খেলার খবর: এ যেন রূপকথাকেও হার মানিয়েছে! কাউকে চিত্রনাট্য লিখতে দিলেও এরচেয়ে নাটকীয় কিছু লেখা সম্ভব ছিল কি? ম্যাচটা পেন্ডুলামের মতো দুলছিল। কখনো ইংল্যান্ডের দিকে কখনোবা নিউজিল্যান্ডের। সমর্থকরা যেভাবে চেয়েছিলেন ঠিক যেভাবেই শেষ হলো এবারের বিশ্বকাপ। রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা আর নজরকাড়া ক্রিকেটের পসরা সাজিয়ে শেষ হলো ক্রিকেট বিশ্বের সেরা আসর। কারো স্বপ্নও এর চেয়ে রোমাঞ্চকর হয় না। কালজীয় এক ম্যাচের স্বাক্ষী হয়ে রইল ক্রিকেটের মক্কা খ্যাত লর্ডস।
নিউজিল্যান্ড প্রথমে ব্যাটিং করে যখন ২৪১ রান তুলল তখন মনে হচ্ছিল, ফাইনালটা সহজেই জিতে যাবে ইংল্যান্ড। শুরু থেকেই ইংল্যান্ডের ওপর চাপ ধরে রাখে ইংল্যান্ড। ৮৬ রানের মধ্যেই বিদায় নেন জেসন রয়, জনি বেয়ারস্টো, জো রুট ও ইয়ন মরগান।
জস বাটলার ও বেন স্টোকসেরে মাটি কামড়ানো মনোভাবে শেষ পর্যন্ত ম্যাচে ফেরে ইংল্যান্ড। যখন মনে হচ্ছিল সহজেই জয় ছিনিয়ে নেবে ইংল্যান্ড ঠিক তখনই ম্যাচে ফেরে কিউইরা। বাটলার ও ক্রিস উকসকে তুলে নিয়ে আবার সমীকরণ নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নেয় নিউজিল্যান্ড।
শেষ ১২ বলে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ২৪ রান। ঠিক তখনই ম্যাচে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ আরো জোরালো করে নিউজিল্যান্ড। জেমস নিশামের প্রথম দুই বলে আসে দুই রান। তৃতীয় বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফিরে যান লিয়াম প্লাঙ্কেট। ম্যাচে তখন কিউইদের পূর্ণ আধিপত্য।
ওভারের চতুর্থ বলে ছয় মেরে আবার স্বপ্ন জাগিয়ে তোলেন বেন স্টোকস। ৮ বলে তখন দরকার ১৬ রান। শেষ বলে জোফরা আর্চারকে বোল্ড করে আবার ম্যাচে ফেরে নিউজিল্যান্ড।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ১৫ রান। প্রথম দুই বলে কোনো রান নিতে পারেননি স্টোকস। তৃতীয় বলে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে মারলেন বিশাল এক ছক্কা। চতুর্থ বলে দুই রান নিতে নিয়ে ওভার থ্রো থেকে আসলো ৫ রান।
শেষ দুই বলে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৩ রান। চতূর্থ বলে রান আউট হন আদিল রশীদ। শেষ বলে লাগত ১ বলে ২ রান। দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট হন মার্ক উড। ম্যাচ টাই! এই প্রথম সুপার ওভারে গড়াল বিশ্বকাপের কোনো ফাইনাল।
স্নায়ুক্ষয়ী সব মুহূর্ত পেরিয়ে ম্যাচ চলে গেল সুপার ওভারে । সুপার ওভারেও কী টান টান উত্তেজনা! ইংল্যান্ড করল ১৫ রান। নিউজিল্যান্ডও করল ঠিক ১৫! সুপার ওভারেও ম্যাচ টাই। তখন দেখা হলো, ম্যাচে বাউন্ডারি বেশি কাদের। ইংল্যান্ড তাতেই চ্যাম্পিয়ন! কিউইদের চেয়ে বাউন্ডারি যে বেশি তাদের! মুগ্ধ করা ক্রিকেটীয় দক্ষতা, স্নায়ুর সঙ্গে লড়াই কিংবা ইংল্যান্ডের ভাগ্য বা নিউজিল্যান্ডের দুর্ভাগ্য যেটাই হোক, এমন শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনাল, এমন টান টান উত্তেজনায় ভরা ফাইনাল বিশ্বকাপের ৪৪ বছরের ইতিহাসেই দেখা যায়নি