ফিচার

কালচে লোমে ছেয়ে যাচ্ছে শিশু তাসফিয়ার সারা দেহ

By Daily Satkhira

September 19, 2019

ভিন্ন রকমের খবর: সাড়ে চার বছর বয়সী শিশু তাসফিয়া জাহান মনিরা । জন্মের পর থেকেই সে আক্রান্ত হয়েছে বিরল রোগে। শিশুটির শরীরে গজাচ্ছে পশুর মতো লোম। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিস্তৃত হচ্ছে এই রোগ। তার শরীরের চার ভাগের তিন ভাগ অংশেই লম্বা কালচে মোটা পশুর লোম গজিয়েছে। বর্তমানে তাসফিয়া বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের ব্লক-সি’র ৩নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার গোডাউন পাড়ার মাসুদুজ্জামান মামুনের ছোট মেয়ে তাসফিয়া জাহান মনিরা। বাবা মামুন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। জন্ম থেকেই তার সারা শরীরের কিছু অংশ লম্বা কালচে পশমে আবৃত। এখন গোটা শরীরজুড়ে সেটার বিস্তার ঘটছে, এমনকি মুখের মধ্যেও।

শিশু তাসফিয়ার বাবা মামুন জানান, জন্মের মাত্র ছয় দিনের শিশুকন্যা তাসফিয়াকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসকদের একটি দল মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে তাঁরা এটিকে বিরল চর্ম রোগ বলে শনাক্ত করেছেন এবং শিশুটির অন্তত ৩/৪ বছর বয়স হলে উন্নত চিকিৎসার করার জন্য ঢাকা অথবা ভারতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। সেই অনুযায়ী চলতি মাসের ৬ তারিখ ঢাকায় এসে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে বঙ্গবন্ধু হাসপাতাল গিয়ে আলাপকালে তাসফিয়ার মা তানজিলা খাতুন বলেন, জন্মের পর মেয়ের (তাসফিয়া) শরীরের পেছনে ছোট্ট একটি তিল ছিল। বয়স যখন ৬ মাস পার হলো, তখন তিল ফেটে লোম বের হয়। এরপর বেশ কয়েকদিন ওই স্থান থেকে দুর্গন্ধ বের হতে লাগলো, এরপর আবার স্বাভাবিক হয়েছে গেল। ১ বছর পর তাসফিয়ার সারা শরীরে তিল দেখা দিলো। পরে শরীরের পেছনের দিকের তিলটা বড় হতে লাগলো, মনে করছিলাম তিল। পরে এলাকার চিকিৎসকদের কাছে যায়। এতেও কোন কিছু হয়নি। এই থেকে এ পর্যন্ত শরীরের পেছনের দিকে লোম ছড়িয়ে পড়লো।

তিনি বলেন, তাসফিয়া স্বাভাবিকভাবে কাপড় পরলেও মাঝে-মাঝে শরীরের তাপ বেড়ে যায়। এ সময় সে শরীরে কাপড় রাখতে পারে না। আবার মাঝে মধ্যে চুলকানিও হয়।

চিকিৎসা সেবা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রামে থাকাকালীন মেয়ের চিকিৎসা খরচ তার বাবা করেছেন। ঢাকায় আসার পর চিকিৎসার সব খরচ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কর্তৃপক্ষ বহন করছেন। মেয়ের চিকিৎসা সেবায় মেডিকেলের চর্ম ও যৌগ বিশেষজ্ঞ ডা. শহিদুল্লাহ সিকদার নিজেই দায়িত্ব নিয়েছেন। বর্তমানে ১০-১২টি রিপোর্ট করা হয়ে গেছে, বৃহস্পতিবার আরও একটি রিপোর্ট করার কথা বলেছেন চিকিৎসক।

তাসফিয়ার বর্তমান অবস্থা নিয়ে চিকিৎসকের উদ্ধৃতি দিয়ে মা তানজিলা বলেন, চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখছেন, রিপোর্ট ও দিচ্ছে। এখনো সুনির্দিষ্ট কিছুই বলেননি চিকিৎসকরা। আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি রাখিনি। তবু মায়ের মন তো আর মানে না। আমাদের দুই মেয়ের মধ্যে তাসফিয়া ছোট। মেয়ের স্বপ্ন ছিলো বড় হয়ে ডাক্তার হবে, সে স্বপ্ন আজ শুধু স্বপ্নেই থেকে গেলো। আমার মেয়েকে আমি সুস্থ দেখতে চাই, এভাবে না এমন আকুতি জানান তাসফিয়ার মা।