খেলা

দেশের মাটিতে আফগান চাপে হিমশিম বাংলাদেশ

By Daily Satkhira

September 07, 2019

খেলার খবর: পৃথিবীর সব ঝড়ই দেখা যায়, শুধু দেখা যায় না হৃদয়ের ঝড়। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মনের ভেতরে তেমনি এক প্রবল ঝড় উঠেছে। স্বপ্নের জানালা-দরজা দিয়ে যার ঝড়ো হাওয়া ঢুকে পড়ে কেমন লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে সবকিছু। আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র এই টেস্ট ম্যাচটি জিতে হঠাৎ এলোমেলো হওয়া দেশের ক্রিকেটকে স্বাভাবিক করতে চেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। তার সে স্বপ্ন শেষ হয়ে না গেলেও চূর্ণ হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে আফগান-ঝড়। টেস্ট পরিবারের নতুন সদস্য আফগানিস্তান এমন একটা ঝাঁকুনি দেবে কে জানত। ব্যাটিং ও বোলিংয়ে কী পারদর্শিতাই না দেখাল তারা! প্রথমে ব্যাটিং নিয়ে অলআউট হওয়ার আগে করল ৩৪২ রান। এরপর বোলাররা ১৯৪ রানে স্বাগতিক আট ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফিরিয়ে চট্টগ্রাম টেস্টের লাগাম টেনে রাখল নিজেদের হাতেই। কোনো সন্দেহ নেই, রশিদ খানরা চেষ্টা করবেন প্রথম ইনিংসের ধারাবাহিকতা দ্বিতীয় ইনিংসে ধরে রেখে ইতিহাস গড়তে। স্বাগতিক খেলোয়াড়দের হৃদয় পুড়িয়ে আনন্দ বিলাস করার যে স্বপ্ন তারা দেখছেন, তা তাদের চোখের ভাষা থেকে পড়ে নেওয়া যায়। যদিও সাকিব এখনও জয়ের স্বপ্ন দেখেন ও দেখাচ্ছেন। টাইগার দলপতি জানালেন, এই ম্যাচ জিতে চাপকে বনবাসে পাঠাবেন তারা। শেষ পর্যন্ত এই টেস্ট বাংলাদেশ জিতলেও গত দু’দিনের চাপের কথা ভোলার নয় ক্রিকেটারদের। একদিন আগেই তাইজুল ইসলাম বলেছেন, উইকেটে বোলারদের জন্য কিছু নেই। বল টার্ন তো করেই না, সোজাও যায় না। গতকাল এক বেলাতেই উইকেট যে ভোঁজবাজির মতো বদলে গেছে, তাও নয়। উইকেট ব্যাটিংবান্ধবই আছে, প্রতিপক্ষের বোলিং বৈচিত্র্যের কাছে ধরাশায়ী হন তারা। অথচ মাত্র দুই টেস্টের অভিজ্ঞতা নিয়ে খেলতে নামা ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়ে সৌরভ ছড়াল আফগানিস্তান। রহমত শাহ সেঞ্চুরি, আসগর আফগান ৯২, রশিদ খান ৫০ করলেন, আফগানিস্তান পেল ৩৪২ রান। এরপর ১৯ বছর টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বাংলাদেশকে তাদেরই মাঠে প্রথম ইনিংসে বিপর্যস্ত করে তোলে বোলারদের সুকৌশল বোলিং দিয়ে। অলআউট পারফরম্যান্স দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভিতটাকেই নাড়িয়ে দেন টেস্ট পরিবারের এই কনিষ্ঠ সদস্য। ভূমিকম্প হলে তবুও রিক্টার স্কেল থেকে কম্পনের মাত্রা জানা যায়, ক্রিকেট মাঠের এই কম্পন নির্ণয়ে কোনো পরিমাপক নেই। এর ঝাঁকুনিটা যে সরাসরি দেশের কোটি কোটি ক্রিকেটভক্তের হৃদয়ে গিয়ে লেগেছে, ক্রিকেট-সংশ্নিষ্ট সবাই তা ভালো করেই বুঝতে পারছেন। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টাইগারদের এমন ক্রিকেট প্রদর্শনী দেশের ক্রিকেটের ইমেজকেও কি কম ধাক্কা দিল?

প্রথম দিন পাঁচ উইকেটে ২৭১ রানে শেষ করেছিল আফগানিস্তান। দ্বিতীয় দিন প্রথম সেশনে ৭১ রান যোগ হলো বাকি পাঁচ উইকেটে। প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনেও তাইজুল ইসলাম ব্রেকথ্রু এনে দেন আসগর আফগানকে ৯২ রানে মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ বানিয়ে। এদিন চার রান যোগ করতে পেরেছেন ৩১ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যান। বাঁহাতি এ স্পিনার জোড়া আঘাত করেন ৪১ রানে আফসার জাজাইকে বোল্ড আউট করে। সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ দ্রুতই বাকি তিন উইকেট তুলে নিলেও রশিদ খান ওয়ানডে স্টাইলে খেলে ৬১ বলে ৫০ রানের ক্যামিও ইনিংস দিয়ে দলীয় সংগ্রহকে নিজেদের সর্বোচ্চ উচ্চতায় নিয়ে যান। টেস্টে আফগানিস্তানের আগের সর্বোচ্চ ছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩১৪ রান। আগের দুই টেস্টে কোনো হাফ সেঞ্চুরি ছিল না রশিদ খানের। গতকাল বাংলাদেশের মাটিতে সেটা করতে পেরে দারুণ রোমাঞ্চিত ছিলেন এ অলরাউন্ডার। সফরকারীদের বেঁধে ফেলতে তাইজুল চার আর সাকিব ও নাঈম ইসলাম দুটি করে উইকেট নেন।

মধ্যাহ্ন বিরতির আগে আগে ১৯ মিনিট ব্যাট করে বাংলাদেশ। টাইগাররা বিরতিতে যায় চার ওভারে এক উইকেটে এক রান নিয়ে। ওপেনিং ওভারে পেসার ইয়ামিন আহমেদজাইয়ের আউটসুইং বলে ক্যাচ আউট হন সাদমান ইসলাম। আগের তিন টেস্টে দুই অঙ্কের রানে থাকা এ ওপেনার এই প্রথম শূন্যতে আউট হন। লিটন তিনে নেমে কিছুটা সময় সামাল দেন। দ্বিতীয় সেশনে লিটন ও মুমিনুল কিছুটা চড়াও হন বোলারদের ওপর, যাতে করে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যায়। কিন্তু সে কৌশল খুব একটা কাজে দেয়নি। বৈচিত্র্যময় বোলিং দিয়ে একের পর এক উইকেট তুলে নেয় সফরকারীরা। লিটন ৩৩, মুমিনুল ৫০ রান করেন। মুশফিক, সাকিব, মাহমুদুল্লাহর মতো অভিজ্ঞ এবং তারকা ব্যাটসম্যানরা উইকেট ছুড়ে দেওয়ায় একটা সময়ে ফলোঅনের শঙ্কায় পড়ে দল টাইগাররা। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও তাইজুল ইসলাম ৪৮ রানের জুটি গড়ে সাকিবকে নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। মোসাদ্দেক ৪৪ আর তাইজুল ১৪ রানে অপরাজিত থেকে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেন। আজ এই জুটির দিকেই তাকিয়ে থাকবে টাইগার ড্রেসিংরুম। বিশেষ করে সাকিবের প্রত্যাশা, শেষ দুই উইকেটে দলের রান আড়াইশ’ ছাড়াবে। আর ৭০ থেকে ৮০ রান যোগ হলেই বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেরার সম্ভাবনা দেখছেন অধিনায়ক। আর সেটা পারলে মনের ঝড়ও থামবে মনে হয়।