স্বাস্থ্য

ঘরোয়া খাবার খেয়েই নিয়ন্ত্রণে ওজন আনুন

By Daily Satkhira

July 31, 2019

স্বাস্থ্য ও জীবন: ওজন কমাতে গিয়ে খাওয়াই ছেড়ে দেন অনেকে। আবার অনেকে শশা-গাজর খেয়েই কাটিয়ে দেন সারা দিন। হতাশা নিয়ে একসময় আবিষ্কার করেন, ওজন তো কমছেই না বরং শরীরে দেখা দিচ্ছে নানাবিধ অপুষ্টি। অকালে চুল পড়ে যাচ্ছে, ধীরে ধীরে চামড়া শুষ্ক হয়ে পড়ছে আর চেহারায় লাবণ্য নেই বললেই চলে।

স্টারভেশন অবস্থাঃ

পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলেন, শরীর দীর্ঘদিন ধরে তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও খাবার না পেলে শরীর ‘স্টারভেশন’ অবস্থায় চলে যায়। প্রয়োজনের তুলনায় কম পরিমাণে খাবার পাওয়ার কারণে শরীর সেই খাবার ব্যবহার করার পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং খাবারকে জমিয়ে রাখতে শুরু করে। এটাই হল ‘স্টারভেশন’ অবস্থা। তখন ওজন তো কমেই না বরং অনেক ক্ষেত্রেই বাড়তে শুরু করে। অন্যদিকে শরীরের ভেতরের কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়ে ধীরে ধীরে। দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজনীয় খাবারের অভাবে মেটাবলিক সিস্টেমের কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার কারণে একসময় আমাদের খাবারের ক্যালরি চর্বি হয়ে শরীরে জমা হতে শুরু করে।

ম্যাজিক ফুড

পুষ্টিবিজ্ঞানীরা ৭ ধরনের খাদ্যোপাদানকে ‘ম্যাজিক ফুড’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁদের মতে, এ ৭ ধরনের খাবার পরিমিত পরিমাণে নিয়মিত খেলে ওজন অবশ্যই কমবে। ফল ও সবজি এ খাবারগুলোতে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ও ফাইবার বেশি থাকার কারণে তা হার্টের জন্য ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল ও মেদের জন্য দায়ী পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। খাবারের আঁশ চর্বিকণাকে চারিদিক থেকে বেঁধে ফেলে। পানি মলমূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। পাশাপাশি ফল ও সবজিতে আঁশজাতীয় উপাদান বেশি আছে। এজন্য এগুলো ক্ষুধার অনুভূতি হ্রাস করে। দেখা গেছে প্রতিদিন অন্তত চার-পাঁচ ধরনের ফল ও সবজি খেলে একজন মানুষ অন্যান্য খাবারের প্রতি আকর্ষণ কম বোধ করে। এ বিশেষ কয়েকটি কারণেই পেটের মেদ কমাতে সব ধরণের ফল ও সবজি খেতে পরামর্শ দেয়া হয়।

গ্রীন টি

গ্রীন টি বা সবুজ চা হালকা কেবল শরীরকে সতেজই রাখে না, সঙ্গে ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। গ্রীন টিতে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের প্রাচুর্য যা পরোক্ষভাবে অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতে সাহায্য করে।

সুষম খাবারে ফ্যাট যুক্তকরণ

বাদাম ও অলিভ অয়েল প্রতিদিনের খাবার তালিকায় প্রোটিন থাকা যেমন অত্যাবশ্যক, ঠিক তেমনি জরুরি লো ‘ফ্যাট’-জাতীয় খাবারের উপস্থিতি। এটাই সত্যি। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, সব ‘ফ্যাট’ই শরীরের জন্য ক্ষতিকারক নয়। শরীরকে সব ধরনের খাদ্য উপাদানের সুষম বণ্টনই শারীরিক সুস্থতাকে পরিপূর্ণতা প্রদান করে। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ও মিনারেলের মতো দেহে ফ্যাটেরও প্রয়োজন। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় কিছু ভিটামিন শোষণের জন্য প্রয়োজন ফ্যাট। এমনকি শরীরে এ, ডি, কে এবং ই ভিটামিনের অভাব দেখা দিতে পারে, যদি শরীর তার প্রয়োজনমতো ফ্যাটের সরবরাহ না থাকে। তাই প্রতিদিনের খাবারে থাকুক বিভিন্ন বাদাম যেমনঃ কাঠবাদাম, চিনাবাদাম এবং কুমড়ার বিচি, শিমের বিচি, কিডনি বিন ও জলপাইয়ের তেল।

ফ্যাটের প্রকারভেদ ও কার্যকারিতা

বাদাম ও দানাজাতীয় খাবার থেকে যে ফ্যাট পাওয়া যায় তাকে বলা হয় ‘মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট’। এই ফ্যাট রক্তে সরাসরি কাজ করে এবং রক্ত থেকে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ত্বক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের দেখভাল করে, চামড়ার মসৃণতা বাড়াতে সাহায্য করে পাশাপাশি মেটাবলিক রেট বাড়ায়, যা প্রত্যক্ষভাবে ওজন হ্রাসে ভূমিকা রাখে।

বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছে থাকে ওমেগা ত্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এই অ্যাসিডের কাজ হল মেদ বৃদ্ধিতে দায়ী চর্বিকে পোড়ানো এবং শরীরে ভালো চর্বির পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করা। এছাড়াও সামুদ্রিক মাছ থেকে যে ফ্যাট পাওয়া যায় তা হল ‘পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট’। সামুদ্রিক মাছের ফ্যাটও ওজন হ্রাসে ভূমিকা রাখে।

মসলাঃ

মসলা রান্নায় যেসব মসলা ব্যবহার করা হয়, যেমন রসুন, হলুদ, দারুচিনি, আদা ইত্যাদি নিজস্ব গুণাগুণের কারণে তা শরীরকে আয়ুর্বেদিক কিছু উপকারিতা দিয়ে থাকে। আবার মসলা খাবারকে সহজপাচ্য করে, সুস্বাদু করে এবং হজমেও সাহায্য করে। আদা, দারুচিনি ও হলুদে থাকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা পরোক্ষভাবে ওজন কমাতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে থাকে।

পানিঃ

শারীরিক প্রত্যেকটি কাজে পানির ভূমিকা অসাধারণ। বলা হয়, প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি ওজন হ্রাসে সরাসরি ভূমিকা রাখে। পানি শরীরকে সতেজ রাখে, এতে মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়। তাই বেশি করে পরিমাণ মত পানি খাওয়া উচিত

আঁশ জাতীয় খাবারঃ

আঁশজাতীয় খাবার এই ধরনের খাবার রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে, যা আমাদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আবার আঁশজাতীয় খাবারে ভিটামিন-বি বেশি থাকে, যা রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পাশাপাশি আমাদের বেসাল মেটাবলিক রেট (বিএমআর) সচল রাখে। শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি জমা রাখার প্রবণতা কমাতে আঁশজাতীয় খাবারের ভূমিকা অসাধারণ।