দেশের খবর: বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় স্থানীয় সাংসদপুত্র সুনাম দেবনাথকে আসামি না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন আসামি।
মঙ্গলবার আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার সময় আসামি রিফাত ফরাজি, তার ভাই রিশান ফরাজিসহ কয়েকজন সুনাম দেবনাথকে এ হত্যাকাণ্ডের ‘নির্দেশদাতা’ বলে দাবি করেন।
তবে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের নেতা সুনাম বলছেন, তার দুর্নাম রটাতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ইন্ধনে এই হত্যাকাণ্ডে তার নাম জড়ানো হচ্ছে।
গত ২৬ জুন রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে সুনাম। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক।
বহুল আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার পর বুধবার ১৪ আসামিকে বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করা হয়।
আদালতের কার্যক্রম শেষে আসামিদের কারাগারে নেওয়ার জন্য আদালত চত্বর থেকে প্রিজনভ্যানে তোলা হয়।
তখন রিফাত ফরাজিসহ কয়েকজন আসামি সাংবাদিকসহ অন্যদের উদ্দেশে বলেন- তাদের সঙ্গে যা হচ্ছে তা অন্যায়। সুনাম দেবনাথ রিফাত শরীফ হত্যার ‘নির্দেশদাতা’। তাকে কেন এই হত্যা মামলায় আসামি করা হয়নি। আইনজীবী সুনাম বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “মামলার প্রধান দুই আসামি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে। তারা আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। ওই প্রতিপক্ষের ছত্রচ্ছায়ায় এরা এসব অপকর্ম করে বেড়াত। তাদের শেখানো কথাই এখন আসামিরা বলে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করছে।”
বরগুনার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন আওয়ামী লীগেরই নেতা। তিনিও এক সময় সংসদ সদস্য ছিলেন। রিফাত হত্যামামলার মূল আসামি রিফাত ও রিশান ফরাজী স্বজন হলেও তাদের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক নেই বলে দাবি করে আসছেন দেলোয়ার।
রিফাত হত্যাকাণ্ডের পর তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির যোগসাজশের ইঙ্গিত সুনাম তার ফেইসবুক পোস্টে করেছিলেন। পরে তা সরিয়েও নেন। হত্যামামলা দায়েরের সময় সাক্ষীর তালিকায় মিন্নির নাম থাকলেও এখন তিনিও একজন আসামি।
রিফাত হত্যাকাণ্ডে নেপথ্যে মাদকের বিরোধের বিষয়টি অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। আর এই মাদকচক্রের মদদদাতা হিসেবে সুনামের নাম বলেছিলেন বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসা সুনাম রিফাত হত্যাকাণ্ডেও জড়িত থাকার অভিযোগ নাকচ করে সাংবাদিকদের বলেন, “আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখুন, ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে কেউ কোথাও আমার সম্পৃক্ত থাকার কথা বলেছে কি না? যদি সেখানে তারা এসব না বলে থাকে, তবে এখন এমন বক্তব্যের মানে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।”
মঙ্গলবার ১৪ আসামিকে সকালে বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচার হাকিম সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করা হয়। গ্রেপ্তার ছয় আসামি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের যশোরে শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচার। বাকি আসামিদের জেলা কারাগারে নেওয়া হয়।
আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।