জাতীয়

ভারতের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে জ্ঞানপাপীরা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে -প্রধানমন্ত্রী

By Daily Satkhira

October 12, 2019

দেশের খবর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারতের সঙ্গে করা সাম্প্রতিক চুক্তি নিয়ে ‘জ্ঞানপাপীরা’ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।

শনিবার ঢাকার ফার্মগেইটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহিলা শ্রমিক লীগের সম্মেলনে তিনি একথা বলার পাশাপাশি তার জবাব দিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সফরে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ত্রিপুরা রাজ্যের জন্য ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহার এবং এলপিজি রপ্তানির সুযোগ দেওয়া নিয়ে দেশে সমালোচনা চলছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মানুষের মাঝে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য জেনে-শুনে জ্ঞানপাপীরা কথা বলে যাচ্ছে।

ত্রিপুরা রাজ্যকে ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহার করতে দেওয়ার ব্যাখ্যাও নেতাকর্মীদের দেন তিনি।

“ভারতের একটা জায়গা সাবরং। সেখানে থাকা মানুষের পান করা পানির অভাব। এত দীর্ঘ নদীটা যার অধিকাংশ বর্ডার এলাকায়। সেখানকার নদী মানে নদীতে সমান অংশীদার। ভারত এবং বাংলাদেশের। সেখান থেকে তারা একটু খাবার পানি নেবে।

“সেইটা নিয়েই ‘নদী বেচে দিলাম’, ‘নদী বেচে দিলাম’ ইত্যাদি ইত্যাদি খুব আন্দোলন স্লোগান বক্তৃতা। একটা মানুষ যদি পান করার জন্য পানি চায়, ও তো দুশমন হলেও মানুষ দেয়। মাত্র ১.৮২ কিউসেক পানি নেবে তারা। সেটার জন্য এত কান্নাকাটি করার কী আছে?”

এলপিজি রপ্তানি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “চিৎকার করছে ‘গ্যাস বিক্রি’, ‘গ্যাস বিক্রি’। এলপিজি হচ্ছে সিলিন্ডার গ্যাস। সেটা আমাদের দেশের কিন্তু না। বিদেশ থেকে আমদানি করি। এখানে সিলিন্ডারে ভরা হয়। তারপরে সেটা সকল জায়গায় আমরা দিয়ে দিই, যাতে গ্যাসে সবাই রান্না করতে পারে। সেখান থেকে কিছু গ্যাস যাবে আমাদের ত্রিপুরায়।

“এটা তো আমরা আমদানি করে বোতলজাত করে রপ্তানি করছি। আরেকটা রপ্তানিপণ্য বাড়ছে। বাংলাদেশের যেসব ব্যবসায়ীরা (রপ্তানি) করবে, লাভবান তারাই হবে। আমাদের কোনো ক্ষতি হবে না।”

“এটা নিয়ে একটা চিৎকার এবং স্লোগান এবং অনেক কিছু হয়ে যাচ্ছে। কাজেই যাব কোথায়,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বিপরীতে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির কথাও বলেন তিনি।

“সেখান থেকে আমরা ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি। তাদের প্রাকৃতিক গ্যাসে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আমরা নিয়ে আসছি। বিনিময়ে আমরা এলপিজি তাদের দিচ্ছি। লাভ-লোকসান হিসাব করলে বাংলাদেশেরই লাভ বেশি “

ত্রিপুরাকে সহায়তা করার পেছনে ঐতিহাসিক কারণও দেখান শেখ হাসিনা।

“১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এ ত্রিপুরাবাসী আমাদের দেশের শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল, খাদ্য দিয়েছিল, বাসস্থান দিয়েছিল।”

বিরোধীদের কথার জবাব জনগণের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনারা যখন কথা বলবেন, অনেক সময় প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন। সংগঠন করতে গেলে অনেকেই বিরুদ্ধে কথা বলে। কথায় কথায় তারা বলে কি ভোট দিয়ে সরকার আসে নাই।

“জনগণের ভোটে যদি নির্বাচিত না হতাম.. আজকে যদি জনগণ আমাদের ভোট না দিত, তাহলে তো বিরোধী দল আন্দোলন করে আমাদের নামাতে পারত। এ পর্যন্ত তারা কিছুই তো করতে পারল না।”

১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “ভোটারবিহীন ভোট করেছিল। জনগণ ভোট দেন নাই। সারাদেশে সেনাবাহিনী নামিয়ে এবং সমস্ত এজেন্সি দিয়ে ফলাফল ঘোষণা করে তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী!

“সেই তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী কতদিন ক্ষমতায় ছিল? দেড় মাস। দুই মাসও থাকতে পারেনি। কেন পারে নাই। ভোট চুরি করেছিল বলে জনগণ টেনে নামিয়েছিল আন্দোলন করে।”

ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহারের চুক্তি নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “যারা এত কাঁদছেন, তাদের জিজ্ঞেস করি গঙ্গার পানি আনার কথা। খালেদা জিয়া দিল্লি গিয়ে ভুলে গেল। কেউ তো আনলো না। তিস্তায় ব্যারাক দিল ভারতকে শিক্ষা দেবে। এখন শিক্ষা দেওয়ার পরিবর্তে ভিক্ষা চাইতে হচ্ছে। এই নীতি ছিল এরশাদের।

“জিয়াউর রহমান হাঁটু গেঁড়ে বসে থাকত, তার ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতে। কোনো কথা বলতো না। যা কথা বলত, হুবহু তাই শুনে আসত।” শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা এনেছি। আমরা পানি চুক্তি করতে সক্ষম হয়েছি। স্থল সীমানা চুক্তি আমরা করেছি, সমুদ্রসীমায় আমাদের অধিকার আমরা রক্ষা করতে পেরেছি “