দেশের খবর: ঘরে শোনা যাচ্ছিল আট মাস বয়সী শিশু রিফাতের কান্না। ভেতরে তার মা-বাবা থাকলেও কারো কোনও সাড়া নেই। এক পর্যায়ে বাড়ির লোকজন গিয়ে দরজা খোলা পেয়ে ঘরে ঢুকে দেখতে পান বীভৎস এক দৃশ্য। মায়ের মরদেহ পড়ে ছিল বিছানায়। পাশে কাঁদছে রিফাত। পাশের কক্ষে গিয়ে তারা দেখতে পান চেয়ারে বসা অবস্থায় পড়ে রয়েছে রিফাতের বাবা নজরুল ইসলাম ম্যানার মৃতদেহ।
শুক্রবার সকালে এ ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী বাজার সংলগ্ন ভূষুটারী এলাকায়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নাগেশ্বরী থানা পুলিশ মৃতদেহ দুটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, ভূষুটারী গ্রামের প্রয়াত ছকিয়ত উল্লার ছেলে নজরুল ইসলাম। তার প্রথম স্ত্রী মর্জিনা বেগমের দুই ছেলে ও তিন মেয়ে হওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি। দ্বিতীয় স্ত্রী রুমি বেগমের সঙ্গে নজরুল থাকতেন ভূষুটারীতে। দ্বিতীয় স্ত্রীর আট মাস বয়সী ছেলে রিফাত।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে খাওয়া শেষে স্ত্রী রুমি আক্তারের কক্ষের পাশে আরেকটি কক্ষে ঘুমান নজরুল। সকাল ৮টার দিকে তাদের আট মাসের শিশু সন্তান দীর্ঘক্ষণ কান্না করলে কোনও সাড়া-শব্দ না পেয়ে বাড়ির লোকজন কক্ষে গিয়ে দুইজনের মৃতদেহ দেখতে পান।
স্থানীয়রা জানান, নজরুল কাঠ খড়ির ব্যবসা করতেন। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে দাদন ব্যবসা করে আসছেন তিনি। অনেকের সঙ্গে তার আর্থিক লেনদেন ছিল। অনেকের ধারণা- হত্যার পেছনে আর্থিক লেনদেনের বিষয় থাকতে পারে।
নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, কারও সঙ্গে তাদের বা তার ভাইয়ের বিরোধ নেই। ম্যানার বড় ভাই ফজর আলী বলেন, রাত-বিরাতে বাইরে যেত নজরুল। তার মদ্যপানের অভ্যাস ছিল।
নিহত রুমির ভাই সাদ্দাম হোসেনে আট মাস বয়সী রিফাতকে কোলে নিয়ে বলেন, আমরা বাড়ি থেকে খবর পেয়ে এসেছি। আগে বোন বা দুলাভাইয়ের কাছ থেকে শুনিনি যে কারও সাথে তাদের বিরোধ আছে। তবে অনেকের সাথে তার টাকা লেনদেন রয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি চাই। কোলে বোনের ছেলের দিকে তাকিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
নাগেশ্বরী থানার ওসি রওশন কবীর জানান, মৃতদেহের শরীরে তেমন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। গৃহবধূর মুখ ও নাক দিয়ে রক্ত ঝড়ার চিহ্ন রয়েছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেনহাজুল আলম বলেন, আমরা পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথার চেষ্টা করছি। সবদিক মাথায় রেখে তদন্ত শুরু হয়েছে। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনা হবে।