আন্তর্জাতিক

মোদির দাবি জম্মু-কাশ্মীরে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে

By Daily Satkhira

August 08, 2019

বিদেশের খবর: ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করায় জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এ মন্তব্য করেন।

গত সোমবার ভারতের রাজ্যসভায় দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের ঘোষণা দেন। এর মধ্য দিয়ে ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের ৭০ বছরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে নরেন্দ্র মোদির সরকার। সংবিধানের এই ৩৭০ ধারা বাতিল করার পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীর থেকে লাদাখকে আলাদা করা হয়। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই স্বায়ত্তশাসিত ছিল জম্মু-কাশ্মীর। নিজস্ব সংবিধান, আলাদা পতাকা ও স্বতন্ত্র আইন বানানোর অধিকার ছিল ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের। তবে ৩৭০ ধারা বাতিল করায় জম্মু-কাশ্মীরের পরিচিতি হবে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে।

সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর বৃহস্পতিবারই প্রথম জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, ‘কাশ্মীর ও লাদাখের মানুষ দীর্ঘদিন যে সমস্যার মধ্যে ছিলেন, তা শেষ হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। বহু মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’

৩৭০ অনুচ্ছেদের জন্য জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের কী লাভ হয়েছে– এমন প্রশ্ন তুলে মোদি বলেন, ‘৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং ৩৫এ ধারা জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ, পরিবারবাদ ছাড়া আর কিছু দেয়নি। জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের উন্নয়ন হয়নি। আমার বিশ্বাস, এই নতুন ব্যবস্থায় আমরা সবাই মিলে জম্মু-কাশ্মীরকে সন্ত্রাসমুক্ত করবো।’

তিনি বলেন, ‘আইন তৈরির সময় সংসদে অনেক আলোচনা, বিতর্ক হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে আইন তৈরি হয়, তা দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যই তৈরি হয়। কিন্তু এই আইন দেশের একটি অংশে কার্যকরীই হতো না। দেড় কোটির মতো মানুষ সেই কল্যাণ, সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিতই থেকে যেত। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল হওয়ায় জম্মু-কাশ্মীর এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসবেই।’

মোদি বলেন, ‘নতুন ব্যবস্থাপনায় জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ বহু সুবিধা পাবেন। অন্যান্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মতো বহু সুবিধা এখানকার মানুষ পাবেন। জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশকর্মীরা অনেক সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন, সেগুলো পূরণ করা হবে।’

এ প্রসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, লাদাখ সবচেয়ে বড় পর্যটনস্থল হতে চলেছে। সৌরশক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে লাদাখ হতে পারে সারা দেশের দিশা। লাদাখের মানুষের ভালো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ সুবিধা পাবে। কেন্দ্র সরকার লাদাখের মানুষের কাছে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলোর সুবিধা পৌঁছে দেবে।’

সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের যুব সম্প্রদায় অনেক এগিয়ে যাবে এমনটা দাবি করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, খেলাধুলার প্রভূত উন্নতি হবে, সারা বিশ্বে তাদের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পাবে। খেলার দুনিয়ায় কাশ্মীরের যুবারা দেশের মান আরও বাড়াবে।

তিনি বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মীরকে সেরা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সবাইকে কাজ করতে হবে। একটা সময় ছিল, সিনেমার শুটিংয়ের জন্য জম্মু-কাশ্মীরই ছিল অন্যতম গন্তব্য। কিন্তু অশান্তির জন্য সেটা বন্ধ ছিল। এবার নতুন ব্যবস্থাপনায় সেই অবস্থা আবার ফিরে আসবে। বলিউড, তেলুগু, তামিল সিনেমার লোকজনকে আর্জি জানাব, ফের উপত্যকায় শুটিংয়ে আসতে।’

জম্ম-কাশ্মীরের মানুষ দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পাবেন– এমন আশ্বাস দিয়ে মোদি বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মীরের মানুষকে আমি আশ্বস্ত করছি, আপনাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার খুব শিগগিরই প্রতিষ্ঠিত হবে। দীর্ঘদিন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীরে চালু রাখার প্রয়োজন হবে বলে আমি মনে করি না। তবে লাদাখে চালু রাখতে হবে।’

জম্মু-কাশ্মীরের মানুষকে আসন্ন ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাই। তারা ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে মুষ্টিমেয় কিছু লোক অশান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে। জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের ঈদ উদযাপনে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করা হবে।’

জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখকে নতুনভাবে গড়ে তোলার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, জম্মু-কাশ্মীর আমাদের দেশের মুকুট। জম্মু-কাশ্মীরের জন্য অনেকে শহীদ হয়েছে, অনেকে প্রাণ দিয়েছে। তাদের সবার স্বপ্নই ছিল সমৃদ্ধ ও সুরক্ষিত কাশ্মীর তৈরি। আমরা সবাই মিলে সেই স্বপ্ন পূরণ করবো। জম্মু-কাশ্মীর, লাদাখের ভাই-বোনেদের প্রতি আমার আহ্বান– আসুন, আমরা সবাই মিলে নতুন জম্মু-কাশ্মীর ও নতুন লাদাখ তৈরি করি।’ সূত্র: এনডিটিভি ও বিজনেস টুডে