দেশের খবর: তিন তলা ডুপ্লেক্স বাড়ি। বাইরে দেখে একপলক দেখে সহজেই অনুমান করা যায় ভেতরের রাজকীয় বা শাহি সাজ। কেউ এখানে থাকেন না, সারা বছর থাকে ফাঁকা। শুধু বাড়িটির মালিক বছরে দু-একবার যখন গ্রামে আসেন, তখন বিলাসবহুল এ বাড়িতে ওঠেন। রাউজান পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুলতানপুর গ্রামে তার পৈতৃক বাড়ির প্রায় ৪০০ গজ পূর্বে এ বাড়িটি তিনি নির্মাণ করেন ২০১৪ সালে। এর দুই বছর আগে অর্থাৎ ২০১২ সালে তিনি আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার নাম ওমর ফারুক চৌধুরী। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনটির চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন তিনি। এক সময় তৈরি পোশাক কারখানা গড়ে তুলেছিলেন তিনি। তখন মোটা টাকা ব্যাংকের কাছ থেকে নিয়ে ফেরত দিতে না পারায় খেলাপি হয়েছিলেন। ফলে তার কারখানা ও জমি নিলামে তুলেছিল ব্যাংক। কারখানার সেই জমিতেই ২০১৪ সালে ওমর ফারুক চৌধুরী গড়ে তুলেছেন ছয় তলা একটি ভাড়াবাড়ি এবং নিজে থাকার জন্য তিন তলার ডুপ্লেক্স বাড়িটি। একই উঠানের দুুপাশে এ বাড়ি দুটি। ৫০ শতক জমিতে সীমানা প্রাচীরবেষ্টিত বাড়িটির অবস্থান। একই ওয়ার্ডে তার পুরনো পৈতৃক বাড়িটি এক তলা। সেখানে আত্মীয়রা থাকেন। এক বছর আগে সেটির সীমানা দেয়াল সংস্কার করা হয়েছে বলে বাড়ির লোকজন জানান। ওমর ফারুক চৌধুরীর বাবার নাম ডা. শামসুল হুদা চৌধুরী ওরফে লালমিয়া ডাক্তার। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ও অনুসন্ধানে জানা যায়, তার তিন স্ত্রীর মধ্যে দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রথম সন্তান ওমর ফারুক চৌধুরী। বাবা প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সিতিয়াপাড়ায় বসবাস করতেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্ত্রীকে রাখেন পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুলতানপুরে। এ পৈতৃক বাড়ি থেকে অন্তত ৪০০ গজ পশ্চিমে ৫০ শতক জায়গার একটি অংশে ১৯৮৮ সালে ওমর ফারুক চৌধুরী প্রতিষ্ঠা করেন রাও গার্মেন্টস। এক তলা ভবনে শুরু করা ওই গার্মেন্টসের ব্যবসায় তিনি সফল হননি। পরবর্র্তীতে তিনি কারখানাটি চট্টগ্রাম শহরের জুবিলি রোডে স্থানান্তর করেন। তবে গ্রামের ওই জমিটি ব্যাংকের কাছেই বন্ধক থেকে যায়। সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে সোনালী ব্যাংকের চট্টগ্রামের কে সি দে রোড শাখা থেকে ওমর ফারুক চৌধুরী ও তার স্ত্রী শেখ সুলতানার মালিকানায় গড়া প্রতিষ্ঠান মেসার্স রাও নিট অ্যাপারেলস ও মেসার্স রাও গার্মেন্টসের নামে ১১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ওই টাকা সুদে-আসলে সাড়ে ৪৪ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। টাকা আদায় না করতে পেরে অর্থঋণ আদালতে যায় ব্যাংক। ব্যাংক ঋণের দায়ে নগরের একটি বাড়ি এবং রাউজানের সুলতানপুর গ্রামের জমি ও এক তলা ঘরটি নিলামে ওঠার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে। নিলামে তোলার দিনক্ষণও ধার্য করেছিলেন চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত। কিন্তু ওমর ফারুক চৌধুরী উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ এনে তা ঠেকান। সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১২ সালের পর দ্রুতই ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করেন ওমর ফারুক চৌধুরী। গার্মেন্টস ব্যবসা শুরুর আগে ওমর ফারুক চৌধুরী চট্টগ্রাম জেলা বিড়ি শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সে সময় তিনি মিয়ানমার থেকে টেন্ডু পাতা আমদানির ব্যবসা করতেন। টেন্ডু পাতা দেখতে অনেকটা তামাক পাতার মতো। এটি তামাকের বিকল্প হিসেবে একসময় নিম্নবিত্ত মানুষ গ্রহণ করত। সেটি সত্তরের দশকে। পরবর্তী সময়ে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় এলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জাতীয় যুব সংহতির রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদের পতন হলে ১৯৯২ সালে তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হন। ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ছিলেন। সর্বশেষ তিনি সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন বলে জানান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম। গতকাল বুধবার রাউজানের সুলতানপুর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছয় তলা ভবনের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়ারা রয়েছেন। আর তিন তলার ডুপ্লেক্স বাড়িটি যথারীতি বন্ধ। সেখানে কোনো দারোয়ান বা পরিচারককে দেখা যায়নি। তবে উঠানে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার সময় এক মহিলা জানতে চান ছবি তোলার কারণ। তখন তার পরিচয় জানতে চাওয়া হলে তিনি নিরুত্তর থেকে সরে পড়েন।