দেশের খবর: অবৈধভাবে ক্যাসিনো ও জুয়া চালানোর দায়ে মতিঝিলের আরামবাগ, দিলকুশা, ভিক্টোরিয়া ও মোহামেডান ক্লাবে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে পুলিশ। একই সঙ্গে ক্লাবগুলো থেকে ক্যাসিনো ও জুয়া খেলার সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।
মতিঝিল বিভাগের ডিসি আনোয়ার হোসেন এবং মতিঝিল জোনের এডিসি শিবলি নোমানের নেতৃত্বে পৃথকভাবে ক্লাবগুলোতে অভিযান পরিচালিত হয়। রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে ডিসি আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ভিক্টোরিয়া ও মোহামেডান ক্লাব এবং এডিসি শিবলি নোমানের নেতৃত্বে আরামবাগ ও দিলকুশা ক্লাবে অভিযান চালায় পুলিশ।
প্রায় চার ঘণ্টার অভিযানে ক্লাবগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ ক্যাসিনো ও জুয়ার সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। সেই সঙ্গে পাওয়া যায় নেশা সামগ্রী। অভিযান শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে চারটি ক্লাবেই তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। একই সঙ্গে ক্লাবগুলোতে থাকা ক্যাসিনো ও জুয়ার সামগ্রী জব্দ করে নিয়ে যায় পুলিশ।
ভিক্টোরিয়া ও মোহামেডান ক্লাব দুটি পাশাপাশি অবস্থিত। এর মধ্যে ভিক্টোরিয়া ক্লাবে অভিযান চালিয়ে নগদ এক লাখ টাকা, মদ, বিয়ার, জুয়া ও ক্যাসিনোর সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে পুলিশ। ভিক্টোরিয়া ক্লাব থেকে বের হয়ে ডিসি আনোয়ারের নেতৃত্বে পুলিশ মোহামেডান ক্লাবে প্রবেশ করে। এ ক্লাব থেকেও বিপুল পরিমাণ ক্যাসিনো ও জুয়ার সামগ্রী উদ্ধার করে।
মতিঝিল জোনের ডিসি আনোয়ার হোসেন জানান, ক্লাবের ভেতরের পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে এখানেও নিয়মিত ক্যাসিনো বসত। রাজধানীর এসব ক্লাবে ক্যাসিনোগুলো কতদিন ধরে চলছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ডিসি আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের কাছে খবর আসা মাত্রই অভিযানে এসেছি। কতদিন ধরে চলছে, কারা এর সঙ্গে জড়িত -এসব বিষয় তদন্ত করে দেখব।
চারটি ক্লাবই পুলিশের নাকের ডগায়, এটাতো অস্বীকার করার উপায় নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চারটি ক্লাবই পুলিশের নাকের ডগায় ছিল, এটা অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। তবে আমরা জানা মাত্রই অভিযান শুরু করেছি। ক্যাসিনো পরিচালনা করা অবৈধ। এখান থেকে যাদের নাম আসবে তারা যতই প্রভাবশালী হোক, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের এডিসি শিবলি নোমান জানান, বিকেল সাড়ে ৩টায় আরামবাগ ক্লাবে গিয়ে দেখা যায় সেখানে আগে থেকেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। অন্ধকারে সবকিছু দেখা যাচ্ছিল না। তবে সেখানে ক্যাসিনো চলে সেটা বোঝা যাচ্ছিল। এছাড়া অভিযানের খবর শুনে সবাই পালিয়ে গেছেন। দিলকুশায়ও কাউকে পাওয়া যায়নি।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে র্যাবের হাতে আটক হন ঢাকা দক্ষিণ মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। পরে অস্ত্র ও মাদকের পৃথক দুই মামলায় তাকে সাতদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
গত শুক্রবার রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে আটক করে র্যাব। এ সময় বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদক দ্রব্য ছাড়াও নগদ এক কোটি ৮০ লাখ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার ওপরে এফডিআর (স্থায়ী আমানত) করার নথি জব্দ করা হয়।
এছাড়া শুক্রবার রাতে রাজধানীর কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ক্লাবে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় ক্লাবটির সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজের কাছে সাত প্যাকেট গন্ধহীন হলুদ রঙের ইয়াবাসহ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র থাকায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। জব্দ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ক্যাসিনোতে খেলার কয়েন, স্কোরবোর্ড ও ৫৭২ প্যাকেট তাস। র্যাবের ধারণা, ক্লাবটি ক্যাসিনো খেলা হত।
একই রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি ক্লাবেও অভিযান চালানো হয়। তবে ক্লাবটি বন্ধ থাকায় সেখানে থাকা বারটি সিলগালা করে দেন র্যাব সদস্যরা।