দেশের খবর: ইয়াবা কারবারিদের মতো ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের অর্থ ও সম্পদ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাজেয়াপ্ত করা হবে। ক্যাসিনোয় অভিযানে উদ্ধার টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, আইন-বিশেষজ্ঞ ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনু ও তার ভাই থানা আওয়ামী লীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়া, তাদের সহযোগী হারুন অর রশিদ ও আবুল কালামের বিরুদ্ধে ওয়ারী, গেণ্ডারিয়া ও সূত্রাপুর থানায় সাতটি মামলা হয়েছে। তবে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এনু অভিযানের আগে থাইল্যান্ডে চলে গেছে। অন্যদের ব্যাপারে পুলিশ কিছু জানে না।
এলাকাবাসী জানায়, দলের প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে এনু-রুপন থাকতে পারে। গা-ঢাকা দিয়েও তারা থাকতে পারে। এনু-রুপনের ১৫টি বাড়ির হদিসের কথা র্যাব বললেও এলাকাবাসী বলছে, তাদের আরও অনেক বেশি বাড়ি ও সম্পদ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মামলার সঠিক তদন্ত হলে কক্সবাজারের ভুট্টো পরিবারের মতো এনু-রুপন ও তাদের সহযোগীদের অবস্থা হবে। সিআইডির স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্সের ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ রোববার বলেন, মানি লন্ডারিং আইনে র্যাবের করা মামলাগুলোর মধ্যে চারটি সিআইডিতে এসেছে। আরও দুটি তাদের কাছে আসার পথে। তিনি বলেন, মানি লন্ডারিং মামলায় যে সব সম্পদ অবৈধভাবে উপার্জিত বলে প্রমাণিত হবে সেসব সম্পদ সরকার বাজেয়াপ্ত করবে।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বলেন, ক্যাসিনোতে অভিযানে উদ্ধার স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে। তিনি বলেন, অভিযানের পর টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার থানায় জমা দেয়া হয়েছে। সেগুলো আদালতের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে।
র্যাব সূত্র জানায়, ক্যাসিনো, জুয়াবাজি, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে পরিচালিত শুদ্ধি অভিযানে র্যাব এ পর্যন্ত ২০১ জনকে আটক করেছে। অভিযানে ক্যাসিনো ও জুয়া খেলার সামগ্রী, বিদেশি মদ, অস্ত্র, সিগারেট, বিয়ার, হেরোইন, কষ্টিপাথরের মূর্তিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম, কয়েকশ’ কোটি টাকা, ডলার, এফডিআর ও সঞ্চয়পত্রের কাগজপত্র এবং আট কেজির বেশি স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়। মতিঝিলে চারটি ও গুলশান এলাকায় একটি ক্ল্যাবের ক্যাসিনোতে অভিযান চালান র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আরামবাগের ইয়াংম্যান্স ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র ও গোল্ডেন ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ২০১ জনকে আটক করা হয়। তাদের কারও এক বছর, কারও ছয় মাস করে কারাদণ্ড হয়েছে। এসব ক্লাব থেকে নগদ ৪০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। অভিযানের প্রথম দিনে ইয়াংম্যান্স ক্লাবে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে গুলশানের বাসা থেকে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় অবৈধ অস্ত্র, মাদক, বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। এরপর তার কমলাপুরের অফিসে অভিযান চালিয়ে মাদক এবং টর্চারসেলে ব্যবহৃত মেশিন উদ্ধার করা হয়।
ঠিকাদার জি কে শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় নগদ এক কোটি ৮০ লাখ টাকা, নয় হাজার মার্কিন ডলার, ৭৫২ সিঙ্গাপুরি ডলার এবং ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ টাকার এফডিআর উদ্ধার করা হয়। বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার, মাদক ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করা হয়।
কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে অভিযান চালিয়ে ইয়াবা, অবৈধ অস্ত্র ও খেলার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। ক্লাবটির সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজকে গ্রেফতার করা হয়। রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, দিলকুশা ক্লাব ও আরামবাগ ক্রীড়া সংঘে অভিযান চালায় পুলিশ। এসব ক্লাব থেকে ওয়াকিটকি, টাকা গণনার মেশিন, ক্যাসিনো বোর্ড, বিপুল পরিমাণ কার্ড, জুয়ার বোর্ড, মদ ও সিসা উদ্ধার করা হয়। নগদ এক লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের মনিপুরিপাড়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে আটক করা হয়। গুলশান লিংক রোডের ফু-ওয়াং ক্লাবে অভিযান চালায় র্যাব। সেখান থেকে দুই হাজার ২০০ বোতল বিদেশি মদ, ১০ হাজার ক্যান বিয়ার, আমদানি নিষিদ্ধ বিদেশি সিগারেট, নগদ সাত লাখ টাকা জব্দ করা হয়। ম্যানেজারসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার বনানীতে জঙ্গিবিরোধী মহড়া শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ক্যাসিনোর অভিযানকে নির্মোহভাবে দেখতে হবে। আমরা সব ক্যাসিনো বন্ধ করার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে নেমেছি। ‘ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান মুখ থুবড়ে পড়ার কোনো কারণ নেই। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।