জাতীয়

বিয়ের আসরে ছুরি মেরে মেয়ের বাবাকে হত্যা

By Daily Satkhira

August 02, 2019

দেশের খবর: রাজধানীর মগবাজার এলাকার দিলু রোডে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে বখাটে যুবকের ছুরিকাঘাতে কনের বাবা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কনের মা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম তুলা মিয়া (৫০)। ঘটনাস্থলের কাছে একটি বাড়ির মেসের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন তিনি। তুলা মিয়ার স্ত্রী ফিরোজা বেগমকে (৩৮) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকজন হামলাকারী যুবক সজীব আহমেদ রকিকে (২৩) আটক করে পিটুনির পর পুলিশে সোপর্দ করেছে। পুলিশ পাহারায় তাঁকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ, নিহতের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রকি ছুরি নিয়ে বিয়ের আসরে অতর্কিত হামলা চালান। মাদকাসক্ত এই যুবক স্থানীয় একটি গাড়ির গ্যারেজের কর্মী। মাদক মামলায় জেল খেটে সম্প্রতি তিনি জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। নিহত তুলা মিয়ার মেয়ে ফাতেমা আক্তার স্বপ্নাকে (বিয়ের কনে) রকি উত্ত্যক্ত করতেন বলে দাবি করছে স্বজনরা। তবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রকি দাবি করেন, ১০ বছর ধরে তাঁর সঙ্গে স্বপ্নার প্রেমের সম্পর্ক ছিল।

হাতিরঝিল থানার ওসি আব্দুর রশিদ বলেন, ‘মগবাজারের দিলু রোড এলাকায় প্রিয়াঙ্কা শুটিং হাউস নামে একটি কমিউনিটি সেন্টারে গতকাল দুপুরে বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। দেড়টার দিকে রকি সেখানে ঢুকে হট্টগোল সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে কনের বাবা তুলা মিয়া ও মা ফিরোজা বেগমকে ছুরিকাঘাত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁদের দুজনকে স্থানীয় ইনসাফ বারাকাহ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তুলা মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। ফিরোজাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রকিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ এ ঘটনায় হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান ওসি আব্দুর রশিদ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আনিসুর রহমান বলেন, ‘রকির বিরুদ্ধে মাদকের মামলা আছে। গ্রেপ্তারের পর সে এক মাস জেলও খাটে। প্রায় দুই মাস আগে সে জেল থেকে বের হয়েছে।’ স্বজনরা জানিয়েছে, নিহত তুলা মিয়ার বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুরে। মগবাজার দিলু রোডের প্রিয়াঙ্কা হাউজিংয়ের কাছে একটি টিনশেড বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকতেন। ওই বাড়িতে থাকা একটি মেসের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন তুলা মিয়া। এদিকে রকি কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার আব্দুল আহামেদ বারীর ছেলে। তিনি মগবাজারের বাটার গলিতে একটি বাড়িতে থেকে গাড়ির গ্যারেজে কাজ করতেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গতকাল বিকেলে হত্যাকাণ্ডের তিন ঘণ্টা পর প্রিয়াঙ্কা শুটিং হাউসে নিহতের মেয়ে স্বপ্নার বিয়ে সম্পন্ন হয়। এরপর তাঁকে মিরপুরে স্বামীর বাসায় পাঠানো হয়েছে। নিহতের শ্যালক (কনের মামা) আলমগীর হোসেন ও বিয়ের ঘটক আলম বলেন, পরিস্থিতির কারণে বিয়ে সম্পন্ন করে নিহতের লাশ দাফনের ব্যবস্থা করছে স্বজনরা। তাঁরা দাবি করেন, বখাটে রকি অনেক বছর ধরেই স্বপ্নাকে উত্ত্যক্ত করতেন। এর আগে পরিবার খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে স্বপ্নার বিয়ে দেয়। এর পরও রকি উত্ত্যক্ত করছিলেন। তাঁর কারণে ৯ মাস আগে স্বপ্নার প্রথম সংসারটি ভেঙে যায়। রকির বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজনের কাছে বিচার চান স্বপ্নার বাবা। এ নিয়ে সালিসও হয়। একপর্যায়ে পুলিশ রকিকে গ্রেপ্তার করে। সম্প্রতি আগের সব কথা জানিয়ে পারিবারিকভাবে স্বপ্নার বিয়ে ঠিক করেন ঘটক আলম। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী আলমগীর বলেন, ‘দুপুরে বিয়ের আগ মুহূর্তে দেয়াল টপকে প্রিয়াঙ্কা শুটিং হাউসে ঢুকে পড়ে রকি। তখন তুলা মিয়া তাকে বাধা দেন। রকি ছুরি বের করে তাঁকে আঘাত করে। তুলার স্ত্রী ফিরোজা এগিয়ে গেলে তাঁকেও আঘাত করে সে। ওই সময় আলমগীরসহ কয়েকজন রকিকে জাপটে ধরে। এরপর বিয়েবাড়ির লোকজন তাকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।’