সিলেট মহানগরের শিববাড়ির ‘আতিয়া মহল’-এর জঙ্গি আস্তানায় সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো ও সোয়াত টিমের চালানো অভিযান ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ অব্যাহত রয়েছে। তবে সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে সেখানে গোলাগুলির কোনও শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। কখন এ অভিযান শেষ হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেনি সেনাবাহিনী। তবে এর আগেই বাড়িটি থেকে ৭৮ জন বেসামরিক লোককে উদ্ধার করা হয়।
এদিকে ‘আতিয়া মহল’ নামের ওই ভবনটি থেকে উদ্ধার করা পরিবারগুলোর ব্যাপারে তথ্য দিতে একটি প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে সেনাবাহিনী। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ওই প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান জানান, ‘৫ তলা বিশিষ্ট আতিয়া ভবনে ৩০টি ফ্ল্যাটে ১৫০টি কক্ষ রয়েছে। এসব কক্ষ, সিঁড়িঘর ও আনাচে কানাচে বিস্ফোরক ছড়ানো ছিটানো রয়েছে। জঙ্গিরা বিস্ফোরক দিয়ে কমান্ডোদের প্রবেশে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। এজন্য অপারেশনটি অনেক সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হচ্ছে। তাই অনেক সময় লাগছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল ওই ভবনে আটকে পড়া নিরীহ পরিবারগুলোকে উদ্ধার করে আনা। সে লক্ষ্যে আমরা সফল হয়েছি। কিন্তু জঙ্গিরা এখনও ভেতরে আছে। আমরা খুব সতর্কতার সঙ্গে একটি করে কক্ষ ‘ক্লিয়ার’ করে যাচ্ছি।’’
এ অভিযান কখন শেষ হবে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে এই সেনা কর্মকর্তা জানান, ‘ অভিযান কখন শেষ হবে সেবিষয়ে এখনই আমরা সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছি না ‘
অভিযান রাতেও চলবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ এ বিষয়ে অভিযানের কমান্ডার সিদ্ধান্ত নেবেন।’
এর আগেই, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাশিদুল হাসান জানান, ‘ভবনটির বিভিন্ন ফ্ল্যাটে বসবাসকারী ৭৮ জন বেসামরিক লোককে নিরাপদে উদ্ধার করে আনা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ, ২৭ জন নারী ও ২১টি শিশু রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সেনা কমাণ্ডোরা চেষ্টা করছেন জঙ্গিদের জীবিত অবস্থায় গ্রেফতার করতে।’
উল্লেখ্য, সিলেট মহানগরের দক্ষিণ সুরমা থানার শিববাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহল’-এ অভিযান শুরু করেছে সোয়াট ও সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো বাহিনী। শনিবার ভোরে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে এ জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শুরু হয়।
শনিবার সকাল ৮টা থেকে ১৭ পদাতিক ডিভিশনের মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মোমেনের নেতৃত্বে অভিযান শুরু করে প্যারা কমান্ডো টিম। সকাল ১০টার দিকে ওই বাড়িতে একদিন অবরুদ্ধ থাকা মানুষগুলোকে বের করে আনা শুরু হয়। নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের আগে বের করা হয়। তাদের মেইন রোডে নিয়ে গাড়িতে করে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরপর দু’পক্ষের গোলাগুলি ও বিস্ফোরণে মাঝে মাঝেই কেঁপে উঠছে আতিয়া মহল।