নিজস্ব প্রতিনিধি : আপস নয়, আপসকামিতাও নয়, আপসহীনতাই ছিল তার আদর্শ। এই আদর্শে ভর করে নিজেকে গণমানুষের নেতা হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন তিনি। তার কর্মই তার আদর্শ, আন্দোলন সংগ্রামই তার পথ, তার নেতৃত্বই জনগনের পাথেয়। মঙ্গলবার সাতক্ষীরার প্রয়াত নাগরিকনেতা প্রবীন আইনজীবী ও বামধারার রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ এডভোকেট আবদুর রহিমের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীতে এসব কথা বলেন আয়োজক বক্তা সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা। তারা তাকে সাহসী সংগ্রামী নির্লোভ অজাতশত্রু দুর্নীতিবিরোধী এক পুরুষ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন এমন ক্ষণজন্মা মানুষের বড়ই অভাব এই সমাজে। আমাদের কাজ তার আদর্শকে উচ্চকিত করা, তার পথ ধরে তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করা। শ্রোতা দর্শক আর শুভাকাংখীর পদভারে উপচে পড়া সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের হলরুমে জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ আনিসুর রহিমের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় বক্তারা বলেন তিনি সাতক্ষীরার সব নাগরিক আন্দোলন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ছিলেন অগ্রগামী। কোনো ভয়ভীতি হুমকির তোয়াক্কা না করে কারও রক্তচক্ষুর পরোয়া না করেই তিনি এগিয়ে নিয়েছেন মানবাধিকারের আন্দোলন, ভূমিহীন আন্দোলন, কৃষক শ্রমিক বাস্তুহারা জনতার আন্দোলন। কোনা লোভ তাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। কোনো পদ তাকে ছিনিয়ে নিতে পারেনি। তিনি রক্তচক্ষুকে হুমকি দিয়েছেন, অন্যায়কে প্রত্যাখ্যান করেছেন, মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকারকে আলিঙ্গন করেছেন। জেলজুলুম তাকে তার পথ থেকে সরাতে পারেনি। তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অন্যায় অনিয়ম এবং সামাজিক দস্যুদের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন। স্মরণ সভার প্রধান অতিথি তালা কলারোয়া আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন সবার প্রিয় রহিম স্যার সমাজের দরিদ্র মানুষের কাছে ছিলেন এক নিবেদিত প্রাণ। তিনি তার পেশা আইন আদালত ছেড়ে বারবার মাঠে চলে এসেছেন সাধারণ মানুষের কাতারে। ভূমিহীনদের অধিকার আদায়, খাসজমি ভূমিহীনদের মাঝে বন্টন, সকল ন্যায়সঙ্গত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের তিনি ছিলেন নেতা। তার ডাকে আমরা সাড়া দিয়েছি, পথে নেমেছি। তিনি আইনজীবীদের সংগঠিত করেছেন, তাদেরকে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শামিল করেছেন। নির্মোহ ব্যক্তি হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার আদর্শের পথ ধরে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। স্মরণসভার অতিথি জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন বলেন রহিম স্যারের হাত ধরেই আমরা মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শামিল হয়েছি। তিনি আশির দশক থেকে চিংড়ি চাষ বিরোধী আন্দোলন, ১৯৮৮ তে বাঁকাল ইসলামপুরে ভূমি অধিকারের আন্দোলন, ১৯৯৮ তে ভূমিহীন আন্দোলনসহ সব আন্দোলনে আমাদের শমিল করেছেন। গণমানুষের নেতা হিসেবে তিনি মানুষের সুখ ও দুঃখের সাথী হয়েছেন। স্মরণসভার অতিথি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ বলেন প্রয়াত আবদুর রহিম স্যার কোনো বিষয়ে আপস করেন নি। তিনি ছিলেন আপসহীন নেতা। তিনি দরিদ্র মানুষের বন্ধু ছিলেন। তাদের সামাজিক যন্ত্রণা তাকে কষ্ট দিতো। এজন্য তিনি তাদের সাথী হয়ে কাজ করেছেন। তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন, কিন্তু আপসকামিতা পরিহার করেছেন। সব আন্দোলন সংগ্রামে তিনি সাহস দেখিয়েছেন। তিনি ভয়ভীতিকে তুচ্ছ জ্ঞান করেছেন। জেলা নাগরিক কমিটর সদস্য সচিব সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও কমিটির সদস্য আলিনুর খান বাবুলের সঞ্চালনায় প্রায় চার ঘন্টাব্যাপী স্মরণ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাপা সহ-সভাপতি নেতা শেখ নুরুল ইসলাম, জেলা বিএনপি নেতা এডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার আলি, জাপা সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশু, নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও বাসদ নেতা এডভোকেট আজাদ হোসেন বেলাল, জেলা মৎস্যজীবী সমিতির নেতা মো. রফিকুল ইসলাম, জেলা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ সভাপতি এডভোকেট ফাহিমুল হক কিসলু, সিপিবি নেতা আবুল হোসেন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ নেতা এডভোকেট আল মাহমুদ পলাশ, সাবেক পিপি এডভোকেট ওসমান গনি, প্রয়াত আবদুর রহিমের পুত্র নাগরিক কমিটি নেতা আনোয়ার জাহিদ তপন, জাসদ নেতা অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহি, জেএসডি নেতা সুধাংশু শেখর সরকার, জাসদ নেতা সরদার কাজেম আলি, বাসদ নেতা নিত্যানন্দ সরকার, ভূমিহীন নেতা ওহাব আলি সরদার, স্বদেশ পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ হারুনার রশীদ, বাংলাদেশ ভিশন পরিচালক অপরেশ পাল, মহিলা পরিষদ নেত্রী জোসনা দত্ত, দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক লায়লা পারভিন সেঁজুতি, উত্তরণ কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জমাদ্দার, জেএসডি নেতা মো. আবদুল জব্বার, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, প্রথম আলোর কল্যাণ ব্যানার্জি, প্রেসক্লাবের সাবেক সেক্রেটারি এম কামরুজ্জামান, ফয়জুল ইসলাম, আব্দুস সামাদ প্রমূখ। সভায় প্রয়াত নেতা আবদুর রহিমসহ সাতক্ষীরার নাগরিক আন্দোলনের প্রয়াত অন্যান্য সকল নেতার একসাথে স্মরণ এবং সকলকে নিয়ে একটি স্মরণিকা প্রকাশের ঘোষণা দেন জেলা নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ।