ফিচার

বুয়েটে আবুল হায়াতের আবেগঘন বক্তব্য (ভিডিও)

By Daily Satkhira

October 10, 2019

বিশেষ ডেস্ক: বুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে শিক্ষার্থী আবরার হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা আবুল হায়াত।

হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে ক্যাম্পাসে তিনি এক মানববন্ধনে অংশ নেন। এ সময় তিনি বক্তব্য রাখতে গিয়ে বুয়েট ভিসির তীব্র সমালোচনা করেন। বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার হল রুমের সামনে বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ওই মানববন্ধনের আয়োজন করে। বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের ছাত্র ছিলেন আবুল হায়াত। তিনি থাকতেন শেরে বাংলা হলে। যে হলে থাকতেন আবরার ফাহাদ। তার মৃত্যুতে শোকাহত আবুল হায়াতের মতো সাবেক শিক্ষার্থীরাও।

আবুল হায়াত বলেন, ‘আমরা যখন বুয়েটে পড়েছি তখন এখানকার পরিবেশ এমন ছিলো না। আমরা যখন আন্দোলন করতাম তখন ভিসি এসে আমাদের সামনে বসে থাকতেন। আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসতেন। কারণ তিনি আমাদেরকে নিজের সন্তানের মনে করতেন।’

‘আর আজকের ভিসি। আমার সন্তান মারা যাওয়ার খবর শুনে আমি যাবো না সেখানে। ভিসির সন্তান নয় ছাত্ররা। এর চেয়ে অবাক করার ঘটনাতো আর কিছু হতে পারে না।’

‘আপনারা বিশ্বাস করুন, আমার স্ত্রী হাইপারটেনশনের রোগী। কালকে থেকে প্রায় বিছানায় পড়ে আছেন। তিনি বলছেন, এই ছেলেটা তো আমাদেরও ছেলে হতে পারতো। এই ছেলেদের সাথে তুমি সেদিন অনুষ্ঠান করে আসলে না?’

‘হ্যাঁ! আমি দুঃখিত! এই গত ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা শেরে বাংলা হলে ৫০ বছর পূর্তি পূনর্মিলন অনুষ্ঠান করেছি। এবং আরো দুর্ভাগ্য আমার এই ছেলেগুলোকে আমি চিনি। গত বছর যখন হলফেস্ট হলো তখন এরা আমাকে ফোন করেছিল। যে হায়াত ভাই আপনি অবশ্যই আসবেন। আমরা পুরোনো ছাত্রদেরকে চাই। আমি এসেছিলাম। আরো অনেকে এসেছিলো।’

‘এর কিছুদিন পর আমরা ৫০ বছর পূর্তি করতে এসেছিলাম। সেসময় আমরা হলের প্রভোস্টকে বললাম আমাদেরকে সহায়তা করতে। আমরা বললাম, আমরা বর্তমান ছাত্র পরিষদকেও আমাদের অ্যালামনাই এসোসিয়েশনে যুক্ত করতে চাই। তিনি জানালেন, হলে কোনো ছাত্র পরিষদ নেই। আমি বললাম, তাহলে ছাত্রদের দেখাশোনা কে করে। তিনি বললেন, আছে কিছু ছাত্র যারা নিজেরা-নিজেরাই তা করে। আমি বললাম, আপনি কি হলে যান না। তিনি বললেন, না আমি ওপরের দিকে খুব একটা যাই না। কারণ আমাকে ওরা নানা রকম অপমানজনক ইঙ্গিতপুর্ণ কথা বলে। এই যে শিক্ষক ও ছাত্রদের মাঝে এমন দূরত্ব এবং প্রশাসনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা তো হওয়ার কথা ছিল না।’

‘এমনকি আমরা ভিসিকে আমাদের অনুষ্ঠানের জন্য একটি চিঠি দিয়ে দেড় মাস অপেক্ষা করেছি। এবং তিনি একটি বিশেষ অতিথি হয়ে আসবেন বলে কথা দিয়েও আসেননি। এখন একটা ভিসিকে আমরা কী বলতে পারি? তিনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান। আমাদের চোখের সামনে এখনো ড. রশিদ, ড. নাসের, শাহজাহান এইসব ব্যক্তিত্ব রয়েছে।’

‘একজন শিক্ষার্থী নির্যাতিত হলে আপনি আসলেন না। যে ছেলেগুলো এই নির্যাতন করেছে তাদের মানব হলেও তারা আর আজ দানবে পরিণত হয়েছে। আর এই যে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আজকে আন্দোলন শুরু করেছে এটা কোনো একদিনের কারণে নয়। এটা তাদের যে দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভুত ক্ষোভ তারই বহিঃপ্রকাশ। তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় তারা রুখে দাঁড়িয়েছে। কয়েকটি দাবি জানিয়েছে।’

‘তাদের আজ একটি দাবি হল এই অঙ্গনে রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। আমাদের সময়েও রাজনীতি ছিলো না বুয়েটে। তাই বলে কি আমরা জাতীয় স্বার্থে যুক্ত ছিলাম না। ১৯৬৬ সালে, আমার মনে আছে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় মিছিলটি হয়েছিলো বুয়েট থেকেই।’

‘আজকে ছাত্রদের যে দাবি আমি তার সঙ্গে আমি একমত আছি। আপনারাও আমার সঙ্গে একমত হবেন আশা করি। তবে ছাত্র রাজনীতি খারাপ আমি তা বলবো না। ছাত্র রাজনীতি করেই আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। কিন্তু যারা পেছন থেকে ছাত্র রাজনীতিকে অপব্যাবহার করে তাদের বিরুদ্ধে একশন নিতে হবে। প্রশাসনকে আগে ধুয়ে-মুছে সাফ করতে হবে। হারপিক বা এর চেয়েও কড়া কিছু থাকলে তাদেরকে পরিষ্কার করতে হবে।’

‘প্রয়োজন হলে ১০ বছর বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ রাখেন। এর মধ্যে যদি রাজনীতি করতে চাওয়া ছাত্ররা তাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে পারে তারপর তাদের জন্য রাজনীতি করার সুযোগ দেন।’

ভিডিও:

বুয়েটে এসে যা বললেন অভিনেতা আবুল হায়াত

Posted by MM RIFAT on Wednesday, 9 October 2019