বিদেষের খবর: বর্তমান বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে বেশি সফল বলে মন্তব্য করেছেন নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। তিনি মনে করেন এই উন্নতিতে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে বাংলাদেশের জাতিগত সহাবস্থান। আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত এই অর্থনীতিবিদ আমেরিকান ম্যাগাজিন দ্য নিউ ইয়র্কারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের কিছু নীতির কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, মোদি সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে ভারতের বহু-ধর্মীয় ও বহুনৃতাত্ত্বিক পরিচয় নষ্টের চেষ্টা করছে। ১৯৯৯ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘ভারত রত্ন’ পাওয়া অমর্ত্য সেন বলেন, বহু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন ভারতের চেয়ে অনেক বেশি সফল। গড় আয়ু, নারী স্বাক্ষরতার মতো ক্ষেত্রগুলোতে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে এগিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। অর্থনীতির এই অধ্যাপক বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশের জাতিগত সহাবস্থান অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে।
অমর্ত্য সেন বলেন, ভারতে যতক্ষণ এটা ইচ্ছাকৃতভাবে এটা নষ্ট করার চেষ্টা না হয়েছে তার আগে পর্যন্ত তাদের জন্যও এটা অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, আজকের ভারতে যে সংকীর্ণ হিন্দু চিন্তাধারা দৃশ্যমান হয়েছে বাংলাদেশে সেই ধরণের সংকীর্ণ মুসলমান চিন্তাধারা প্রতিফলিত হয়নি।
ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের বাবা ছিলেন বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পূর্বে ঢাকা থেকে ভারতে চলে যায় তাদের পরিবার। ১৯৪৬ সালে দাঙ্গা পরবর্তী পরিস্থিতিতে তারা দিল্লি চলে যান। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে গিয়ে সব দিক থেকে বিপুল প্রশংসা পেয়েছেন। আর এই সময়েই বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে নিজের মতামত সামনে আনলেন অমর্ত্য সেন।
ভারতের শীর্ষ স্থানীয় অর্থনীতি বিষয়ক সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনোমিক টাইমস বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের মূল্যায়নে বদল আনতে মোদি সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটির এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ইতিবাচক অগ্রগতি বজায় রাখতে ভারতীয় নেতৃত্বকে অবশ্যই জাতীয় নাগরিক তালিকার (এনআরসি) মতো চাপ প্রয়োগকারী প্রকল্প থেকে বিরত থাকতে হবে। এনআরসি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হাসিনাকে আশ্বস্ত করলেও এই প্রক্রিয়া সচল থাকলে তা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে চাপে ফেলবে’। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি খুবই ভালো করছে ফলে চাপ প্রয়োগের মূল ফ্যাক্টর অবৈধ অভিবাসীর এখন আর অস্তিত্ব নেই। ‘প্রকৃতপক্ষে ঢাকার সফলতা থেকে দিল্লির শিক্ষা নেওয়া উচিত এবং নিজেদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য সংস্কারে মনোযোগী হওয়া উচিত’, বলা হয়েছে ওই সম্পাদকীয়তে।