জাতীয়

ধর্ষককে হত্যা করে কিশোর লিখে রাখল ‘শিশু ধর্ষণ বন্ধ কর’

By Daily Satkhira

July 24, 2019

ভিন্ন রকম সংবাদ: পরিচিত অনেকের কাছেই যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিল সে। এক রাতে ঘুমিয়েছিল বাবার বন্ধুর বিছানায়। বলাৎকার করেছেন তিনিও। শৈশব থেকে কৈশোর পর্যন্ত বছরের পর বছর এমনটা হয়েছে। এসব ঘটনা মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তার মনে। এর মধ্যে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে একসময়। তার বদ্ধমূল ধারণা হয়, সে আর বাঁচবে না। এ পর্যায়ে সে এক ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নেয়, মৃত্যুর আগে প্রতিশোধ নেবে নিপীড়নের। শেষ পর্যন্ত ভুল পথেই পা বাড়ায় সেই কিশোর। তাকে বলাৎকার করা এক ব্যক্তিকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর নিহতের ঘরে থাকা টেলিভিশনের স্ট্ক্রিনে লিখে রাখে- ‘শিশু ধর্ষণ বন্ধ কর’।

সম্প্রতি এ ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের দক্ষিণ কুনিপাড়ায়। শফি শিকদার নামে ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে খুনের মামলার তদন্তে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি আলী হোসেন খান বলেন, ‘প্রথমে এ হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে একটি ফোন কলের সূত্র ধরে বেরিয়ে আসে অনেক ঘটনা। দুঃখজনক ঘটনায় আইনের সংস্পর্শে আসা কিশোরটি আদালতে ঘটনার জবানবন্দি দিয়েছে। পরে তাকে গাজীপুরের টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।’

পুলিশ সূত্র জানায়, দক্ষিণ কুনিপাড়ার ৩২/২ নম্বর টিনশেড দোতলা বাসায় ভাড়া থাকত শফি শিকদার। সে ইস্টার্ন উড নামে একটি আসবাব তৈরির প্রতিষ্ঠানের কাঠমিস্ত্রি ছিল। ঢাকায় একা থাকত। তার দ্বিতীয় স্ত্রী থাকে নড়াইলে। গত ৯ জুলাই তার তালাবদ্ধ ঘর থেকে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকায় লোকজনের সন্দেহ হয়। একপর্যায়ে তালা খুলে ভেতরে ঢুকে মেঝেতে তার লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় নিহতের চাচাতো ভাই ইনামুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম জানান, হত্যা মামলাটির তদন্তে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার সালমান হাসানের নেতৃত্বে একটি দল গঠন করা হয়। তদন্তের একপর্যায়ে তিনি নিহত ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজ নেওয়ার নির্দেশনা দেন। বিশেষ করে সমকামিতার কোনো লক্ষণ ছিল কি-না তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়। এ সময় এক তরুণের খোঁজ পাওয়া যায়, যার সঙ্গে নিহতের নানা-নাতি সম্পর্ক ছিল। ওই তরুণকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, শফি শিকদার শিশু-কিশোরদের নানা কৌশলে বলাৎকার করত। এমনকি তরুণ নিজেও বলাৎকারের শিকার। তবে হত্যার ব্যাপারে তার কিছুই জানা নেই। এরপর নিহতের মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে দেখা যায়, হত্যাকাণ্ডের আগের রাতে এক কিশোরের সঙ্গে তার কথা হয়েছিল। ১৬ জুলাই ওই কিশোরকে কুনিপাড়া থেকে আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তখন সে অকপটে স্বীকার করে হত্যার কথা। পরদিন আদালতেও ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার এসআই বাবলুর রহমান।

তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা জানান, ১৭ বছর বয়সী ওই কিশোর তেজগাঁও শিল্প এলাকার একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করত। তার বাবা শেওড়াপাড়া এলাকার একটি মেসে থেকে আরবি পড়ান। সে মাঝে মধ্যেই বাবার কাছে যেত। বাবার ছোট্ট সিঙ্গেল চৌকিতে দু’জনের জায়গা হতো না। তাই তাকে থাকতে দেওয়া হয় বাবার বন্ধু রিয়াজুলের সঙ্গে। প্রথম রাতেই রিয়াজুল তাকে বলাৎকার করে। এরপর গত চার-পাঁচ বছরে আরও অনেকবার এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। এতে বিরক্ত হয়ে সে বাবার কাছে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। ছেড়ে দেয় পড়ালেখাও। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রেলস্টেশনে থাকতে শুরু করে। সেখানেও তাকে একই ধরনের ঘটনার শিকার হতে হয়। তবে এ পর্যায়ে নিপীড়নকারীরা তাকে কিছু টাকাও দিত। ওই টাকা দিয়ে সে খাবার কিনে খেত। এর মধ্যে একবার তার খুব জ্বর হয়। তার সন্দেহ হয়, বিভিন্নজন যৌন নিপীড়ন করায় তার হয়তো এইডস হয়েছে, তার আর বাঁচার আশা নেই। এত অল্প বয়সে মরে যেতে হবে ভেবে খুব কষ্ট হয় তার। একপর্যায়ে সে সিদ্ধান্ত নেয়, তার এ পরিণতির জন্য দায়ী নিপীড়কদের সে খুন করবে। একদিন সে তার এক বন্ধুর কাছে কাজ চায়। বন্ধুটি তাকে শফি শিকদারের কথা বলে জানায়, ওই ব্যক্তি প্রায়ই হাতিরঝিলে বসে থাকেন। তার কাছে গেলে হয়তো একটা গতি হতে পারে। এরপর কিশোর তার কাছে যায়। কিছুক্ষণ কথা বলার পর তাকে কুনিপাড়ার বাসায় নিয়ে যায় শফি। সেখানে রাতে তাকে বলাৎকার করে। এরপর কিশোরকে তার পিঠ ম্যাসাজ করে দেওয়ার জন্য বলে। ম্যাসাজের একপর্যায়ে শফি তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে তার পিঠের ওপর উঠে লেইস ফিতা দিয়ে শ্বাসরোধ করে কিশোর। শফির নিথর দেহ বিছানা থেকে ফেলে দিয়ে সে সেখানেই ঘুমায়। ভোরে উঠে চলে যায় তার আগের মাদ্রাসায়।

এদিকে, হত্যার কথা স্বীকারের পর শিশুটি পুলিশকে বলে, ‘ওই লোক তো ধর্ষক, ওকে মেরে ফেললে কী হবে? যারা শিশুদের ধর্ষণ করে এ অবস্থায় (নিজেকে নির্দেশ করে) নিয়ে আসে, তাদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। আমি ঠিক কাজ করেছি। আমার যা হবার হবে।’ ধরা না পড়লে সে এরপর রিয়াজুলকে হত্যা করত বলেও জানায়।