মাঠ সংকট দূর ও জিমনেশিয়াম স্থাপনসহ বয়সভিত্তিক খেলাগুলো নিয়মিত করতে পারলে এ জেলা থেকে উঠে আসতে পারে অনেক বিশ্বমানের খেলোয়াড়
আসাদুজ্জামান: দ্য ফিজ খ্যাত বিস্ময় বালক কার্টার মাষ্টার মুস্তাফিজুর রহমান ও সৌম্য সরকারের বদৌলতে সাতক্ষীরার ক্রিকেটাঙ্গণে এখন বইছে তারুণ্যের জোয়ার। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে নিয়মিত অনুশীলনের জন্য মাঠের সংকট দূর ও জিমনেশিয়াম স্থাপনের পাশাপাশি বয়সভিত্তিক খেলাগুলো নিয়মিত আয়োজন করতে পারলে এ জেলা থেকে উঠে আসতে পারে আরও অনেক বিশ্বমানের খেলোয়াড়। সংশ্লিষ্টদের মতে, জাতীয় দলে মুস্তাফিজ ও সৌম্য সরকারের অনবদ্য পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল হয়েছে সাতক্ষীরার ক্রীড়াঙ্গন। এতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে ক্রিকেটপ্রেমী শিশু-কিশোর-তরুণেরা। অনুশীলনের জন্য আসছে মাঠে। আর এই তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে কাজ করছে সীমান্ত ক্রিকেট একাডেমি, সাতক্ষীরা ক্রিকেট একাডেমি, সুন্দরবন ক্রিকেট একাডেমি, শ্যামনগর ক্রিকেট একাডেমিসহ স্থানীয় ক্লাবগুলো। এসব একাডেমিতে বর্তমানে তিন শতাধিক খেলোয়াড় নিয়মিত অনুশীলন করছে। তবে, অনুশীলনের জন্য প্রয়োজনীয় মাঠ ও দক্ষ সংগঠকের অভাব এবং জিমনেশিয়াম, ইনডোর প্রাকটিস গ্রাউন্ডসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা না থাকায় আগ্রহ থাকলেও পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারছে না তারা। সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরায় মাঠ রয়েছে মাত্র তিনটি। এর মধ্যে সাতক্ষীরা ষ্টেডিয়াম ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজনে সারা বছর ব্যস্ত থাকে। তাই সেখানে অনুশীলনের সুযোগ খুবই কম। তবে, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ মাঠ অনুশীলন ও ক্রিকেটসহ অন্যান্য ইভেন্ট আয়োজনের উপযুক্ত হলেও সবসময় সেটি ব্যবহারের সুযোগ থাকে না। আর সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ অনুশীলনের জন্য ব্যবহার করা গেলেও সেখানে ইভেন্ট আয়োজনের সুযোগ নেই। এছাড়া দক্ষ সংগঠকের অভাবে কেবলমাত্র শ্যামনগর উপজেলা ছাড়া অন্য কোথাও ক্রিকেট চর্চার ক্ষেত্র তৈরি হয়নি। জিমনেশিয়াম না থাকায় ইনজুরি কাটিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে খেলোয়াড়দের জন্য। সাতক্ষীরা জেলা দলের ক্রিকেটার ইনামুল জানান, ক্রিকেটে ভাল করতে গেলে নিয়মিত প্রাকটিস করতে হয়। এখন অনেকেই প্রাকটিসের জন্য আসছে। কিন্তু প্রাকটিসের জন্য উপযুক্ত মাঠ না থাকার কারনে একইস্থানে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা হচ্ছে। এর ফলে কোনটিই ভাল হয় না। সাতক্ষীরা ক্রিকেট একাডেমির খেলোয়াড় তামিম জানান, সাতক্ষীরায় একটি জিমনেশিয়াম ও একটি ইনডোর প্রাকটিস গ্রাউন্ড স্থাপন খুবই জরুরী। জিমনেশিয়ামের অভাবে সাতক্ষীরার খেলোয়াড়দের প্রয়োজনীয় ফিটনেস তৈরি হচ্ছে না। আর বৃষ্টিসহ বৈরি আবহাওয়ার সময় অনুশীলনের জন্য ইনডোর প্রাকটিস গ্রাউন্ড দরকার। শ্যামনগরের ক্রীড়া সংগঠক ও শ্যামনগর ক্রিকেট একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সামিউল মনির জানান, সকলেই ক্রীড়া সংস্থার পদ চান। কেউ ক্রীড়ার উন্নয়নে কোন কাজ করতে চান না। তাই ক্রীড়ার উন্নয়নে সবার আগে দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, মাঠের অভাবে একই স্থানে ফুটবল, ক্রিকেটসহ অন্যান্য ইভেন্ট আয়োজন করা হচ্ছে। এতে ফুটবলের পরে ক্রিকেটের সিজনে মাঠ অপ্রস্তুত থাকায় অনেক সময় মাঠে গড়ায় না প্রথম বিভাগ ও দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লীগ। তার মতে, অনুশীলনের জন্য পর্যাপ্ত মাঠের, নিয়মিত বয়সভিত্তিক খেলা, প্রথম বিভাগ ও দ্বিতীয় বিভাগ লীগ আয়োজনসহ দক্ষ সংগঠক গড়ে তুলতে পারলে সাতক্ষীরায় ক্রিকেটাঙ্গনে বিপ্লব সৃষ্টি হবে। এসব আয়োজন শুধু জেলা শহরেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, উপজেলাগুলোতেও ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বিশ্বমানের ক্রিকেটার তৈরিতে সাতক্ষীরা জেলা আরও ভূমিকা রাখতে পারবে বলে জানালেন সাতক্ষীরা জেলা ক্রিকেট দলের বিসিবি নিয়োগকৃত কোচ মোফাচ্ছেনুল ইসলাম তপু। তিনি বলেন, সাতক্ষীরায় ক্রিকেটার তৈরির অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারবো।