তালা

খেশরায় এক গৃহবধুকে গণর্ধণের সাত দিন পর থানায় মামলা

By daily satkhira

March 18, 2017

পাটকেলঘাটা প্রতিনিধি : গণধর্ষণের এক সপ্তাহ পর থানায় মামলা হলেও আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের পর বাড়ি ফেরার পথে ধর্ষিতা ওই গৃহবধুকে আসামিরা অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মহিবুল হাসানের কাছে জবানবন্দি দেওয়ার পর তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়নের সুজনশাহ গ্রামের এক দিনমজুর জানান, উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের দলিত সম্প্রদায়ের এক গৃহবধু  (২৭) গত ১০ মার্চ শুক্রবার দুপুর দুটার দিকে তারই এলাকার একটি বোরো খেতে কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে হরিহরনগর গ্রামের ইমান আলী শেখের ছেলে বিল্লাল হোসেন (৩৫), একই গ্রামের সামছুদ্দিন গোলদারের ছেলে রফিকুল গোলদার (৫০), শেখ নুনুবাচার ছেলে আজমারুল ইসলাম(৩৬) তার গলায় দা ধরে পার্শ্ববর্তী বিল্লাল হোসেনের শ্যালো মেশিন ঘরে ধরে নিয়ে যায়। পরে তাকে তিনজন পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে ফল ভাল হবে না জানিয়ে ধর্ষকরা চলে যায়। বিষয়টি গৃহবধু তাৎক্ষণিকভাবে স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে অবহিত করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি খেশরা ইউপি চেয়ারম্যান রাজীব আহম্মেদ রাজু, ইউপি সদস্য ছিদ্দিকুর রহমান, ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক ফারুক হোসেন পিণ্টুসহ কয়েকজনকে অবহিত করেন। ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি শালিসের মাধ্যমে মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলে থানায় যেতে নিষেধ করেন। এরপরপরই ধর্ষক ও তাদের লোকজন কিছু টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে ওই গৃহবধুর উপর চাপ সৃষ্টি করেন। চেয়ারম্যান কোন শালিস না করে ধর্ষণের আলামত নষ্ট করার চেষ্টা করছেন বুঝতে পেরে গত বুধবার ধর্ষিতা বাদি হয়ে উপরোক্ত তিনজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ সালের সংশোধিত ২০০৩ এর ৯(৩) ধারায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ পরদিন অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে শুক্রবার দুপুরে ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা ও ২২ ধারায় জবানবন্দির জন্য মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মঞ্জুরুল হাসান মাসুদের মাধ্যমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও আদালতে পাঠানো হয়। এ সময় ধর্ষিতার সঙ্গে ছিলেন তার শ্বাশুড়ি ও বড় ছেলে (৭)। সদর হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে বিকেল চারটার দিকে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মহিবুল হাসান তার ২২ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করেন। পরে তাকে নিজ জিম্মায় ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। খেশরা ইউপি চেয়ারম্যান রাজীব আহম্মেদ রাজু জানান, তিনি ধর্ষণের ঘটনায় শালিস করতে চাননি। উভয়পক্ষকে ডেকে বিস্তারিত ঘটনা জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ধর্ষিতার বাবা ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন জানান, শুক্রবার বিকেলে আদালত থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর সে, তার ছেলে ও শ্বাশুড়ি বাড়ি বা কোন আত্মীয়ের বাড়িতে ফেরেনি। আশঙ্কা করা হচ্ছে প্রভাবশালী আসামি ও তার স্বজনরা বাড়ি ফেরার পথে কোন এক স্থান থেকে তাদেরকে অপহরণ করে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য রোববার এফিডেফিড করে নেওয়ার জন্য জিম্মি করে রেখেছে। শনিবার বিকেল তিনটার দিকে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হাসান মাসুদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি বিশ্রামে আছেন, সন্ধ্যার পর যোগাযোগ করুন। তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান হফিজুর রহমান জানান, ভিকটিমের আদালত থেকে বাড়ি না ফেরার বিষয়টি তার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।