ডেস্ক রিপের্ট: সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যন্ত্রপাতি ক্রয়ের নামে ১৬ কোটি ৩১ লক্ষাধিক কোটি আত্মসাতের মামলায় সাবেক সিভিল সার্জন ডাঃ তৌহিদুর রহমানের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেয়া হয়েছে। আজ সোমবার সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমানের আদালত এ আদেশ প্রদান করেন। উল্লেখ্য, মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাকে হয়রানী না করার নির্দেশনা ছিল। তিনি সাতক্ষীরা দায়রা জজ আদালতে গতকাল রোববার সকালে জামিনের আবেদন জানান। কিন্তু উচ্চ আদালতের জামিনের মেয়াদ শেষ না হওয়ায় পরে সেটি প্রত্যাহার করে নেন। আজ সকালে তিনি সাতক্ষীরা দায়া জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন জানালে আদালত তা নামঞ্জুর করে। এসময় ডা. তৌহিদের জামিনের বিরোধিতা করেন সাতক্ষীরায় দুদক এর প্যানেল আইনজীবী অ্যাড. মোস্তফা আসাদুজ্জামান দিলু, অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু, অ্যাড. খায়রুল বদিউজ্জামান, অ্যাড. শাহেদুজ্জামান ও অ্যাড. সালাউদ্দীন ইকবাল লোদী। আসামি ডা. তৌহিদের পক্ষে জামিনের আবেদন জানান, অ্যাড. অ্যাড. এম শাহ আলম ও অ্যাড. শহিদুল ইসলাম পিন্টু ।
উল্লেখ্য, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালসহ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ১৮ কোটি টাকার মালামাল ক্রয়ে দুর্নীতির ঘটনায় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেফতার করে বিচারের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন শুরু করে। নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরা মানববন্ধন ও অসংখ্যা প্রতিবাদ সভা করার পর গত ২৪ এপ্রিল সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিস ঘেরাও করে এবং প্রধানমন্ত্রী ও দুদক চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে। এ ঘটনায় দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) খুলনা জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের পক্ষে এ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামি সাতক্ষীরার সাবেক সিভিল সার্জন তাওহীদুর রহমানসহ ৯ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক সূত্র জানায়, পুলিশের বিশেষ শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, মামলার এসব আসামি দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন বলে দুদক বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছে। তাই তাঁদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া প্রয়োজন।
৯ জুলাই এই ৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা করেন প্রধান কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক জালাল উদ্দিন।
আসামিদের নাম : ১. ডাঃ তাওহীদুর রহমান , সাবেক সিভিল সার্জন, সাতক্ষীরা। ২. এ,কে, এম ফজলুল হক, স্টোর কিপার , সিভিল সার্জন অফিস, সাতক্ষীরা। ৩. মোঃ আনোয়ার হোসেন, হিসাব রক্ষক, সিভিল সার্জন অফিস, সাতক্ষীরা। ৪. মোঃ জাহের উদ্দিন সরকার, প্রোপাইটর : মেসার্স বেঙ্গল সায়েন্টিফিক এন্ড সার্জিকেল কোং। ৫. মোঃ আব্দুর ছাত্তার সরকার, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর। ৬. মোঃ আহসান হাবিব, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর। ৭. মোঃ আসাদুর রহমান, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর। ৮. কাজী আবু বকর সিদ্দীক, মাদারীপুর। ৯. এ,এইচ,এম আব্দুস কুদ্দুস, সহকারী প্রকৌশলী (অব:), নিমিউ এন্ড টিসি, ঢাকা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যন্ত্রপাতির কোনো ধরনের চাহিদাপত্র না থাকা সত্ত্বেও যন্ত্রপাতি কেনার উদ্যোগ নেন। জাল জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয়, অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে দরপত্র আহ্বান, দরপত্র সংগ্রহ, দরপত্র মূল্যায়ন ও কার্যাদেশ দিয়ে তিনটি মিথ্যা বিলের বিপরীতে মোট ১৬ কোটি ৬১ লাখ ৩১ হাজার ৮২৭ টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
এ মামলার আসামী হিসাবরক্ষক আনোয়ার হোসেন ইতোমধ্যে আত্মসমার্পণ করে জেল হাজতে রয়েছে।