আবু ছালেক : এক সময়ের মরিচ্চাপ নদী এখন সরু নালায় পরিণত হয়েছে। মরিচ্চাপ নদী দখল মুক্ত না করলে জলাবদ্ধতার কবলে পড়বে নদী সংলগ্ন এলাকা। স্থানভেদে ২৫০-৩০০ মিটার চওড়া নদীটি এখন সরু নালা। নদীর দুই পাশ দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে কাঁচা-পাকা বাড়ি, ঘের, ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। নদীটির সিংহ ভাগই এখন দখলদারদের কবলে। এতে নাব্যতা হারিয়ে নদীটি এখন মৃত। আর তার নেতিবাচক প্রভাব হিসেবে নদীর তিরবর্তী গ্রামগুলোতে জলাবদ্ধতাসহ পরিবেশগত নানা সংকট তৈরি হয়েছে। তবে, দখলদারদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অনেকেই এক সময়কার প্রমত্তা মরিচ্চাপ নদীর নাম বদলে নালা বলতে শুরু করেছেন। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আ: সামাদ থাকাকালিন মরিচ্চাপ নদী খনন করা হয়েছিল,কিন্ত বর্তমানে পুনরাই নদী ভরাট করছে অবৈধ দখল কারিরা। যে কারণে নদী এখন প্রায় মৃত। এখনই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ না নিলে ক’দিন পর যেটুকু আছে তাও অবশিষ্ট থাকবে না বলে আশঙ্কা এলাকাবাসীর। বুধবার বিকাল ৫ টার সময় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রবাহহীন সামান্য পানি নিয়ে মরিচ্চাপ নদীর সাক্ষ্য দিচ্ছে নালাটি। দেবহাটা থেকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মধ্য দিয়ে আশাশুনি উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত ৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ মরিচ্চাপের পুরোটাই চলে গেছে দখলদারদের কবলে। এল্লারচর, ফিংড়ী, টিকেট, হিজলডাংগা, বিল শিমুলবাড়িয়া, শিমুলবাড়ীয়া, বালিথা, চরবালিথা, ব্যাংদহা, জোড়দিয়া, কামালকাটি, নইকাটি, বাকড়া, শরাপপুর, গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীর দু’ধারে চলছে দখলের মহোৎসব। মূল নদীর দু’ধারে বেড়ির মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে অসংখ্য পাকা-কাঁচা বাড়ি, ধর্মীয় স্থাপনা, ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান, ইটেরভাটা, মুরগির খামার, ঘেরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীটি চলছে মেরে ফেলার উৎসব। নদী তীরবর্তী এলাকাবাসী জানান, এক সময় মরিচ্চাপ ছিলো খরস্রোতো। এতে নিয়মিত জোয়ার-ভাটা হতো। মরিচ্চাপ ছিলো স্থানীয়দের জীবন-জীবিকার উৎস। এই নদী দিয়ে চলতো বড় বড় লঞ্চ-স্টিমার, পাল তোলা নৌকা। আর এই নদী দিয়ে সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ কলকাতায় যেতো ব্যবসা-বাণিজ্য করতে। আশাশুনি, দেবহাটা এবং সদরের বিভিন্ন এলাকায় যাওয়ার অন্যতম প্রধান পথ ছিলো এই নদী। বিশেষ করে সাতক্ষীরা শহরে আসতে এই নদীই ছিল প্রাণসায়ের খালে প্রবেশের পথ। খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম ছিলো এটি। নদীটির সাতক্ষীরা সদরের এল্লারচরে ছিলো স্টিমার ঘাট। ভাঙা-গড়ার দৃশ্য দেখা যেত নদীর দু’পাড়ে। দু’ধারে নদীকে কেন্দ্র করে বিস্তৃত ছিলো ফসলের মাঠ। নদীতে রাত-দিন মাছ ধরে সংসার চালাতো গরিব, অসহায়, লোকজন। এছাড়াও অনেক জায়গায় খেয়াঘাট ছিল। কিন্তু আজ সবই স্মৃতি। লেখার সময় একটি কথা মনে পড়ল আমরা যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে,মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়তাম, তখন পড়ন্ত বিকালে মরিচ্চাপ নদীর ধারে যেয়ে বন্ধুরা বিশেষ করে আবু ছালেক,মোমিনুর রশিদ,ফিরোজ,নজরুল, ইসলাম,আশরাফুল,হাসান,কামাল, সহঅন্যান্য বন্ধুরা মিলে ঢিল ছুড়তাম কে নদী পার করতে পারবে ঢিল,কিন্ত আর্চাশ্ব্য হলেও সত্য, কোন দিন আমরা একটি ঢিল নদী পার করতে পারিনি। আজ সেই নদী একটি শিশু লাফ দিয়ে পার হচ্ছে,আর অপেক্ষা করতে হচ্ছে না কখন আসবে খেয়া নৌকা। কখন নদী পার হব,শুনতে হচ্ছেনা নৌকার মাঝি সহ পাটনিদের বড় কথা। ছাড়া নদীর বাকে বাকে অপরিকল্পিতভাবে স্লুইস গেট করায় খালগুলোর পানি প্রবেশ ও পানি বের হতে না পারায় জোয়ারে আসা পলি নদীর বুকে জমে যাওয়ায় নাব্যতা হারায় নদীটি। ফলে এখন আর জোয়ার-ভাটা হয় না। তার উপর আবার নেট-পাটা ও অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। নদীর অধিকাংশ জায়গা দখল হয়ে গেছে। ভূমি অফিসের কিছু কর্মকর্তার অবহেলা আর অর্থ বানিজ্যের কারণে এটা হয়েছে বলে অনেকের ধারনা। তবে এই মুহুর্তে নদী দখল মুক্ত করতে হবে, খনন করতে হবে নদী, অন্যথায় নদী সংলগ্ন এলাকা জলাবদ্ধতার কবলে পড়বে,দেশের মানচিত্র থেকে মুছে যাবে মরিচ্চাপ নদীর নাম, দ্রুত মরিচ্চাপ নদীকে বাচাতে কার্যক্রম শুরু করা হোক এমন দাবি সচেতন মহলের।