিত এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের দপ্তর প্রধানদের স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে বন্যা মোকাবেলা করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।