ভিন্নরকমের খবর: পোশাককর্মী স্ত্রীর জমানো ৪০ হাজার টাকা ভোগ করার জন্য তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ১৫ টুকরো করেছে বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি স্বামী। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গিলারচালা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘরের ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে নিহতের পাঁচ টুকরো মাংস পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় উদ্ধার করেছে।
বুধবার (১৪ আগস্ট) বিকেলে গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার তাঁর কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) রাত ২টার দিকে ঢাকার আশুলিয়া থানার কবিরপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে শ্রীপুর থানা পুলিশ।
পুলিশ সুপার জানান, পারিবারিক কলহ ও স্ত্রীর জমানো ৪০ হাজার টাকা ভোগ করার জন্য স্ত্রী সুমি আক্তারকে হত্যা করে স্বামী মামুন। গত ৮ আগস্ট স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে সে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৫ কেজি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ২৫০ গ্রাম পলিথিন ব্যাগ, একটি চাকু, তিনটি ট্রাভেল ব্যাগ ও ঘুমের ওষুধ কিনে বাসায় রাখে মামুন। রাতে কৌশলে স্ত্রীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে সে। একই রাত ১টার দিকে সুমিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে লাশের হাত ও দুই পা ৮ টুকরো, উরু থেকে ৫ টুকরো, বুক থেকে পেট পর্যন্ত এক টুকরোসহ মোট ১৫টি টুকরো করে ঘাতক মামুন।
গ্রেফতার মানুনের হত্যার বর্ণনার বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার আরও জানান, হত্যার পরদিন ৯ আগস্ট ভোর ৬টায় লাশের শরীরের অংশগুলো ট্রাভেল ব্যাগে ভর্তি করে মামুন। পরে সেগুলো গাজীপুরের সিংহশ্রী সেতুর ওপর থেকে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়। একইদিন রাতে দেহের অন্যান্য অংশের ৫টি টুকরো বাসার ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে পলিথিনে পেঁচিয়ে রেখে হাত, পায়ের টুকরো ও মাথা আরেকটি ট্রাভেল ব্যাগে নিয়ে একইস্থানে ফেলে দেয়।
এদিকে, তাদের ভাড়া বাসায় এসে সুমি আক্তারের স্বজনেরা কোনো খোঁজ না পেয়ে বাসার তালা ভেঙে নতুন তালা লাগিয়ে যায়। যে কারণে ওই ৫ টুকরো নিতে না পেরে মামুন পালিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (১২ আগস্ট) শ্রীপুর থানার এসআই রাজীব কুমার সাহা জানান, বিকালে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় ঘরের ড্রেসিং টেবিলের ভেতর থেকে পলিথিনে মোড়ানো এক নারীর মৃত দেহের পাঁচ খণ্ড উদ্ধার করে পুলিশ। লাশটি ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার নিজাম উদ্দিনের মেয়ে সুমি আক্তারের (২৩) বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, সুমি শ্রীপুর উপজেলার গিলারচালা এলাকার সাবলাইম গ্রিনটেক নামের পোশাক কারখানার সুইং অপারেটর ছিলেন। প্রায় দেড় বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। এটা ছিল তাদের দুইজনের দ্বিতীয় বিয়ে। স্বামী ওই এলাকায় ইলেকক্ট্রিশিয়ানের কাজ করেন। বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলছিল।
নিহতের ছোট বোন বৃষ্টি একই কারখানায় চাকরি করেন। বৃষ্টি একই এলাকায় অন্য বাড়িতে ভাড়া থাকেন। বৃহস্পতিবার বেতন দিয়ে কারখানায় ঈদের ছুটি হয়ে যায়। শুক্রবার তাদের একই সঙ্গে বাড়ি যাওয়ার কথা। সুমি কারখানা থেকে ঈদ বোনাস ও বেতনসহ ৩০হাজার টাকা পেয়েছেন। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য ওই টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। শুক্রবার সকালে বাড়ি যাওয়ার সময় সুমিকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও না পেয়ে বৃষ্টি ও তার স্বামী নবী হোসেন গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের উদ্দেশে রওনা হন। তারা বাড়িতে পৌঁছে একাধিকবার বড় বোন ও ভগ্নিপতির মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও তাদের ফোন বন্ধ পান।
শনিবার বৃষ্টি ও তার স্বামী আসপাড়া মোড় এলাকায় বোনের ভাড়া বাসায় যান। সেখানে কাউকে না পেয়ে ঘরের দরজার তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকেন। সেখানে কাউকে না পেয়ে ফিরে যান তারা। পরে শনিবার সকালে তারা আসপাড়া মোড় এলাকায় মামুনের সন্ধান পান এবং তাকে ধরে ভাড়া বাসার দিকে রওনা দেন। এক পর্যায়ে মামুন তাদের ভাড়া বাসায় যেতে বলে কৌশলে পালিয়ে যায়।
এরপর বৃষ্টি ও তার স্বামী গ্রামের বাড়ি ফিরে যান। বাড়ি গিয়েও বোনকে না পেয়ে আবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু বোন-ভগ্নিপতির কোনো সন্ধান পাননি বৃষ্টি। পরে সোমবার বিকালে আবার তারা আসপাড়া মোড় এলাকার ওই ভাড়া বাসায় যান এবং ঘরের ভেতরে ঢুকেন। এক পর্যায়ে তারা ঘরে থাকা ড্রেসিং টেবিলের নিচ থেকে মেঝেতে রক্তাক্ত পানি গড়াতে দেখতে পান এবং ঘরের ভেতর দুর্গন্ধ পান।
পরে তারা সোমবার রাত ৮টার দিকে ড্রেসিং টেবিলটির ড্রয়ার খুলে চারটি পলিথিনে মোড়ানো মানবদেহের পাঁচটি টুকরা দেখতে পান। তবে সেখানে তার মাথা, হাত ও পা ছিল না। বিষয়টি শ্রীপুর থানা পুলিশে জানানো হয়। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে শ্রীপুর থানা পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে দায়ের করেছেন শ্রীপুর থানায় ।