মোস্তাফিজুর রহমান, আশাশুনি: আশাশুনিতে নেশার জগতের বিভিন্ন নামের সাথে নতুন করে সংযোজন হয়েছে “ডান্ডি”। সর্বনাশা মরণ নেশা ডান্ডি সেবনে শতশত শিশুদের পাশাপাশি যুবক ও বয়স্করাও আসক্ত হয়ে পড়ছেন। এসব শিশু ও যুবকরা মাদকে নির্ভর হয়ে চলে যাচ্ছে অন্ধকার জীবনে। যাদের বেশির ভাগের বয়স ১০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। দেশে নেশার বাজারে প্রতিনিয়তই যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নেশার নাম। যেমন-হেরোইন, মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পলিথিন আর গামের (টলুইন) সমন্বয়ে তৈরি নতুন নেশা ‘ডান্ডি’সেবীদের সংখ্যা। জানাগেছে, পলিথিন ব্যাগের ভিতরে ‘আইকা’ বা জুতোয় ব্যবহৃত এক ধরনের আঁঠা ঢুকিয়ে কয়েক বার ঝাঁকি দিলেই প্রস্তুত “ডান্ডি”। এর পর শুধু নাক লাগিয়ে ঘ্রাণ নেয়া। কম দামের এ নেশার নাম ডান্ডি। ‘ডান্ডি’ নামে অধিক পরিচিত নেশাটি স্বল্প মূল্যের কারণে শিশু, যুবক ও ছিন্নমূল নারী-পুরুষ সবচেয়ে বেশি আসক্ত হয়ে ঝুকে পড়ছে এই নেশায়। এ ডান্ডি নেশা এখন আশাশুনির রাস্তা-ঘাট ও নির্জন এলাকায় চলছে নির্বিঘেœ সেবন। এসব নেশাখোররা আবার উঠতি মাস্তানে পরিনত হচ্ছে কেউ কেউ। আশাশুনির এসব নেশাখোররা নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে, ময়লা- আবর্জনা থেকে বোতল ভাঙারি খোঁজা, কাঁচা বাজারের কুলি, হোটেলে পানি দেওয়া, হোটেল বয়, ভিক্ষাবৃত্তি, পরিবহনের কাজ, ধান্দাবাজ, চুরি করা ও পকেট কাটার মত ভয়াবহ অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। ডান্ডি নেশার সাথে জড়িত অধিকাংশ উঠতি বয়সের যুবক। এদের অধিকাংশ সময় কাটে অলস আড্ডায় নতুবা রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকানে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাদের সবাই মাদকাসক্ত। বিভিন্ন ধরনের সস্তা নেশায় আসক্ত তারা। এসব নেশাগ্রস্থরা মাদক সেবনের টাকা যোগান দিতে অনেক সময় জড়িয়ে পড়ছে চুরি ও ছিনতাই, এর মত অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। ডান্ডি-সেবন করলে কি হয় এমন প্রশ্নের জবাবে জানা যায়, ডান্ডি সেবনের পর প্রচুর ঘুম আসে এবং ক্ষুধামান্দ্য দেখা যায়। ডান্ডি নেওয়ার ফাঁকে পলিথিনের ভেতরে জুতো কিংবা ফোমের কাজে ব্যবহৃত আঠা রয়েছে। এই আঠা থেকে একধরনের গন্ধ বের হয়। ওই গন্ধ বারবার টানলে নেশা হয়। এতে মাথা ঝিম ঝিম করে। নেশায় মনে হয় আকাশে উড়ছি। গ্রামগঞ্জের ছোট বড় দোকান সহ হার্ডওয়্যারের দোকানে পাওয়া যায় সলিউশন গামের কৌটা ‘ডান্ডি’। জুতো পলিশওয়ালা, মোটরসাইকেল বা সাইকেল মেরামতের দোকানিদের কাছ থেকেও এটা কিনে নেয় তারা। এটা ২০ টাকা বিক্রি হলেও এখন তা ৮০ থেকে ৯০ টাকায় দোকানিরা বিক্রি করছেন বলে জানা গেছে। জানা যায়, ডেনড্রাইট (ডান্ডি) স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। জুতো তৈরির আঠায় টলুইন নামের এক ধরনের তরল পদার্থ থাকে, যা বাষ্পীভূত হয়ে নিশ্বাসের সঙ্গে সেবনকারীদের দেহে ঢোকে। টলুইন সেবনে ক্ষণস্থায়ীভাবে ঝিমুনি, মাথাব্যথা, ক্ষুধা না লাগা ও নিয়ন্ত্রণহীনতার উদ্রেক করে। নিয়মিত এ নেশা গ্রহণে লিভার, কিডনিসহ ব্রেইনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিষক্রীয় করে ফেলে ডান্ডিসেবীদের। বেনজিন মিথাইলের প্রভাবে মস্তিস্ক বিকৃতির আশঙ্কা রয়েছে শতভাগ।