আন্তর্জাতিক

ভারত শাসিত কাশ্মীরে চরম আতঙ্ক, দলে দলে পালাচ্ছে লোকজন

By Daily Satkhira

August 04, 2019

বিদেশের খবর: ভারত শাসিত কাশ্মীরে শুক্রবার অভূতপূর্ব এক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঘোষণার পর থেকে করার এক ঘোষণার পর থেকে সেখানে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

পালানোর জন্য হাজার হাজার লোক বিমানবন্দর, বাস টার্মিনালে ভিড় করছেন।

হিন্দুদের পবিত্র অমরনাথ তীর্থ যাত্রা কাটছাঁট করে সবাইকে কাশ্মীর উপত্যকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পর্যটকদেরও দ্রুত ফিরে যেতে বলা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন বিমানবন্দর, বাস টার্মিনালগুলো লোকে লোকারণ্য।

শুক্রবার হঠাৎ করে কেন্দ্রীয় সরকার আর সেনাবাহিনী ঘোষণা করে অমরনাথ যাত্রা পথে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র, ল্যান্ড মাইন উদ্ধার এবং অন্যান্য গোয়েন্দা তথ্য থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে বড় ধরণের সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে। সেজন্যই পর্যটকদের উপত্যকা থেকে দ্রুত চলে যেতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে, ২৮ হাজার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর বাড়তি ২৮ হাজার সদস্যকে কাশ্মীরে পাঠানো হচ্ছে।

গত দুদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকেই সেখানে সন্দেহ প্রকাশ করছেন যে কাশ্মীরের বিশেষ স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখে ভারতীয় সংবিধানের যে ধারাগুলি, সেগুলিকে সংশোধন করার চেষ্টার অংশ হিসাবে ইচ্ছা করে এই পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে কিনা। সেরকম প্রচেষ্টা হলে কাশ্মীরে যে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দিতে পারে, তা সামাল দিতেই বাড়তি নিরাপত্তা বাহিনী পাঠানো হচ্ছে বলেও গুজব ছড়াতে থাকে।

কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের সঙ্গে শুক্রবার গভীর রাতে রাতে এবং শনিবার দুপুরে দেখা করেছেন কাশ্মীরের প্রায় সব কটি রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা।

রাজ্যপাল বিবৃতি দিয়ে জানাচ্ছে যে ,এই বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদী হামলা মোকাবিলার আশঙ্কার কারণেই। এর সঙ্গে কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক রক্ষাকবচ সরিয়ে নেওয়ার কোনও পরিকল্পনাই নেই।

শনিবার দুপুরে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে আসার পরে রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বলেন, “অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্তের ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যেই হঠাৎ করে অমরনাথ যাত্রা বন্ধ করে দেওয়া হল, পর্যটকদের রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে বলা হল। এগুলোর অর্থ বোঝা যাচ্ছে না! রাজ্যপালের কাছে সেটাই জানতে গিয়েছিলাম যে হচ্ছেটা কী!”

“রাজ্যপাল বলছেন যে গুজবে যাতে মানুষ কান না দেন। ৩৫ এ বা ৩৭০ ধারা নিয়ে কোনও পরিকল্পনা নেই সরকারের। কিন্তু আশা করবো কেন্দ্রীয় সরকার এটা সোমবার সংসদে স্পষ্ট করে সেটা জানাক,” আবদুল্লার বলেন। এর আগে শুক্রবার রাতে রাজ্যপালের সঙ্গে জরুরী অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে দেখা করেন আরেক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি সহ আরও কয়েকজন নেতা। তাদেরও একই কথা জানিয়েছেন রাজ্যপাল মালিক।

সেই বৈঠক থেকে ফিরে মেহবুবা মুফতি সাংবাদিকদের বলেন, “কাশ্মীরের মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক আমি দেখছি, তা আগে কখনও দেখি নি।”

শ্রীনগর থেকে বিবিসি-র সংবাদদাতা মাজিদ জেহাঙ্গীর বলছেন, শুক্রবারের মতো আজও সরকার বা সেনাবাহিনীর বা রাজ্যপালের দেওয়া এইসব আশ্বাসে মানুষ যে খুব একটা ভরসা করছেন, তা নয়। গতকাল থেকেই পেট্রল পাম্প বা অন্যান্য দোকানগুলোতে মানুষের ভিড় লেগে রয়েছে। সবাই রেশন আর জ্বালানী যোগাড় করে রাখছেন।

সরকারী পরামর্শ মেনে হাজার হাজার মানুষ এখন কাশ্মীর ছেড়ে চলে আসছেন। বিমানবন্দরে বা বাস টার্মিনালে তিল ধারণের জায়গা নেই। বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ সব বিমান সংস্থাকে অনুরোধ করেছে যে আগামী কয়েকদিন কাশ্মীর থেকে অতিরিক্ত বিমান চালানোর জন্য তারা যেন প্রস্তুত থাকে। বিবিসিবাংলার প্রতিবেদন অবলম্বনে।