খোলা মত

কলকাতায় অভিজিৎ সৌরভকে নিয়ে উচ্ছ্বাস, এনআরসিতে উদ্বেগ -সুভাষ চৌধুরী

By Daily Satkhira

October 24, 2019

মায়ের উচ্ছ্বাসের সাথে একাকার হয়ে গেছে গোটা পশ্চিমবঙ্গ, বলা চলে ভারত। অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। আর একই সাথে সৌরভ গাঙ্গুলির ভারতীয় ক্রিকেট সাম্রাজ্যের মসনদের উপবেশন ক্রিকেট বিশ্বকে করে তুলেছে উচ্ছ্বসিত। ভারতের এই দুই কৃতী সন্তানকে ঘিরে তারা শাঁখ বাজিয়ে পূজা দিচ্ছেন। তাদের কৃতিত্বে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছেন কলকাতার মানুষ। সোমবার চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যেয়ে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি আমি। যেখানে গেছি সেখানে একই কথা। সাহিত্যে নোবেল জয় করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর্ত মানবতার সেবায় নোবেল জয় করেছিলেন মাদার তেরিসা। আর অর্থনীতিতে অমর্ত্য সেন লাভ করেছিলেন নোবেল পুরস্কার। সর্বশেষ অমর্ত্য সেনের এক সময়ের ছাত্র অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় অর্জন করলেন অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার। তিন ভারতীয়র নোবেল পুরস্কার জয়ের পর এবার কোন ভারতীয় নোবেল পাবেন এখন সেই আলোচনাই শুনেছি মুখে মুখে। নোবেল জয়ের পর দেশের মাটিতে পা ফেলেই অভিজিৎ দেশের অর্থনীতি ‘দুর্বল জমি’র ওপর দাঁড়িয়ে বলে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছিলেন। খুব তাড়াতাড়ি অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে বলে সরকারের দাবি মানতে চাননি তিনি। এর আগে নোট বাতিল নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কর্পোরেট কর ছাঁটাইয়ের নীতিকেও সমর্থন করেন নি অভিজিৎ। এমনকি ভোটের আগে ভারতে বেকারত্ব সম্পর্কে পরিসংখ্যান ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার বিষয়ে যে কয়েকজন অর্থনীতিবিদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছিলেন অভিজিৎ তাদেরও একজন। নোবেল জয়ের কৃতিত্ব নিয়ে দেশের মাটিতে পা ফেলেই ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’,‘বিরুদ্ধ মত প্রকাশের অধিকার’ নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। আর একারণেই সম্ভবতঃ গত ২২ অক্টোবর দিল্লীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে সাক্ষাতের পর মোদী বলেছেন ‘ মানুষের ক্ষমতায়নের ব্যাপারে তার আগ্রহ খুব স্পষ্ট। ওর সাফল্যে ভারত গর্বিত’। নোবেল জয়ের খবর পেয়ে অভিজিতের সপ্তপর্ণীতে তার ফ্লাটে গিয়ে তার মাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এসেছেন পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। অভিজিৎ তার মায়ের কাছে পৌঁছাতেই বাড়িতে বাড়িতে বেজে উঠলো শাঁখ। জ্বলে উঠলো মঙ্গল প্রদীপ। মঙ্গলের প্রতীক রসগোল্লার পায়েস দিয়ে ছেলেকে বরণ করে নিলেন মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে এক আবেগঘন অনুভূতি। নোবেলজয়ী এই বীরকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ডিএসসি উপাধি দেবে । কলকাতায় মায়ের সাথে বুধবার দিনটি কাটিয়ে মধ্যরাতে বস্টন চলে গেছেন অভিজিৎ। তবে তাকে সংবর্ধনা দেওয়ার যে আতিশয্য তার প্রকাশ ঘটতে পারেনি এবার । কারণ তার হাতে সময় ছিল খুবই কম। বলে গেলেন জানুয়ারিতে ফের দেখা হবে। কলকাতার পত্রপত্রিকাগুলি অভিজিতের নোবেল জয় এবং তার জীবনের সব দিক নিয়ে আলোচনা করেছে। তাকে সম্মান জানিয়েছে বাঙ্গালি। অভিজিতের সাথে সাথে ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গ মেতে উঠেছে সৌরভ গাঙ্গুলিকে নিয়ে। ক্রিকেটার সৌরভ থেকে অধিনায়ক সৌরভ। এবার প্রেসিডেন্ট সৌরভের নতুন ইনিংস শুরু। বৃহস্পতিবার তিনি ভারতীয় ক্রিকেট সাম্রারাজ্যের মসনদে বসেছেন। ৩৯তম সভাপতি তিনি। এ খবর ভারতীয়দের কাছে অমৃতসম। ক্রিকেটপ্রেমীরা ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন দিন দেখবার স্বপ্ন দেখছে। সৌরভ গাঙ্গুলির ওপর তাদের ভরসা সবচেয়ে বেশি। সৌরভ দেশের জন্য সেরাটাই উপহার দেবেন বলে তাদের বিশ্বস। ক্রিকেট বিশ্বকে তিনি নাড়া দেবেন যেমনটি দিয়েছেন একজন ক্রিকেটার হিসাবে ও একজন অধিনায়ক হিসাবে। কলকাতা যেনো মেতে উঠেছে অভিজিৎ আর সৌরভ গাঙ্গুলিকে নিয়ে। তাদের উচ্ছ্বাসের শেষ নেই । আনন্দের শেষ নেই। তাদের কৃতিত্বে গর্বিত কলকাতাবাসী। তবে পশ্চিম বাংলার মানুষ উদ্বিগ্ন নাগরিকপঞ্জি নিয়ে। সেদেশের স্বারষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষনা দিয়ে গেছেন পশ্চিম বাংলায় এনআরসি হবেই। আর মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হবে না।শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও ঠেকানো হবে এনআরসি। কাউকে দেশ ছাড়তে হবে না বলে তিনি আশ্বস্থ করেছেন। পশ্চিমবাংলার মানুষ এই এনআরসি নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নতুন করে ফের ঘোষনা দিয়ে বলেছেন নাগরিক পঞ্জি তো নয়ই,এই রাজ্যে ডিটেনশন ক্যাম্প করতেও দেওয়া হবেনা। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের এনআরসি প্রতিরোধ মনোভাবও লক্ষ্য করেছি। তবে কেবল ভবিষ্যতই বলতে পারে এনআরসির পরিণতি কী হবে পশ্চিমবাংলায় । পাদটীকা। ২৩ অক্টোবর বুধবার। সময় বেলা ১১ টা। কলকাতার শিয়ালদহ রেল স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় হাজার হাজার যাত্রীর মধ্যে আমিও একজন । এরই মধ্যে একদল উড়ন্ত কবুতরের একটি প্রচন্ড ভিড়ের মধ্যে উড়তে গিয়ে মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হলো লোহার রেলিংয়ে। মুহুর্তেই স্টেশনের মেঝেতে পড়ে ছটফট করতে থাকলো কবুতরটি। তাকে দেখে ছুটে এলো অপেক্ষমান যাত্রীরাও। তারা দ্রুত কবুতরটিকে উদ্ধার করে পািন খাইয়ে আদর দিয়ে সেবা শুশ্রষা করলেন । খবরের কাগজ দিয়ে তাকে বাতাস করলেন। বেশ কিছুক্ষণ পর কবুতরটি একটু সতেজ হয়ে উঠলো। এবার তাকে নিরাপদ জায়গায় বসিয়ে রাখা হলো। কয়েক মিনিট পর শরীরে পূর্বের শক্তি ফিরে পেয়ে কবুতরটি দিব্যি উড্ডয়ন করলো। সেবা দিয়ে কবুতরটিকে বাঁচিয়ে রাখার এই চেষ্টা একটি অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত। — সুভাষ চৌধুরী, সাংবাদিক, এনটিভি ও দৈনিক যুগান্তর।