সাতক্ষীরা

দীর্ঘ ৪৩ বছর শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন আড়ুয়াখালী পিএমডি মাদ্রাসা

By daily satkhira

October 02, 2019

জি.এম আবুল হোসাইন : সীমান্তবর্তী উপজেলার মধ্যে সাতক্ষীরা সদর অন্যতম। এলাকাবাসির স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে ও সমাজে শিক্ষার আলো ছড়ানোর লক্ষ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আড়ুয়াখালী পায়রাডাঙ্গা মুজিদিয়া দাখিল মাদ্রাসাটি জেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষার আলো জ্বালাতে আজো এ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মচারী ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। বর্তমানে নানাবিধ সমস্যা অতিক্রম করে চলছে শিশুদের লেখাপড়া। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১৯৭৬ সালে কুশখালী ইউনিয়নের আড়ুয়াখালী গ্রামের মরহুম তহিদুর রহমান, বাশারাত সরদার, ওবাইদুর রহমান, মাওলানা এবাদুল হক ও আল-আমিন সহ কিছু ব্যক্তি তাদের ১একর ৩৮ শতক দান করেন। জমি ও প্রয়োজনীয় আনুসংগিক কিছু জিনিস দিয়ে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকে প্রতিষ্ঠানটির অস্থায়ীভাবে টিন শেট ও মাটির ভবনে পাঠদান শুরু করা হয়। ১৯৮১ সালের ৩১ ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটি একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৮৫ সালে এটি এমপিও ভূক্ত হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় বিভিন্ন দিবস পালনসহ পাঠদানের পাশাপাশি মাদ্রাসার মাঠে খেলার ব্যবস্থা রয়েছে। ইতোমধ্যে মাদ্রাসা থেকে ইবতেদায়ী সমাপনী, জেডিসি ও দাখিল পরীক্ষায় সাফল্যতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে অনেক ছাত্রছাত্রী দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ণরত ও প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে কর্মরত আছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৩১৪জন শিক্ষার্থীর অধ্যয়নরত আছে। এছাড়া ১৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ৩জন কর্মচারী ছাত্রছাত্রীদের লেখা-পড়ায় গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষক মো. আইয়ুব হোসেন বলেন, এলাকার ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার মহান উদ্দেশ্য নিয়ে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুরু থেকেই শিক্ষক-শিক্ষিকা, ম্যানেজিং কমিটি ও স্থানীয় দাতাদের সাথে রয়েছে পারস্পারিক সহযোগীতা ও সহমর্মিতা। সকলের আন্তরিক প্রচেস্টায় এটি দিনের পর দিন শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা পাঠদানে খুবই আন্তরিক। যে কারণে পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা ভাল ফলাফল করছে। তিনি আরো বলেন, ২০১৬ সালের জুন মাসে সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে সকলকে সাথে নিয়ে মাদ্রাসাটির উন্নয়নে নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছি। আমরা সাতক্ষীরা সদর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে একাডেমিক ভবন লাভ করেছি। জাতীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় একটি সাইক্লোলন সেন্টারের বাজেট পাস হয়েছে। সীমানা প্রাচীর, মাঠে মাটি ভরাট, সাইকেল সেট নির্মাণ, নতুন রাস্তা তৈরি, টিনের চাল মেরামত সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডে শরিক হতে পেরেছি। এছাড়া এখানে একটি মসজিদ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী প্রজন্মের মঙ্গলের জন্য আমরা আমাদের এপ্রতিষ্ঠানটি আগলে রাখব। বর্তমান সরকারের সদ্বিচ্ছায় অচিরেই এটি আরো ব্যাপক পরিসরে উন্নয়ন হবে বলে আমার বিশ্বাস।

সদর উপজেলার প্রাচীনতম এপ্রতিষ্ঠানে বর্তমান ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩শত ১৪জন। মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে পড়ালেখার মান ভাল এবং রেজাল্টও আশানুরুপ। ২০১৯ সালের দাখিল পরীক্ষায় পাশের হার ছিল ১০০ শতাংশ। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারিন্টেনডেন্ট হিসেবে যোগদানের পর থেকে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক পরিবেশের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন মো. গোলাম সরোয়ার বাবু। তিনি শিক্ষকমন্ডলী, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, সকল সদস্য ও অভিভাবকদের সহযোগিতা নিয়ে প্রতিষ্ঠানের জন্য নিরলস কাজ করে চলেছেন। দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ মাদ্রাসাটিকে অসাধারণ ও মনোরম করে তুলেছে। তিনি আরো বলেন, প্রাক – প্রাথমিক থেকে দাখিল ১০ম শ্রেণি নিয়ে ক্লাশ পরিচালনা করা শিক্ষক স্বল্পতার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন নিয়মিত ক্লাশ পরিচালনা এবং ছুটির পর ৫ম ও ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে অতিরিক্ত ক্লাশ পরিচালনা করা হয়ে থাকে। ফলে শিক্ষকদের জন্য প্রতিষ্ঠান চলাকালে বিশ্রামের সুযোগ থাকেনা। তার পরে রয়েছে কক্ষ সংকট। ২টা অফিস সহ ১০টি শ্রেণি কক্ষ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানকে সমহিমায় এগিয়ে নিতে এবং লেখাপড়ার মান আরও উন্নত করতে ক্লাশ রুম সম্প্রসারণ, প্রয়োজনীয় শিক্ষক ব্যবস্থা, ও সংস্কার কাজ করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সংসদ সদস্য সহ জেলা শিক্ষা বিভাগের পাশাপাশি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় অভিভাবক ও সচেতন এলাকাবাসি।